বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তির বিড়ম্বনায় সীতাকুণ্ডের হাজার হাজার মানুষ

প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, নভেম্বর ৩, ২০২১

প্রযুক্তির বিড়ম্বনায় সীতাকুণ্ডের হাজার হাজার মানুষ

তসলিম উদ্দীন শনিবার সকালে ঘরের বারান্দায় বসেছিলেন। তার স্কুলপড়ুয়া বড় মেয়ে এসে বলল, জন্মসনদ নিয়ে যেতে না পারায় স্কুলের টিচার তাকে বকাবকি করেছেন। সে জন্মসনদ ছাড়া স্কুলে যাবে না। তার মেয়ে স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। প্রতিদিনের মতো সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে এসেছে জন্মসনদের জন্য। বিকালে এসব বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় দুসপ্তাহ আগে আবেদন করেছি; কিন্তু এখনও জন্মসনদটা পাইনি। এভাবে এক সপ্তাহ ধরে প্রত্যেকদিন আসছি; কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এদিকে মেয়ের স্কুল থেকে চাপাচাপি করছে অথচ আমি নিরুপায়। তসলিম উদ্দীনের মতো এভাবে অনেকেই দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানাভাবে চেষ্টা করেও জন্মনিবন্ধন করাতে পারছে না অনেক মানুষ। হাজার হাজার মানুষ সীতাকু-ের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ধরনা দিচ্ছে। কিন্তু দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ, সার্ভার ডাউনসহ প্রযুক্তির বিড়ম্বনায় দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও মিলছে না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্মনিবন্ধন সনদপত্র। আবার সন্তানের জন্মনিবন্ধন করার আগে মা-বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সৃষ্টি করেছে নতুন সঙ্কট। একজন শিশু বা কিশোরের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে তিনটি জন্মনিবন্ধন সনদপত্র তৈরি করতে হচ্ছে। একটি কম্পিউটার এবং একজন অপারেটরকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চাপ সামলাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন ছাড়া ন্যাশনাল আইডি কার্ড করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে টিকা প্রদানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনকালে সামান্য ভুল হলেও তা ঠিক করতে ছুটতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সবকিছু মিলে জন্মনিবন্ধন নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে লাখো মানুষ। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জন্মনিবন্ধন ব্যাপারটি সহজ করার সুযোগ থাকলেও তা না করে জটিল করা হচ্ছে। এত বেশি কাগজপত্র চাওয়া হয় যে, ওগুলো জোগাড় করতে গিয়ে মা-বাবার অনেক কষ্ট হয়। অনলাইন জন্মনিবন্ধনের নতুন নিয়মে শূন্য থেকে ৪৫ দিন বয়সি শিশুর জন্মনিবন্ধনের জন্য টিকার কার্ড, মা-বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, বাসার হোল্ডিং নম্বর ও চৌকিদারি ট্যাক্সের রসিদের হাল সনদ, আবেদনকারী/অভিভাবকের মোবাইল নম্বর, ফরমের সঙ্গে এক কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হয়। অন্যদিকে যাদের মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা ভুল রয়েছে তাদের ভোগান্তি আরও বেশি। তাদের ছুটতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন অফিসে। নির্বাচন কমিশনে নতুন এনআইডি করা কিংবা সংশোধন করার আগেই করতে হচ্ছে জন্মনিবন্ধন। আবারও ছুটতে হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা কাউন্সিলর কার্যালয়ে। সেখানে দীর্ঘ জটলার মুখে পড়তে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধনকালে যদি কোনো তথ্য ভুল হয় তা হলে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। এসব ভুল সংশোধন করতে যেতে হচ্ছে জেলা প্রশাসক বা ইউএনও কার্যালয়ে। ইউপি চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জন্মনিবন্ধন সনদ দিলেও তিনি তা সংশোধন করতে পারছেন না। সংশোধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক এবং জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে ইউএনওকে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংশোধনের অনুমোদন নিয়ে যেতে হচ্ছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা ইউপিতে। ওখানে গিয়ে সংশোধিত তথ্য দিয়ে সংগ্রহ করতে হচ্ছে জন্মনিবন্ধন। ভাটিয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন বলেন, প্রতিদিন মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন সনদপত্র পাওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। অথচ এই সনদপত্র ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। একজন অপারেটর দিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করেও ওয়ার্ডবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হচ্ছে না। জন্মনিবন্ধন নিয়ে মানুষের কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দীন আজিজ বলেন, বিষয়টি সহজ করা হলে মানুষের উপকার হতো। কী করে সহজ করা যায় তা নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয় ভেবে দেখবেন।
Link copied!