শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীদের সম্পদ লুট করাই তাদের মিশন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮ পিএম, অক্টোবর ১৭, ২০২১

প্রবাসীদের সম্পদ লুট করাই তাদের মিশন

কখনো সখ্যতা গড়ে। কখনো ছিনতাইকারী এমনকি ডাকাতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় চক্রটি। তাদের বিচরণ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে। সেখানেই বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার ধান্দায় থাকে অপরাধী চক্রটি। লুট করা হয় সঙ্গে থাকা সব মালামাল। রাজধানীর বিমানবন্দর কেন্দ্রীক সম্প্রতি সংঘঠিত দুটি ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায় ডিএমপির গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ। গ্রেফতার করা হয় চক্রের তিন সদস্যকে। ​তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরা বিভাগের একটি দল অভিযান চালিয়ে এই চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাসুদুল হক, মো. আমির হোসেন হাওলাদার ও মো. শামীম। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট, দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র, দুটি এটিএম কার্ড, একটি আইপ্যাড, একটি ওয়ার্ক পারমিট, একটি বিএমইটি কার্ড, একটি অফিস আইডি, একটি চাকু ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর মো. লিটন সরকার নামে এক প্রবাসী মিসর থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বাংলাদেশে আসেন। তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে গোলচত্ত্বরে ফুটওভার ব্রিজের নিচে এসে বাসার উদ্দেশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন লোক ধারালো চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ নিয়ে চলে যায়। হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে থাকা তার একটি পাসপোর্ট, মিসরের ভিসা, বিমানের টিকিট, আট আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, দু’টি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ডসহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরবর্তীতে ডাকাত দলের সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে ঘটনার বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু না জানানোর জন্য ভয়-ভীতি দেখায়। এই ঘটনায় গত ১৫ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। অন্যদিকে ৫ অক্টোবর ব্রিটেন থেকে ঢাকায় নামেন ওমর শরিফ। নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে অপহৃত হন তিনি। তাকে ঢাকার বাইরে নামিয়ে দেওয়া হলেও তার পাসপার্টসহ প্রয়োজনীয় সব মালামাল লুট করা হয়। পৃথক ঘটনায় মামলা হলে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ। গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত চক্রের ওই তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। প্রবাসীরা ঠিক কী কী কারণে ছিনতাইকারী চক্রের টার্গেট হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বিমানবন্দর কেন্দ্রিক তারা গত এক বছরেই অর্ধশতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া যায়। চক্রের মূলহোতা মাসুদুলের বিরুদ্ধেই রয়েছে সাতটি মামলা। হাফিজ আক্তার বলেন, প্রবাসীদের টার্গেট করে চক্রটি ৫০ থেকে ৬০টি ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণের পর মালামাল লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এ সংক্রান্ত মাত্র হয়েছে সাতটি। দ্রুত বিদেশ ফিরে যাওয়ার তাড়া থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীরা ঝামেলা মনে করে মামলা করছেন না। আবার ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য বাংলাদেশে ঘুরতে আসা বিদেশিরাও দ্রুত পাসপোর্ট তুলে ফিরে যাচ্ছেন যে কারণে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা কম হচ্ছে। আর এই সুযোগটাই নিয়েই সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র বিমানবন্দর কেন্দ্রীক প্রবাসী ও বিদেশিদের টার্গেট করে ছিনতাই ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা আসছেন। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করে এসব করা হচ্ছে। চক্রের সদস্যরা কাদের গাড়ি ভাড়া নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হবে।
Link copied!