বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

পি কে’র বিরুদ্ধে মামলায় আসছে পশ্চিমবঙ্গের রাঘব বোয়ালদের নাম

প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, মে ১৬, ২০২২

পি কে’র বিরুদ্ধে মামলায় আসছে পশ্চিমবঙ্গের রাঘব বোয়ালদের নাম

প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপন করা প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) মামলায় একে একে নাম জড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাঘব বোয়ালদের। ভারতের অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, পি কে হালদারকে ভারতে আত্মগোপন করতে সহায়তা এবং মুদ্রাপাচারে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নামও উঠে এসেছে ইডির প্রাথমিক তদন্তে। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এবং তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার মাধ্যমেই বাংলাদেশ সীমান্তের এত কাছে গা ঢাকা দিয়েছিলেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। রোববার সকালে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কলকাতার নগর দায়রা আদালত। এর ফলে তাকে রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে ইডি। সূত্র জানায়, এ সপ্তাহের মধ্যেই ইডির পাশাপাশি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও এসএফআইও-র (সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস) এখতিয়ারে যেতে পারে পি কে হালদারের মামলা। এর আগে শনিবার পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন পি কে। ওইদিন পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের সন্ধানে ভারতের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ইডি। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের অনুরোধে ভারতে এ অভিযান চালানো হয়। গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের অন্তত নয়টি স্থানে একযোগে অভিযান চালায় ইডি। এতে কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ পি কের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি জব্দ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার মৃধা। পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সুকুমার মৃধাকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের দুই মামলায় আসামি করা হয়। এরপর দুদক তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ভারতের ইডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সুকুমারকে তারা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। পি কে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, দীর্ঘদিন ধরে এই দুইজনের যোগসাজশে এনআরবির বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। পি কে হালদার ভারতে জালিয়াতি করে নিজের নাম পরিবর্তন করে নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস করছিলেন। তার অন্যান্য সহযোগীদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়েছে। ইডির একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পি কে হালদার সে দেশে শিবশঙ্কর হালদার নাম ধারণ করেছিলেন। এই নামে তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড করে নেন। এমনকি ভারতীয় ভোটার কার্ড, প্যান ও আধার কার্ডের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিচয় জালিয়াতি করে তিনি নিজেকে শিবশঙ্কর হালদার বানিয়ে নেন। এছাড়া তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে জাহির করছিলেন। গতকাল শনিবার ইডি আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে চারজন বাংলাদেশি। তারা হলেন- প্রীতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী (নাম জানা যায়নি), উত্তম মিত্র ও স্বপন মিত্র। এ ছাড়া প্রণব হালদার নামে এক ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করে ইডি। প্রণব সেখানে সরকারি চাকরি করেন। পরে সঞ্জীব হালদার নামে একজনকে আটক করার কথা জানায় ইডি। সঞ্জীব বাংলাদেশ গ্রেপ্তার সুকুমার মৃধার জামাই। প্রসঙ্গত, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনকালে এই অর্থপাচার করেছিলেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)।
Link copied!