মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামস কোর্ট হাজতে

প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, মার্চ ৩০, ২০২৩

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামস কোর্ট হাজতে

সিআইডি পরিচয়ে সাভারের বাসা থেকে ‘তুলে নেওয়ার’ এক দিন পর প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, আপাতত তাকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়েছে। আইনজীবী মশিউর মালেকের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা, রিমান্ডের কোনো আবেদন করা হয়নি। শামসের পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেছেন, তারা জামিন আবেদন প্রস্তুত করেছেন, আদালত বসলেই শুনানি হবে। স্বাধীনতা দিবসের এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে বুধবার রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলা করেন আইনজীবী মশিউর মালেক। সেখানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে ‘হুকুমের আসামি’ এবং নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই প্রতিবেদন ‘লাইক, শেয়ার, কমেন্টকারী আরও অজ্ঞাতদের’ আসামি করেছেন মামলার বাদী। ওই প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে এর আগে তেজগাঁও থানায় আরেকটি মামলা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া। সেই মামলায় কেবল শামসকেই আসামি করা হয়। তেজগাঁও থানার সেই মামলার খবর প্রকাশ্যে আসার আগেই বুধবার ভোর রাতে শামসকে তার সাভারের বাসা থেকে ‘সিআইডি পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যেহেতু মামলা হয়েছে, পুলিশ আটক করতেও পারে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে শামসকে আদালতে নেওয়ার খবর আসে। ঘটনার পূর্বাপর শামস প্রথম আলোর সাভারে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক। তিনি থাকতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া আমবাগান এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পাস করেন তিনি। তার ভাই ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম আলোয় গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত যে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা চলছে, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামস। ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়। পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন পর বুধবার সকালে খবর আসে, শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। সেই বাড়ির বাড়িওয়ালা, প্রত্যক্ষদর্শী একজন স্থানীয় সাংবাদিক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও পুলিশ কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। দুপুরের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শামসের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে। তখন জানা যায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে একজন যুবলীগ নেতা শামসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর বুধবার গভীর রাতে আরেকটি মামলা হওয়ার খবর জানা যায় বৃহস্পতিবার সকালে। মামলা খবর শুনে শামসের মা করিমন নেসা বলছিলেন, ‘ওরে ধইরা নিল কেন, আমার ছেলেরে বললে তো নিজেই যাইতো, এমনি কইরা ওরে তুলে নিল ক্যান?’ সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসও (সিপিজে) শামসকে দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
Link copied!