বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাপ থেকে পবিত্র হওয়ার উপায়

প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩

পাপ থেকে পবিত্র হওয়ার উপায়

মানুষের মধ্যে সৎকাজ করার প্রবণতা যেমন আছে তেমন আছে অসৎ কাজ করার প্রবণতা। সৃষ্টিগতভাবেই মানুষের স্বভাবের মধ্যে ভালো কাজ করার আগ্রহ গচ্ছিত রাখা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে তাদের স্বভাব-প্রকৃতির মধ্যে মন্দ কাজ করার প্রেরণাও নিহিত রয়েছে। তাই মানুষের মাধ্যমে গুনাহ, ভুল-ভ্রান্তি ও অন্যায়-অপরাধ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। পৃথিবীতে এমন কেনো ব্যক্তি নেই যার ভুল হয় না। যার দ্বারা অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হয় না। প্রতিটি মানুষই ভুল করে। তবে ভুল করার পর অনুশোচনা হওয়া দরকার। পাপকর্মের ওপর পরিতাপদগ্ধ ও অনুশোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বর্জন করা এবং ভবিষ্যতে সেই পাপে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্পে আবদ্ধ হওয়াকে বলা হয় তওবা। বান্দার কাজে আল্লাহর আনন্দ কোনো মানুষ যদি পাপের সাগরে নিমজ্জিত থাকে, কলুষ-কালিমায় লিপ্ত থাকে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। পক্ষান্তরে যখন কোনো ব্যক্তি পাপকর্ম বর্জন করে আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে আসে, মহান আল্লাহকে স্মরণ করে তার প্রতি মনোযোগী হয় ও কৃত অপকর্মের ব্যাপারে অনুশোচিত হয় এবং তওবা করে তখন আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ও আনন্দিত হন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, মনে করো কোনো এক ব্যক্তি সফরের কোনো এক স্থানে অবতরণ করল, সেখানে প্রাণেরও ভয় ছিল। তার সঙ্গে তার সফরের বাহন ছিল। যার ওপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল এবং জেগে দেখল তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ যা চাইলেন তা হলো। তখন সে বলল, আমি যে স্থানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর জেগে দেখল যে, তার বাহনটি তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে ব্যক্তি যতটা খুশি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার তওবা করার কারণে এর চেয়েও অধিক খুশি হন। (বুখারি : ৬৩০৮) নিষ্পাপ সমতুল্য ব্যক্তি আদম সন্তানের মধ্যে এমন কোনো মানুষ নেই যার গুনাহ নেই। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় প্রাত্যহিক জীবনে গুনাহ হয়েই যায়। জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হতেই থাকে। তবে ভুলের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে তারাই ভালো মানুষ যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে। আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তওবা করে। হাদিস শরিফে বর্ণনায় ভুলের শিকার ব্যক্তিদের মধ্য থেকে যারা তওবা করে তাদের শ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তওবাকারীরা উত্তম’ (ইবনে মাজা : ৪২৫১)। অন্য হাদিসে গুনাহগার তওবাকারী ব্যক্তিকে নিষ্পাপ মানুষের সমান্তরালে দাঁড় করানো হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তিতুল্য।’ (ইবনে মাজা : ৪২৫০) পাপ থেকে ফিরে আসার সময় মানুষের পাপ থেকে ফিরে আসার জন্য আল্লাহ তায়ালার দরজা সব সময় খোলা। তওবার কোনো সময়সীমা নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেকোনো মুহূর্তে যদি খাঁটি অন্তরে আল্লাহ তায়ালার দরবারে তওবা করা হয়, কায়মনোবাক্যে ক্ষমা চাওয়া হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা ও তার তওবা কবুল করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তবে মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি তওবা করে, তাহলে তার তওবা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিস শরিফে মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর তওবা কবুল না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, রুহ কণ্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবা কবুল করেন। (তিরমিজি : ৩৫৩৭) পাপমুক্ত জীবন লাভে করণীয় তাওবার শর্ত হলো নিরেট আল্লাহ তায়ালাকে রাজি-খুশি করার জন্য, তাঁর নৈকট্য হাসিল করার জন্য, তাঁর ইবাদত-বন্দেগির তওফিক পাওয়ার জন্য ও তাঁর ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার জন্য তওবা করা। ইতিপূর্বে যে পাপে জড়িত ছিল সেই পাপ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে ফিরে আসার খাঁটি নিয়ত করা। যে অন্যায় ও অপরাধ তার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে তার প্রতি লজ্জিত ও অনুশোচিত হওয়া এবং মনে মনে আকাক্সক্ষা করা, হায়! যদি আমি এই গুনাহ না করতাম। আমার দ্বারা এমন অপরাধ সংঘটিত না হতো। অপরাধী ব্যক্তি যে অপরাধ পূর্বে করত তা বর্জন করার দৃঢ় সংকল্প করা এবং ভবিষ্যতে এই অন্যায় কাজে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। কারও সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকলে বা কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে আত্মসাৎকৃত সম্পদ সংশ্লিষ্ট মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া এবং কষ্টদানকৃত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুলুম করেছে সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয়, তার ভাইয়ের পক্ষে তার কাছ থেকে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোনো দিনার বা দিরহাম পাওয়া যাবে না। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে, তা হলে তার মাজলুম ভাইয়ের পাপ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বুখারি : ৬৫৩৪) তওবা করায় ইহলৌকিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মঙ্গল নিহিত রয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি তওবা করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ইহকালে ক্ষমা করে দেবেন এবং পরকালে নাজাত দান করবেন। তওবাকারী ব্যক্তিদের সফল বলে আখ্যায়িত করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো’ (সুরা নুর : ৩১)। তাই আসুন, তওবা করে নিজেদের ইহ ও পারলৌকিক জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলি। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন। লেখক: শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা
Link copied!