বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থ স্যামসনের সেঞ্চুরি, রানের পাহাড় গড়েও শেষ বলে জিতল পাঞ্জাব

প্রকাশিত: ০২:২৪ এএম, এপ্রিল ১৩, ২০২১

ব্যর্থ স্যামসনের সেঞ্চুরি, রানের পাহাড় গড়েও শেষ বলে জিতল পাঞ্জাব

রেকর্ড গড়েই জিততে হতো রাজস্থান রয়েলসকে। আইপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২২ রান তাড়া করে জয় পেতে হতো। সেই রেকর্ডের তাড়ায় দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকালেন অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। তবু জেতা হলো না। পাহাড়সম লক্ষ্য ডিঙাতে গিয়ে ২১৭ রানে থামলেন রাজস্থান রয়েলসের ব্যাটসম্যানরা। ফলে মাত্র ৪ রানে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে নিল পাঞ্জাব কিংস। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আজ রানের বন্যা বইয়ে গেছে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪০ ওভারের এক ম্যাচেই হয়েছে ৪৩৮ রান! ক্রিকেটপ্রেমীরা বলবেন, এটাই তো টি-টোয়েন্টি। যেখানে বোলারদের তুলোধোনা করে ব্যাটসম্যান ডেলিভারিগুলো হাওয়া ভাসাবে একের পর এক। ধুমধাড়াক্কার খেলায় আজ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। মাত্র ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি পূরণ করতে পারেননি। পরে ক্যারিবীয় দানব ক্রিস গেইলের ৪০ রান ও দীপক হুডার মাত্র ২৮ বলে ৬৪ রানের টর্নেডো ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ২২১ রান তোলে পাঞ্জাব। এতো বড় লক্ষ্য রাজস্থান রয়েলস টপকাতে পারবে কি? সমর্থকরা স্মৃতির পাতা হাতড়ে আশার আলো খুঁজে পান। এই পাঞ্জাবের বিপক্ষেই আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২২৪ রান চেজ করে জয়ের রেকর্ড গড়েছিল রাজস্থান রয়েলস। আজ সেই ইতিহাস ফের লিখতে যাবে কি রাজস্থান? কিন্তু শুরুতে দলের সেরা অলরাউন্ডার বেন স্টোকস শূন্য রানে ও মানান ভোরা ১২ রানে ফিরে গেলে সেই আশা ফিকে হয়ে যায়। কিন্তু ওয়ানডাউনে নামা অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন যেন একাই খেলার মোড়ই ঘুরিয়ে দিলেন। সামি, রিচার্ডসন, আর্শদ্বীপরা একের পর এক নাস্তানাবুদ হতে থাকেন স্যামসনের হাতে। রাজস্থানের অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যানরা ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংস খেলে বিদায় নিতে থাকেন। কিন্তু অধিনায়ক একাই দলকে টেনে নিয়ে যান লক্ষ্যের কাছাকাছি। জশ বাটলার, শিভাম দুবে ও রিয়ান পরাগ যথাক্রমে ২৫, ২৩ ও ২৫ রান যোগ করে আউট হন। এক সময় মনে হতে থাকে অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে আউট হচ্ছেন, স্যামসন তার সেঞ্চুরি করার আগেই অলআউট হয়ে যায় কিনা। ১৭ ওভার শেষে রাজস্থানের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৮২ রান। অর্থাৎ জয়ের জন্য ১৮ বলে প্রয়োজন ৪০ রান। স্যামসন তখন ৫১ বলে ৮৮ রানে অপরাজিত। তখন থেকেই টানটান উত্তেজনা শুরু। ১৮তম ওভারে ঝাই রিচার্ডসনের প্রথম ৩ ডেলিভারিতে ১৪ রান নেন স্যামসন। আইপিএলে অধিনায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হয়েই পূরণ করেন সেঞ্চুরি। ১৮তম ওভারে ১৯ রান নেন স্যামসন। অর্থাৎ বাকি ১২ বলে প্রয়োজন ২৩ রান। যা অসম্ভবের কিছু নয়। কিন্তু ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান রাহুল তিওয়াতিয়া (২)। ওই ওভারে স্যামসন ছক্কা হাঁকাল শেষ ৬ বলে জয় পেতে প্রয়োজন পড়ে ১৩ রান। টানটান উত্তেজনা এখন চরম মাত্রায়। শেষ ওভারটি আর্শদ্বীপ সিংয়ের হাতে তুলে দেন পাঞ্জাব অধিনায়ক রাহুল। সেই ওভারে ছক্কা হাঁকালেও পূর্ণ ১৩ রান আর যোগ করতে পারেননি স্যামসন। শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৫ রান। ৬২ বলে ১১৯ রানে অপরাজিত তিনি। স্ট্রাইকে তাকেই থাকতে হবে। অধিনায়কের কাজটিই করলেন। সঞ্জু স্যামসন সুযোগ থাকার পর সিঙ্গেলস এড়িয়ে গেলেন। শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকালে টাই, ছক্কা হলে জয়। স্যামসন ঝুঁকিটা নিলেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। লক্ষ্য থেকে মাত্র ৪ রান দুরে থাকতে সুইপার কভারে হুডার হাতে তালুবন্দি হন। ব্যর্থ হয় তার সেঞ্চুরি। ২২১ রান করেও মাত্র ৪ রানে জয় পায় প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব। অপেক্ষা করতে হয় শেষ বল অবধি। পাঞ্জাবের পক্ষে সফল বোলার আর্শদ্বীপ সিং। তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। মোহাম্মদ সামি পেয়েছেন ২টি। রিচার্ডসন ও মেরেডিথ একটি করে উইকেট শিকার করেছেন। এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ২২ রানে ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালের উইকেট হারায় পাঞ্জব। তিনে ব্যাটিংয়ে নামা ক্রিস গেইলকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৬৭ রানের জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল। ২৮ বলে ৪০ রান করে ফেরেন গেইল। এরপর দীপক হুডকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে মাত্র ৪৭ বলে ১০৫ রানের জুটি গড়েন রাহুল-হুডা। ক্রিস মরিসের শিকারে পরিনত হওয়ার আগে ২৮ বলে চারটি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬৪ রান করে ফেরেন হুডা। ব্যাটিংয়ে নেমে গোল্ডেন ডাক পান নিকোলাস পুরান। ইনিংসের শুরু থেকে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন লোকেশ রাহুল। দুর্দান্ত খেলেও মাত্র ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন পাঞ্জাব কিংসের এ অধিনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে ৫০ বলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৯১ রান করেন রাহুল। তার এমন বিধ্বংসী ইনিংসে ৬ উইকেটে ২২১ রানের পাহাড় গড়ে পাঞ্জাব।
Link copied!