শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বদনাম নিয়েই নতুন করে আসছে ইভ্যালি

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২

বদনাম নিয়েই নতুন করে আসছে ইভ্যালি

ই-কমার্সের আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠানের নাম ইভ্যালি। হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া এবং গ্রাহকের দেওয়া অর্থ বিদেশে পাচার করাসহ নানা রকম অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এ জন্য ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী এবং প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে মামলা হয় এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়। রাসেল এখনও জেলে থাকলেও জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে আছেন শামীমা নাসরিন। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বোর্ড ইতোমধ্যে শামীমা নাসরিনের কাছে ইভ্যালির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। বিগত দিনের বদনামকে সঙ্গে নিয়েই আবার নতুনভাবে আসতে যাচ্ছে ইভ্যালি। তবে ক্রেতা ও মার্চেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনেক দায় দেনা মাথায় নিয়েই ইভ্যালিকে শুরু করতে হবে পথচলা। অন্যদিকে হাইকোর্ট কর্তৃক গঠিত বিদায়ি বোর্ডপ্রধান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জমা দেওয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের সময় পরিচালিত কর্মকাণ্ড অডিট করে ৪৭ হাজার কোটি টাকার হদিস পাওয়া যায়নি। গ্রাহক ঠকানোর মামলায় মোহাম্মদ রাসেল এখনও জেলে। তবে তার স্ত্রী, শাশুড়ি এবং আরেকজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে নতুন বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি একই মামলায় জেল খেটে গত এপ্রিলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। পাওনা টাকা কিংবা পণ্যের দাবিতে গ্রাহকদের বিক্ষোভের জের ধরে গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর নিজেদের অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছিল ইভ্যালি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে গ্রাহক, মার্চেন্ট ও অন্যান্য সংস্থার কাছে তখন ইভ্যালির দেনা ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা, আর এর গ্রাহক ছিল দুই লাখেরও বেশি। তবে নানা ঘটনার পর এখন আবার এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন, শাশুড়ি ও একজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে নতুন করে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শামীমা নাসরিনের আইনজীবী আহসানুল করিম জানিয়েছেন, শনি (আজ) বা রোববারের মধ্যে নতুন বোর্ড গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে তারা জানান। তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির কার্যক্রম ও ব্যবসা চালানোর জন্য যা কিছু দরকার সেটাই করবে এই বোর্ড। তাদের নিজস্ব কৌশলেই চলবে কোম্পানি। তবে এটা প্রত্যাশিত যে পুরনো গ্রাহকদের পাওনা অর্থ যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানিকে কাঠামোগতভাবে শক্তিশালী করতে হবে। নগদ অর্থপ্রবাহ ও ব্যবসা যেন পূর্ণাঙ্গভাবে চালু থাকে, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।’ নতুন বোর্ডের পুরোপুরিভাবে বৃহস্পতিবারই দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি না আসায় সেটি হয়নি। তবে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন আদালত নিযুক্ত বোর্ড, যার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। মূলত তাদের দায়িত্ব ছিল প্রতিষ্ঠানটির দায়-দেনা, কাজের পদ্ধতি ও বিপুল অর্থের দায় থেকে বের করা যাবে কি না, তা খুঁজে বের করা। কিন্তু এই এগারো মাস পর তারা কী অবস্থায় ইভ্যালিকে রেখে যাচ্ছেনÑএমন প্রশ্নের জবাবে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘কোম্পানির হাতে এখন মাত্র ৫০ কোটি টাকার মতো আছে। তবে এর পূর্ণাঙ্গ অডিট রিপোর্ট তারা আদালতে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট বলেছিল আমাদের দায়িত্ব হবে অডিট করা ও তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া। সেটি আমরা করেছি। তাই এখন আমাদের দায়িত্ব নেই। আমাদের বলা হয়েছিল যে, আমরা রেসকিউ করতে পারলে ভালো কথা। আর না পারলে দেউলিয়া ঘোষণা করা। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন বোর্ড যে অডিট করিয়েছে তার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইভ্যালির প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার কোনো হদিস নেই। এই টাকা মোহাম্মদ রাসেলের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের সময় ব্যাংক হিসেব থেকে চলে গেছে, যা আর উদ্ধার করা যায়নি। শামীমা নাসরিনের নেতৃত্বাধীন বোর্ড কি আগের বিজনেস মডেল, অর্থাৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে পরে পণ্য দেওয়ার ব্যবসাই করবে, নাকি ব্যবসার ধরন পাল্টাবে, সেটি বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরই জানা যাবে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ই-কমার্স সেলের দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান জানান, এ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশ এখনও তারা পাননি। তবে বোর্ডে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করবেন বলে জানান তিনি। তবে ইভ্যালির কাছে আগের গ্রাহকদের যে অর্থ এখনো আটকে আছে-সেটি তারা কতটা কীভাবে পাবেন কিংবা যাদের অর্ডার আটকে ছিল তারা কীভাবে সেটি পাবেন কোনো পক্ষই সেটি পরিষ্কার করে বলতে পারছে না। গত বছরের অক্টোবরে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান করে ইভ্যালির জন্য একটি পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিলেন আদালত। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব মিলনকে করা হয়েছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পর্ষদে সদস্য হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। মূলত প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত দায়-দেনা, কাজের ধরন ও শতকোটি টাকার বকেয়া থেকে উদ্ধারের পথ বের করার উপায় আছে কি না, তা দেখাই ছিল এই পর্ষদের উদ্দেশ্য। সর্বশেষ গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট চলতি দায় ৫৪৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে মার্চেন্ট বা পণ্য সরবরাহকারীরা পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পাওনা ৩১১ কোটি টাকা। নতুন করে চালু করার বিষয়ে মন্তব্য জানতে শামীমা নাসরিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি। এ জন্য তার মন্তব্য জানা যায়নি। তবে ইভ্যালির সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার খবরে ইভ্যালির প্রত্যেক কর্মী আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। সবাই একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নতুন করে শুরু হলে আগের কর্মীদের কাকে রাখা হবে, কাকে রাখা হবে না-সব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এক কথায় আমরা এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছি ইভ্যালিকে নিয়ে।
Link copied!