বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাবে মনপুরা

প্রকাশিত: ১২:২৭ পিএম, জুন ১, ২০২২

বদলে যাবে মনপুরা

দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত করার বহু আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু চালু হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ জুন। সেতু চালু হলে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও যোগাযোগ চিত্র। এর আওতায় রয়েছে সাগরঘেঁষা ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপভূমি ভোলার মনপুরা। পদ্মা সেতুকে ঘিরে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছে এ উপজেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ভোলা জেলা শহর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন মনপুরা উপজেলা। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে মোহনায় এর অবস্থান। এখান থেকে জেলা শহরের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এ জনপদের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা নৌপথ। সকালে রওনা দিয়ে পৌঁছতে হয় বিকালে। চারদিকে উত্তাল মেঘনা নদীবেষ্টিত একটি দ্বীপ। চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত উপজেলাটিতে দেড় লাখ মানুষের বসবাস। ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত হওয়ার পর থেকে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আধুনিক নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ উপজেলার মানুষ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতের কিছুটা উন্নতি হলেও এখনও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়ে গেছে এ ভূখণ্ডের মানুষ। আধুনিক চাহিদাগুলোর অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা হলেও এ দ্বীপের মানুষের একমাত্র ভরসা নদীপথ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই নদীপথের উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। তবে পদ্মা সেতুর কল্যাণে মনপুরায়ও কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে বলে মনে করেন অনেকে। পরিবর্তন আসতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে। এদিকে মনপুরার সঙ্গে ফেরি যোগাযোগ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে উপজেলাবাসীকে। সরকারি দফতর, অফিস-আদালত, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ নানাবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সরকারি দফতরের চিঠিপত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফাইল আদান-প্রদানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা শহর বা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যা পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। একটি মাত্র সরকারি সি-ট্রাকই ভরসা এ দ্বীপবাসীর। একই জলযানে যাত্রী ও মালামাল বহন করতে হয়। মনপুরা থেকে ফেরি চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে মনপুরাবাসীর সে দাবি পূরণ হয়নি। বরিশালের দপদপিয়া সেতু, পটুয়াখালীর লেবুখালী সেতু, সর্বশেষ পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে মনপুরায় ফেরি চালুর সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে আলোর মুখ দেখছে। গত ২৫ মে মনপুরা ফেরিঘাট পরিদর্শনে আসেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজী ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক। এ রুটে ফেরি চালু হলে খুলে যাবে আধুনিক যোগাযোগের দ্বার। উন্মোচিত হবে নতুন স্বপ্নের দিগন্ত। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গড়ে উঠবে অভূতপূর্ব এক মেলবন্ধন। কম সময়ে, কম খরচে ঢাকায় গিয়ে কাজ শেষ করে দিনে দিনেই ঘরে ফিরতে পারবে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপের বাসিন্দারা। এ বিষয়ে কথা হয় ইলিশ আড়তদারদের সঙ্গে। তারা বলেন, মনপুরা থেকে কোনো সড়কপথ না থাকায় দিনের মাছ দিনে মাছ ‘মোকাম করতে’ না পেরে অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। ইলিশ মাছ লঞ্চে করে একদিন আগে পাঠাতে হয়। তা না করতে পারলে মাছ নষ্ট হয়ে যায়। ভালো দাম পাই না। পদ্মা সেতু চালু হলে দিনের মাছ দিনে মোকাম করে ব্যবসায় উন্নতি করা যাবে। অনেক রোগী জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে গেলে এখন তিন দিন লাগে। আর ডাক্তার দেখানোর পর কোনো পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করলে আরও দুই দিন চলে যায়। এতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে দিনে দিনে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরতে পারব।
Link copied!