বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিএমইএ ভবন নেই, শিকড় আছে

প্রকাশিত: ১০:১৯ এএম, মে ১৪, ২০২২

বিজিএমইএ ভবন নেই, শিকড় আছে

চকচকে কাচঘেরা দৃষ্টিনন্দন ১৬ তলা বিজিএমইএ ভবন এখন আর হাতিরঝিলের বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে নেই বটে, তবে মাটির তলায় এখনও সেটির শিকড় রয়ে গেছে। ভবন ভাঙ্গা হলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি পানি চলাচল। ঝিলের বুকে গেঁথে থাকা ভবনের পাইলিং এখনও হাতিরঝিলের পানিপ্রবাহে বাধা হয়ে আছে। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঝিলের ধারে ভবনের কোনো চিহ্ন নেই। কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব না দুই বছর আগেও এখানে ছিল বিশাল এক ভবন। তবে ভবনের ভিত্তির মাটি এখনও পুরো সরানো হয়নি ঝিল থেকে। পাইলিং গেঁথে আছে পানির নিচে, যার কিছু অংশ পানির ওপরে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। আগে ভবনের দক্ষিণ পাশে কয়েক ফুট জায়গা পানি চলাচলের জন্য থাকলেও এখন মাটি সরানোর জন্য সেটিও ভরাট করা হয়েছে। উত্তরে যেখানে ভবনে প্রবেশের গেট ছিল, সেখানে এখন নালা আকৃতির ১০ ফুটের মতো জায়গা, যা দিয়ে কোনো রকমে পানির ক্ষীণ একটি প্রবাহ। ঝিলের পরিকল্পনায় আছে, পুরা জায়গা থেকে মাটি সরিয়ে নিয়ে ঝিলটির পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে। তবে মাটি সরানোর কাজ বেশ কয়েক মাস বন্ধ রয়েছে। এতে মাঝখানের মাটি সরে জায়গাটি এখন একটি পুকুরের মতো মনে হয়, যার এক পাড় খোলা। অথচ দুই বছর আগেই স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল হাতিরঝিলের পরিবেশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন) এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস নিজউবাংলাকে জানিয়েছেন, ‘ভবন ভাঙার কাজ শেষ করে এরই মধ্যে ভরাট করা মাটি সরানোর কাজ চলছে। যে পাইলিংগুলো এখনও আছে, সেগুলোও তুলে ফেলা হবে। এ কাজ তিন ভাগের দুই ভাগ শেষ হয়েছে। এখানে পানির মধ্যে কোনো কিছু থাকবে না। তবে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। ঈদের পর আমরা আবারও কাজ শুরু করব। তখন আর কিছুই থাকবে না। শিগগিরই মুক্ত হবে এটি। এরপর হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করা হবে।’ প্রধান প্রকৌশলী মাটি সরানোর কাজ অব্যাহত থাকার কথা বললেও জাগায়টি ঘুরে এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরেই এখান থেকে মাটি সরানোর কাজ বন্ধ আছে। জায়গাজুড়ে একফুটের বেশি লম্বা ঘাস তা জানান দিচ্ছে। আগে যেখানে বিজিএমইএর ভবনের প্রবেশপথ ছিল, তার পাশেই হোটেল সোনারগাঁওয়ের পেছন দিয়ে লেকের পাশ ঘেঁষে পায়ে হাঁটা পথ। সেখানে হোটেলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তাকর্মী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বছরখানেক হইব এখানে কোনো কাম হয় না। এ ভাবেই ফালায় রাখছে। আমি তো প্রতিদিন এখানে ডিউটি করি, কাউরে দেখলাম না কাম করতে। মাটি কাটার কোনো মিশিনও দেখি নাই।’ ২০০৬ সালে হাতিরঝিল লেকের একাংশ ভরাট করে ১৬ তলা ভবনটি গড়ে তোলে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। ২০১০ সালে এটিকে জলাধার আইন ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএকে নিজস্ব খরচে ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবন ক্যানসারের মতো। যদি ভবনটি অবিলম্বে সরানো না হয়, তবে এটি হাতিরঝিল নয়, পুরো ঢাকা শহরের ক্ষতি করবে।’ এই রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আপিল করলেও রায়ে পরিবর্তন আসেনি। তবে দুই দফায় ভাঙার সময় বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বেঁধে দেয়া সময় শেষ হলে ওই বছরের ১৬ এপ্রিল রাজউক ভবনটি সিলগালা করে। এরপর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ পায় চট্টগ্রামভিত্তিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। ২০২০ বছরের ২১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ভবন ভাঙার কাজ। তবে এরপর করোনার কারণে ভাঙার কাজেও স্থবিরতা আসে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গত বছরের মাঝামাঝিতে মূল ভবন ভাঙার কাজ শেষ হয়। ২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুটের বিজিএমইএ ভবনটিতে ছিল তিনটি বেসরকারি ব্যাংক ও ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অফিস। বিলাসবহুল অ্যাপারেলস ক্লাবে সুইমিং পুল, রেস্তোরাঁ, সভাকক্ষ এবং একটি বড় আকারের মিলনায়তন ছিল। তবে সেসব এখন অতীত। নতুন করে উত্তরায় ১১০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে বিজিএমইএ’র নতুন ভবন।
Link copied!