বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশিক্ষণে চাওয়া হয়েছে ২৫০০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, জুলাই ২৫, ২০২১

প্রশিক্ষণে চাওয়া হয়েছে ২৫০০ কোটি টাকা

স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় কর্মসূচিতে ‘কচ্ছপগতি’তে চলছে অর্থ ব্যয়। সাড়ে ৫ বছর মেয়াদের মধ্যে সাড়ে ৩ বছরে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ টাকা। ৩১টি অপারেশন প্ল্যানের (ওপি) আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় উন্নয়ন খাতে আরও ৮ হাজার ৪৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে পুরোনো এবং নতুন মিলে দেশি ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ৫০২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল বরাদ্দের চেয়ে বাড়তি চাওয়া হয়েছে ২৩৩ কোটি ৯০ (প্রায় ২৩৪) লাখ টাকা। এসব অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে আপত্তি দিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। আরও জানা গেছে, ‘৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (৪র্থ এইচপিএনএসপি)’ নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (প্রজেক্ট ইভ্যালুশন কমিটি বা পিইসি) ৮ দিনের সিরিজ বৈঠক শুরু হচ্ছে ২৮ জুলাই। এ বৈঠকের জন্য তৈরি করা কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘এসব প্রশিক্ষণ আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা-তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। প্রক্রিয়াকরণের পর আমার কাছে আসবে। তখন এসব ব্যয় প্রস্তাব খতিয়ে দেখব। প্রয়োজন হলে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব। তবে স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে কেন অর্থ ব্যয় কম হয়েছে সেটি দেখা হবে। কর্মসূচির সংশোধনী প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, আমরা প্রশিক্ষণের নামে অহেতুক অর্থ ব্যয়ের পক্ষে নই। বৈঠকে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজন না থাকলে এ খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব কেটে দেওয়া হবে। কর্মসূচিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে যেটি ভালো হয় সে বিষয়েই সুপারিশ দেব আমরা। ২৮ জুলাই থেকে আট দিনের যে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেটির কার্যপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনটি সেক্টর কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য গ্রহণ করা হয় ‘৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (৪র্থ এইচপিএনএসপি)’ এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব খাতের বাইরে উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি সাড়ে ৫ বছরের হলেও গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে উন্নয়ন খাতের ১৯ হাজার ৮০৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। যা এ খাতের মোট বরাদ্দের ৪৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন বলছে-ব্যয়ের ট্রেন্ড অনুযায়ী অবশিষ্ট সময়ে মূল অনুমোদিত ব্যয়ের বাকি ২৩ হাজার ৬৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় করা সম্ভব হবে না বলেই প্রতীয়মান হয়। উপরন্তু প্রস্তাবিত বর্ধিত বরাদ্দ নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে ‘ভেল্যু ফর মানি’ নিশ্চিত করে ব্যয় করা কোনোক্রমেই সম্ভব হবে না। এ ধরনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে ব্যয় করতে গেলে মান রক্ষা করে এবং যথাযথ প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়েই ব্যয়ের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। ওই কার্যপত্রে বলা হয়েছে, কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত অপারেশনার প্ল্যানগুলোর আওতায় অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা মূল অনুমোদিত বরাদ্দের তুলনায় ১০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বেশি। এছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য চাওয়া হয়েছে ৩১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা মূল বরাদ্দের চেয়ে ১২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেশি। অথচ এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ব্যয় হয়েছে ৭৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণে ৯৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। করোনা মহামারির কারণে বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে যা আগের বরাদ্দ রয়েছে তাই রাখা যেতে পারে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ব্যয় যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে কমানো প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সংশোধিত প্রস্তাবে প্রশিক্ষণের যৌক্তিকতা, প্রশিক্ষণের বিষয় বা কোর্স কনটেন্ট, প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা, কাদেরকে, কোথায়, কখন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার ব্যয়সহ বিস্তারিত সংযোজন করা প্রয়োজন। জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মো. হেলাল উদ্দিন শনিবার বলেন, অর্থ ব্যয়ের ধীরগতি ঠিক নয়। তারপরও পরিকল্পনা কমিশন যদি মনে করে বাড়তি বরাদ্দ প্রস্তাব কমাতে হবে তাহলে আমরা কমাব। এছাড়া বৈদেশিক প্রশিক্ষণে বরাদ্দ কমিয়ে দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। সেক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন থেকে যদি ঢালাওভাবে না বলে সুনির্দিষ্টভাবে কমাতে বলে আমরা কমাতে পারব। এটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, কর্মসূচিটির আওতায় ৩১টি ওপিতে মোট ৩ হাজার ২৫৩টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সংস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যেই কেনা হয়েছে ২ হাজার ৭৬৭টি যানবাহন। কিন্তু এগুলো কোথায়, কোন কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছে এবং আগের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেক্টর কর্মসূচির আওতায় সংগৃহীত যানবাহনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যয় সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করে বর্তমানে অর্থ বিভাগ থেকে যানবাহন না কেনার জন্য সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এ অবস্থায় ইতোমধ্যেই যেসব যানবাহন কেনা হয়েছে সেগুলোর সংস্থান রেখে অবশিষ্ট যানবাহনের সংস্থান বাদ দেওয়া যেতে পারে। সেক্টর কর্মসূচির একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল প্রকল্পের পরিবর্তে অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে সহজে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য কাজ করা। কিন্তু বর্তমানে সেক্টর প্রোগ্রামের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একই মন্ত্রণালয়ের দুই ধরনের ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন সমীচীন নয়। এতে করে ওপিগুলোর পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য দ্বৈততার পাশাপাশি চাহিদা বা জনবল না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজগুলোতে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্যবহার সম্ভব হয় না। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সেক্টর কর্মসূচি আর না নিয়ে ৪র্থ সেক্টর প্রোগ্রামকেই শেষ সেক্টর প্রোগ্রাম হিসেবে করা যেতে পারে বলে কার্যপত্রে মন্তব্য করা হয়। এছাড়া কর্মসূচির আওতায় বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানের পরিমাণ হচ্ছে ১২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত প্রস্তাবে ধরা হয়েছে ২০ হাজার ১৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। গ্যাপ আছে ৭ হাজার ৬২৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ঋণ ও অনুদান আলাদা করতে হবে। সেই সঙ্গে এটা কীভাবে পূরণ করা যাবে বা আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তার যথাযথ ডকুমেন্ট বা ব্যাখা থাকা প্রয়োজন। পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও পদ্ধতি উল্লেখিত ফরম্যাট অনুযায়ী অনুসরণে প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়নি। ফলে প্রকল্প দলিলটি যথাযথভাবে মূল্যায়ন বা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া এটিতে একই তথ্য একাধিকবার এসেছে, যার প্রয়োজন নেই।
Link copied!