শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিত্তবৈভবের চূড়ায় ছিলেন ৩ বান্ধবী

প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, মে ১৬, ২০২২

বিত্তবৈভবের চূড়ায় ছিলেন ৩ বান্ধবী

কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদার ধরা পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গে। তাঁকে ভারতে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে; চলছে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। অর্থ লোপাটে পটু পি কে হালদারের সহায়সম্পত্তির হিসাবের চুলচেরা বিশ্নেষণ চলছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার তাঁর তিন বান্ধবীর জবানিতে মিলছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই তিন নারীকে বিলাসী জীবনে আকৃষ্ট করে তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন পি কে। বিনিময়ে তাঁদের কাউকে ফ্ল্যাট, গাড়ি, দামি উপহার ও অর্থ দিয়েছেন। অসংখ্যবার নিয়ে গেছেন বিদেশ ভ্রমণে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন বড় পদের চাকরি। তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, যে প্রকারেই হোক, অর্থ লোপাট আর প্রেমিকাদের নিয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকাই ছিল তাঁর নেশা। এ পর্যন্ত তিন প্রেমিকা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে পি কে হালদারের প্রেম ও তাঁর বান্ধবীদের পেছনে অবাধে অর্থ খরচের তথ্য উঠে এসেছে। পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ তিন প্রেমিকা হলেন অবন্তিকা বড়াল, নাহিদা রুনাই ও শুভ্রা রানী ঘোষ। তাঁর আরও প্রেমিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সর্বদা তাঁর বিত্তবৈভবের প্রয়োজন ছিল। প্রেমিকাদের নিজের করে রাখতে কাউকে বড় পদে চাকরি দিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, কাউকে কিনে দিয়েছেন ফ্ল্যাট, গাড়ি নানা সম্পদ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় পদে থেকে প্রেমিকারাও অবাধে লুটে নিয়েছেন অর্থ। দুদকের তদন্ত থেকে জানা গেছে, পি কে হালদার তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইকে সঙ্গে নিয়ে আলাদাভাবে ৬০ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে আলাদা সময় কাটাতেন। রিলায়েন্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রুনাইকে বড় আপা ও অবন্তিকাকে ছোট আপা বলে সম্বোধন করতেন। রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। অবন্তিকার কর্তৃত্বে চলত পিপলস লিজিং। রুনাইর অসীম ক্ষমতার উৎস ছিল পি কে হালদার। তাই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কয়েক বছরে তাঁর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটির টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পি কে হালদারকে নিয়ে অবন্তিকা ও রুনাইয়ের মধ্যে ছিল চরম প্রতিযোগিতা। দুদক সূত্র থেকে জানা গেছে, শুধু নাহিদা রুনাইকে ভারতে নিয়ে গেছেন ২২ বার। তাঁকে ২০ কোটি টাকা দেওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। অবন্তিকাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পাঁচ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। অনন্দিতা মৃধাকে রাজধানীর উত্তরায় ৯ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। সুস্মিতা সাহাকে দেওয়া হয়েছে একশ কোটি টাকার বেনামি ঋণ। পাপিয়া ব্যানার্জিকে দেওয়া হয়েছে তিনশ কোটি টাকার বেনামি ঋণ। মমতাজকে দেওয়া হয়েছে তিনশ কোটি টাকার বেনামি ঋণ। অবন্তিকা বড়াল: সুন্দরী এই প্রেমিকাকে রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সাতমসজিদ রোডে ৩৯ নম্বর বাড়ির ১২/ই নম্বর বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন পি কে হালদার। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি দুদক উপপরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম তাঁকে নিজ ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করেছে। পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে অবন্তিকার বিরুদ্ধে। নাহিদা রুনাই: নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ দিয়েছিলেন পি কে হালদার। দুদক উপপরিচালক তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গত বছরের ১৬ মার্চ তাঁকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া অস্তিত্বহীন আনান কেমিক্যাল লিমিটেড নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগ আছে। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ঋণ নিয়ে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। শুভ্রা রানী ঘোষ: পি কে হালদারের দুর্নীতির আরেক সহযোগী ও তাঁর বান্ধবী শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের ২২ মার্চ। ওই দিন অস্তিত্বহীন কোম্পানি ওয়াকামা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান শুভ্রা রানী ঘোষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। দুদকের মামলার আসামি ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ তথ্য অনুযায়ী ওই দিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে আটক করা হয়। পরে শুভ্রাকে দুদকের কাছে সোপর্দ করা হলে দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি টিম তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। অস্তিত্বহীন ওয়াকামা ইন্টারন্যাশনালের নামে প্রতারণার মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
Link copied!