বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাবুল আক্তারের করা দুটি আবেদনেই খারিজ

প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২

বাবুল আক্তারের করা দুটি আবেদনেই খারিজ

হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ও নিরাপত্তা চেয়ে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের করা দুটি মামলার আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে এই দুটি মামলার আবেদনের শুনানি করে খারিজ করে দেন। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাবুল আক্তারের পক্ষে হেফাজতে নির্যাতনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত পিটিশন মামলাটি মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছা খারিজ করে আদেশ প্রদান করেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফেনী কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশের আবেদন ও নামঞ্জুর করা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাবুল আক্তার পিবিআইয়ের ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁরা হলেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা, পুলিশ পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও কাজী এনায়েত করিম। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩-এর ১৫ (১) এবং ৫ (২) ধারায় পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গ্রহণের আবেদন করা হয়। মামলার আবেদনে অভিযোগ আনা হয়, ২০২১ সালের ১০ মে সকাল পৌনে ১০টা থেকে ১৭ মে বেলা ১টা পর্যন্ত পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর অফিসে তাঁকে (বাবুল আক্তার) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় গালিগালাজ ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করত। সারাক্ষণ হ্যান্ডকাপ পরিয়ে এবং চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় বাথরুমে নেওয়া হতো। প্যানের ওপর দাঁড় করিয়ে তারপর হ্যান্ডকাপ খুলত, কিন্তু চোখ বাঁধা থাকত। স্বীকারোক্তি দিতে রাজি করানোর জন্য তাঁর সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং লাঞ্ছনাকর আচরণ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে ২৪ ঘণ্টা জাগিয়ে রাখা হয়। গোসল করতেও দেওয়া হতো না। বাবুল আক্তারের ওই মামলার আবেদনের ৩ দিন বাদে ফেনী কারাগারে বাবুলের কক্ষে তল্লাশির অভিযোগ ও নিরাপত্তা পেয়ে আদালতে আরেকটি আবেদন করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী। এর পরদিন ১৩ সেপ্টেম্বর মিতু হত্যাকাণ্ডে তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দেন পিবিআই। এতে বাবুলের করা মামলায় তাঁকে আসামি বানানো হয়। আগামী ১০ অক্টোবর আদালতে এই অভিযোগপত্র গ্রহণ শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার কাছেই গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি শুরুতে তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর, ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ের হাতে আসে। ২০২১ সালে ১১ মে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে এনে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়। পরদিন ১২ মে পিবিআই প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাবুল নিজেই তাঁর স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জড়িত। বাবুলের করা মামলাটিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। একই দিন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নতুন একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তারের পর বাবুল কারাগারে রয়েছেন। গত বছরের ৩ নভেম্বর বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ না করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগে বাবুলের শ্বশুরের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ৬ মার্চ আদালত গ্রহণ করেন।
Link copied!