শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ফের আলোচনায় শীর্ষ জঙ্গি জিয়া

প্রকাশিত: ১১:০৩ এএম, নভেম্বর ২৫, ২০২২

ফের আলোচনায় শীর্ষ জঙ্গি জিয়া

ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের প্রেক্ষাপটে আবারও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়াকে নিয়ে। আত্মগোপনের পর থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের’ নেতৃত্ব দেওয়া মেজর জিয়া সর্বশেষ এই দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়েরও পরিকল্পনাকারী বলে মন্তব্য করেন পুলিশের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা। তবে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা হলেও তারা একাধিক মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিনেতা জিয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করার মতো তেমন স্পষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি বা জানাননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে জিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জিয়া ওই সংগঠনের জঙ্গিদের যুদ্ধ ও বোমা তৈরিসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। এরপর ২০১৩ সালে এবিটির প্রধান মুফতি জসিমউদ্দিন রাহমানী গ্রেফতার হওয়ার পর এই নিষিদ্ধ সংগঠনের অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে সামনে আসে জিয়ার নাম। পরবর্তী সময়ে এবিটি থেকে আনসার আল ইসলাম নামে নতুন নামে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার পরিকল্পনা ও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় ব্লগার, মুক্তমনা লেখক, সমকামী আন্দোলনের কর্মীসহ একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটে। এরপর কঠোর অভিযানে আনসার আল ইসলামের বেশিরভাগ নেতাকর্মী গ্রেফতার হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন জঙ্গিবাদের অন্যতম বড় হুমকি হিসেবে মনে করা সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তিনি দেশে আত্মগোপনে আছেন নাকি বিদেশে পালিয়েছেন কিংবা সম্ভাব্য অবস্থান কোথায় তা কেউ নিশ্চিত নন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সম্ভাব্য অবস্থান নিয়েও আমাদের কাছে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিভিন্ন সময়ে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হলেও তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ এমন সম্ভাব্য অবস্থানের তথ্যটিও অন্তত দেড় বছর আগের। তবে জঙ্গিবাদে নেতৃত্ব দেওয়া জিয়ার অবস্থান শনাক্তসহ তাকে গ্রেফতারে সব গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে।’ ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমান সময়ে যে কয়েকজন দুর্ধর্ষ জঙ্গিনেতা বা মাস্টারমাইন্ড রয়েছে তার মধ্যে মেজর জিয়া অন্যতম প্রধান। তাকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে সব গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। এর আগে তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণাও হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত কৌশলী জিয়া বরাবরই নিজেকে আত্মগোপনে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টায় সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। গ্রেফতারের আশঙ্কা দেখেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এরপর তিনি যুক্ত হন জঙ্গি সংগঠন এবিটির সঙ্গে। এবিটি সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে ওই জঙ্গি সংগঠনের নামকরণ করা হয় আনসার আল ইসলাম। গত কয়েক বছরে একাধিক স্থানে জিয়ার সম্ভাব্য অবস্থান জেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও তার সন্ধান পায়নি। পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৩ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নৃশংস হত্যার শিকার হন অন্তত ৯ জন। তারা হলেন-ব্লগার রাজীব হায়দার, ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, ব্লগার অনন্ত দাস, ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্লগার নাজিম উদ্দিন, সমকামীদের অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধ মাহবুব তনয়। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি হত্যার সঙ্গে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে জানায় পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্টরা। জিয়ার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুরে। তবে জিয়ার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকতেন সৌদি আরবে। ওইসব ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডে জিয়ার নাম চলে এলে তাকে এবং নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দিতে ২০১৬ সালের ২ আগস্ট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেয় পুলিশ সদর দফতর। এর চার দিন পরই আবার মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরীকে ধরিয় দিতে ২০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা ঘোষণা দেয় পুলিশ। এর মাঝে মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মেজর জিয়াসহ পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এরপর জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মেজর জিয়াসহ আট জঙ্গির ফাঁসির রায় দেন আদালত। এ ছাড়াও সমকামী অধিকার আন্দোলনের কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যার রায়েও মেজর জিয়াসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একাধিক হত্যা মামলায় জিয়াসহ আরও বেশ কিছু জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
Link copied!