মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিডিবিএলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ০৩:৪৭ এএম, এপ্রিল ১১, ২০২১

বিডিবিএলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ

জাল সমঝোতা স্মারক তৈরি করে পণ্য আমদানির নামে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে একদিনে ১৫ হাজার টন পণ্য ট্রাকে পরিবহণের ঘটনাকে ডাকাতি বলা হয়। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তদন্ত শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন দেন। এর আগে ওই অর্থ আত্মসাতে জড়িত সন্দেহে মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মালিক মো. টিপু সুলতান, বিডিবিএল-এর এজিএম দেওয়ান মোহাম্মদ ইসহাক, সাবেক এসপিও দীনেশ চন্দ্র সাহা এবং সাবেক জিএম সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার শনিবার যুগান্তরকে জানান, ২০১২ সালে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সিল ও সই জাল করে টিপু সুলতানের নামে একটি দরপত্র গ্রহণ করা হয়। তারপর সমঝোতা স্মারকের ভুয়া নথি তৈরি করে পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির তিন কর্মকর্তা ভুয়া নথি ব্যবহার করে ১৫ হাজার টন গম আমদানির নামে ঢাকা ট্রেডিং হাউজকে ২৫ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেন। ওই ঋণের বিপরীতে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে যে পরিমাণ সম্পদ বন্ধক রেখেছে তা অপ্রতুল ছিল এবং তাতে ঋণ পরিশোধের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যার স্বত্বাধিকারী মো. টিপু সুলতান। গ্রাহকের অনুকূলে ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল মঞ্জুরিপত্র ইস্যু করা হয়। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. টিপু সুলতানের মধ্যে সম্পাদিত এমওইউ অনুযায়ী স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার টন গম সংগ্রহের জন্য এই চুক্তি হয়। এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার এলটিআর ঋণ মঞ্জুর করা হয়। মঞ্জুরিপত্র ইস্যুর পরদিনই বিডিবিএল-এ এলসি করা হয়। গ্রাহক এলসি নেগোসিয়েশন ব্যাংক হিসাবে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বিজয়নগর শাখায় ফরওয়ার্ডিং শিডিউলসহ শিপিং নথি জমা দেন। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ওই দিনই তা বিডিবিএল-এ পাঠায়। বিডিবিএল-এর নোটিংয়ের ৩২তম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ এলসিতে উল্লিখিত মালামাল বুঝে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডকুমেন্ট ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। আগের দিন এলসি স্থাপন করার পরদিনই ১৫ হাজার টন গম বুঝে পাওয়ার বিষয়টি সন্দেহজনক। পরে বিডিবিএল-এর নিয়োগ করা অডিট ফার্ম জি. কিবরিয়া অ্যান্ড কোং. নিরীক্ষা করে জানায়, ব্যাংকের সঙ্গে ঢাকা ট্রেডিং হাউজের চুক্তিটি ছিল জাল। ঋণের রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ‘আপটুডেট ইনকাম টেক্স’ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়নি। কেওয়াইসিতে টিন নম্বর নেই। কেওয়াইসির পরিচয়দানকারী তথ্য সঠিক নয়। কেওয়াইসির গ্রাহক টিপু সুলতানের বাবার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের টিপু সুলতানের বাবার নাম এক নয়। ২৫ কোটি টাকার ঋণটি খুব দ্রুত অনুমোদিত হয়। অথচ এক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিশোধ প্রক্রিয়া, দক্ষতা এবং সক্ষমতা যাচাই করা হয়নি। যে এমওইউর জন্য ওই ঋণ দেওয়া হয়, তা জাল হিসাবে প্রমাণিত। জাল রেকর্ডপত্রকে খাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে ওই ঋণ সুকৌশলে অনুমোদন করে নেওয়া হয়েছে। ১৫ হাজার টন পণ্য একদিনে একটি ট্রাকে পরিবহণ দেখানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ছাড়া এলটিআর-এর বিপরীতে কোনো টাকা পরিশোধ হয়নি। ঋণটি বর্তমানে শ্রেণিকৃত অবস্থায় আছে যার বিপরীতে মর্টগেজ একেবারেই অপ্রতুল এবং এটা পরিশোধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শনে ঢাকা ট্রেডিং হাউজে মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসপিএস করপোরেশনের ঠিকানায় কোনো অফিস খুঁজে পাননি। যে বিশাল ট্রাক দিয়ে ১৫ হাজার টন গম একদিনেই পরিবহণ দেখিয়েছেন, সে ট্রাকেরও অস্তিত্ব পাননি। হিলি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি নামীয় কোনো পরিবহণ সংস্থা কখনোই হিলিতে ছিল না মর্মে সেখানকার পৌরসভা মেয়র লিখিতভাবে জানান। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংক গ্রাহক টিপু সুলতান শুধু বিডিবিএল নয়, একইভাবে জনতা ব্যাংক থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং হাউজের মাধ্যমে ২০০ কোটি টাকার জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন, যা সুদ-আসলে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। দুদকের উপপরিচালক সামসুল হক ওই ঋণের বিপরীতে মামলা করেছেন এবং টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করেছিলেন। টিপু সুলতান ঢাকা ট্রেডিং হাউজসহ কয়েকটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংক ছাড়াও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা ভুয়া ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন বলে জানান দুদক কর্মকর্তা।  
Link copied!