বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে পাচার ১১৭ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, জানুয়ারি ৬, ২০২২

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে পাচার ১১৭ কোটি টাকা

ডেইলি খবর ডেস্ক: অনিয়ম-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতা ঝেকে বসেছে ন্যাশনাল ব্যাংকে। এই ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানায় থাকা জয়নুল হক সিকদার পরিবারের সদস্যদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের মাধ্যমে এক কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১১৭ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংকের ইস্যু করা আন্তর্জাতিক কার্ডের মাধ্যমে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল সময়ে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত ওই পরিমাণ অর্থ বিদেশে খরচ করা হয়েছে। অনুমোদিত সীমার বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করলে আইন অনুযায়ী তা পাচার। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাংকটির পুরো কার্ড সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের দুই ছেলে এবং ব্যাংকটির পরিচালক রন হক ও রিক হক সিকদারের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব বন্ধ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে সিকদার পরিবারের সদস্যদের আন্তর্জাতিক কার্ডে এ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এ বিষয়ে গত ১৮ নভেম্বর বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সিকদার পরিবারের ক্রেডিট কার্ডের ঋণের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে না দেওয়ায় এরই মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর ব্যাংকটি জবাবে বলেছে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যানের মৌখিক অনুরোধ এবং ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুপারিশে ব্যাংকের স্বার্থসংশ্নিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ইস্যুকৃত আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে ভ্রমণ কোটার সীমার বাইরে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের এ জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২২ ডিসেম্বর নতুন করে আবার চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণভাবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব খোলার বিধান রয়েছে। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে জেড এইচ সিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজের নামে বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব খোলা হয়েছে। ব্যাংকের জেড এইচ সিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজ শাখায় খোলা হিসাবে লেনদেন করেছে দিলকুশা শাখা। যে কারণে এই দুটি শাখার এডি লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে। আবার নিয়মবহির্ভূতভাবে জেড এইচ সিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজের নামে খোলা বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব কেন বন্ধ করা হবে না- সে বিষয়েও ব্যাংকটির ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মে ভ্রমণ কোটায় একজন বাংলাদেশি বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার খরচ করতে পারেন। কোনো কারণে এর বেশি খরচ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হয়। তবে এই সীমার চেয়ে বেশি খরচ করেছেন সিকদার পরিবারের ৯ সদস্য। কার্ড ব্যবহারের তালিকায় রয়েছেন-প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের সন্তান রন হক সিকদার, রিক হক সিকদার, দিপু হক সিকদার, মমতাজুল হক ও লিসা ফাতেমা হক। এর বাইরে রয়েছেন রিক হক সিকদারের দুই ছেলে জন হক সিকদার ও শোন হক সিকদার, নাসিমা হক সিকদারের মেয়ে মনিকা সিকদার খান এবং জেফরি সিকদার। সিকদার পরিবারের বাইরে সিকদার গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সৈয়দ কামরুল ইসলাম ও গ্রæপের কর্মকর্তা ভারভারা জারিনাও সীমার বেশি ডলার খরচ করেছেন। অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহবুব হোসেনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদারকেও ফোন দিলে তিনি ধরেননি। ন্যাশনাল ব্যাংক সিকদার পরিবারের একক কতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ২০১৪ সাল থেকে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সিকদার পরিবারের অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এত দিন চুপ থাকলেও ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার গত ১০ ফেব্রæয়ারি মারা যাওয়ার পর দৃশ্যমান বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। অবশ্য গতবছরের মে মাসে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে ব্যাংকটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।সুত্র-সমকাল  
Link copied!