শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সম্ভবনাই বেশি : আবরার ফাইয়াজ

প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, জুলাই ৫, ২০২২

বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সম্ভবনাই বেশি : আবরার ফাইয়াজ

নিহত আবরার ফাহাদের ইচ্ছে পূরণে ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হওয়ার সম্ভবনা বেশি। গতকাল সোমবার (৪ জুলাই) রাত ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এমন তথ্য দিয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন বুয়েটে ভর্তির জন্য সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বুয়েটের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স (ভর্তির) পাওয়ার পর গতকাল সোমবার (৪ জুলাই) রাতে তিনি ফেসবুকে এই পোস্ট করেন। ফেসবুক পোস্টে ভাই আবরার ফাহাদের ইচ্ছে পূরণ করতে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। আবরার ফাইয়াজের ফেসবুক পোস্টটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো : ১ জুলাই ২০১৯। আমাদের ইন্টারমেডিয়েটের পথচলার শুরু সম্পূর্ণ ৩ বছর আগে। তখন ভাবতেও পারিনি পরের ৩ বছরে ঠিক কী কী হতে যাচ্ছে। মাত্র ৩ মাস ঢাকা কলেজে থাকতে পেরেছিলাম। ভাইয়া মারা যাওয়ার পর ফিরে আসলাম কুষ্টিয়ায়। তার ৪ মাস পর থেকে করোনা শুরু হলো বাংলাদেশে। প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস ঘরবন্দি থাকলাম। তারপর কিছুদিন করোনা ছিল না। এর মধ্যে ২০২১-এর এপ্রিলে বড় ফুপা মারা যান। ঘরবন্দি থাকতে থাকতে আমার ইমিউনিটিও একদম দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। একই বছর জুলাইতে আমি আর আম্মু কোভিডে আক্রান্ত হই। এরপরে কিছুদিন সব ঠিক ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। দাদির ক্যানসার ধরা পড়ল। দাদিও একদম দ্রুত মারা গেলেন। তখন আমার এইচএসসির আর একমাস বাকি। তখন থেকেই আমারও বারবার অসুস্থ হওয়া শুরু। গত ৬-৭ মাসে দশবারের বেশি ডাক্তার দেখিয়েছি। মনে হয় ১০০ ও বেশি প্রকারের ওষুধও খাওয়া লাগছে। আল্লাহর কাছে শুধু বলতাম, অন্তত যেন পরীক্ষার দিনগুলো সুস্থ থাকতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ, তেমন কোনো বড় সমস্যা হয়নি। গত ৩ বছর আসলে অনেক দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে গেছে। যা যা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই আমার আশা ছিল না। খুব দ্রুতই সব ঘটে গেছে। হঠাৎ করে নিজেকে সম্পূর্ণ এমন একটা জায়গায় আবিষ্কার করেছি, যেখানে কখনও নিজেকে ভুলেও ভাবিনি। তবে আলহামদুলিল্লাহ, এই ৩ বছরের শেষে আল্লাহ হতাশ করেননি। বলা যায় আজকেই আমার ইন্টারমেডিয়েটের পড়ালেখার জীবনটার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটল। পাঁচ জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ কোথাও একদম হতাশ করেননি। ভাইয়া পাঁচ জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিল তাই আমিও ৫ জায়গাতেই দিয়েছি। আর কোথাও দেওয়ার ইচ্ছা নেই। RUET-এ Apply করেছি কিন্তু পরীক্ষা দেব না। কোথায় ভর্তি হব, এখনও নিশ্চিত না। তবে বুয়েটে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নিরাপত্তা কিংবা ভালোমন্দের মালিক আল্লাহ তায়ালা। সামনের দিনগুলো কেমন কাটবে জানি না। তবে আল্লাহ যেটা করবেন, ভালোর জন্যই করবেন এটা আমি দৃঢ়ভাবে মেনে চলার চেষ্টা করি। পরবর্তী জীবনের পথগুলোও যেন তিনি সহজ করে দেন, এটাই চাওয়া। সবাই দোয়া করবেন যেন আমার জীবনের এই নতুন জার্নি সুন্দর, সফল হয় এবং ভাইয়ার ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে পারি.....।’ প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের একটি হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা আবরারকে ৬ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর তার বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এরপর মামলা তদন্ত করে পুলিশ মোট ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়, যাদের সবাই বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এই মামলায় রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
Link copied!