মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পিডির দেড় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্তে দুদক

প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, অক্টোবর ১৯, ২০২১

পিডির দেড় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্তে দুদক

ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে থাকা তিনটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী) মো. আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও প্রকল্পে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার অনিয়মের মধ্যে পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পে নিম্নমানের পাইপ সরবরাহ, রামপুরা ও কমলাপুর ওয়াসার পাম্প বসানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম, ওয়াসার একটি প্রকল্পে মোটা অঙ্কের ঘুষ গ্রহণ, ডিডব্লিউএসএনআইপি প্রকল্পে বিধিবহির্ভূতভাবে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া, গুলশান-বারিধারা প্রকল্পে কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ এবং কর্মচারী বহুমুখী সমিতির টাকা আত্মসাতের মতো ঘটনায় বিস্তর অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবরকে এ বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। দুদকের কর্মকর্তারা জানান, একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঢাকা ওয়াসার পদ্মা জশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্পের জন্য দরপত্র ও ভেটিং (দর কষাকষি) ছাড়াই নিম্নমানের পাইপ আমদানির মাধ্যমে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান। একই প্রকল্পে নদীর তলদেশে পাইপ সুরক্ষার কেসিং পাইপের জন্য বরাদ্দ করা ১০০ কোটি টাকা ও রামপুরা-কমলাপুর পানির পাম্প প্রকল্পের ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন এ প্রকৌশলী। এছাড়াও রাজধানীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রামপুরা ও কমলাপুরে দুটি পানির পাম্প স্থাপনের কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করেন প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান। দুদকে দাখিল করা অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০১৭ সালে ‘রিহ্যাবিলিটিটেশন অব ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ (ডিডব্লিউএসএনআইপি) প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করার পর ১০টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। পরে ১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি মূল্যায়নে চারটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদনের পর আর্থিক প্রস্তাবে দেখা যায়, হুবাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (এইচআইসিসি) ২৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, চায়না অ্যান্ড সিএসএডিআই যৌথভাবে ২৯৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা, সিসিএসইবি ও বাংলাদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে ৩৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও চায়না ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ৩৬৪ কোটি ৭০ টাকার প্রস্তাব দেয়। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় এইচআইসিসি। এইচআইসিসি ২৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা দর দিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। আর সিসিএসইবি প্রতিষ্ঠানটি ৩৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা দর দিয়ে হয় তৃতীয়। কিন্তু ওয়াসার সংশ্লিষ্ট এ প্রকৌশলী ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে কাজ পেয়েছে সিসিএসইবি নামের প্রতিষ্ঠানটি। আর এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ফলে সরকারের কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব মূলত কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে আদায় হয়ে আসছে। সেখানে প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে সমিতির প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এ বিষয়ে গত শনিবার ওয়াসার কর্মচারী সমিতির নেতারা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তর অভিযোগ করেন। এ সময় বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম ও সম্পাদক মো. শাহাবউদ্দিন সরকার উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর থেকে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী সমিতির ২০১৮-২০ সময়কালের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক পিপিআই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা হতে রাজস্ব আদায়ের ঠিকাদারি বিলবাবদ সমিতি ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকাসহ ১৩৩ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৬৩ টাকা পেয়েছে। এ অর্থ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হিসাব বিবরণীতে মাত্র ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা হিসাবভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই। দুদকের আমলে নেওয়া অভিযোগে বলা হয়, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণরোধে ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছিল ওয়াসা। কিন্তু এই ৫০ কোটি টাকা কাগজপত্রে খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনো সুফল মেলেনি। এ বিষয়ে দশম জাতীয় সংসদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি টাকা ব্যয় হওয়ার পরও কেন সুফল হয়নিÑ তা জানতে চায়। পরবর্তীকালে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তদন্ত করে সরকারের এ আর্থিক ক্ষতির জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার জন্য ওয়াসাকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয়। এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামানের ব্যক্তিগত মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
Link copied!