বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছেন ব্রুজন

প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১

বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছেন ব্রুজন

ফুটবলের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা গভীর। একটা সময়ে লাল-সবুজ দেশে ফুটবল উন্মাদনা ছিল সর্বোচ্চ স্তরে। সুখকর সেই অতীতের সামনে বর্তমান একেবারেই ঠুনকো। ক্রমশ অবনমনে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৮৯ নম্বরে গিয়ে ঠেকেছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। এখন জয় নয়, কেবল ভালো খেলার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নামেন জামাল ভূঁইয়ারা। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, সে প্রত্যাশাও অপূর্ণ থেকে যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত তিন আসরে তো রাশি রাশি হতাশাই জুটিছে ভাগ্যে। আরেকটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, দলের ভাগ্য ফেরাতে তখন কোচের পদে বদল এনেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জেমি ডের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অস্কার ব্রুজন। দায়িত্ব বুঝে নিয়ে বড় স্বপ্নই দেখাচ্ছেন নতুন এ কোচ। বুধবারের দিনটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ব্রুজনের ক্যারিয়ারে। এদিন প্রথমবার কোনো জাতীয় দলের কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন এ স্প্যানিয়ার্ড। বসুন্ধরা কিংসকে টানা দুবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ জিতিয়ে বাফুফের চোখে পড়েছেন তিনি। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও তাকে পরখ করে নিতে বেছে নিয়েছেন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চকে, যা আগামী ১ অক্টোবর মালদ্বীপে শুরু হবে। ব্রুজন নিজেও প্রস্তুত এই চ্যালেঞ্জের জন্য। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তার সাজানো দল এবং ব্যক্ত করা প্রত্যাশা বলছে এমনটা। জেমির চোখে পড়া বিদেশিদের উপেক্ষা করে সাফের জন্য ২৭ সদস্যের প্রাথমিক দল সাজিয়েছেন ব্রুজন। তিনি স্কোয়াডে রেখেছেন তার ক্লাবের খেলোয়াড় এলিটা কিংসলেকে। ফিফা ও এএফসির অনুমতি না পাওয়ায় এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ডের লাল-সবুজদের হয়ে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলা এখনও অনিশ্চিত। ফলে গোল করার লোক নিয়ে যে দুশ্চিন্তা, সেটা থেকে মুক্তি মেলেনি এখনও। এরপরও সাফের ফাইনালে চোখ রাখছেন ব্রুজন। যদিও সরাসরি এটা বলেননি তিনি, তবে তার বক্তব্যে ছিল এমন ইঙ্গিত। কিংসলেকে পাওয়া আর ফাইনাল খেলা, বর্তমানে দাঁড়িয়ে এ দুটোই এখন বাংলাদেশের জন্য বড় স্বপ্ন। বাংলাদেশ একবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন। ২০০৩ সালের চ্যাম্পিয়নরা টুর্নামেন্টে সবশেষ সেমিফাইনাল খেলেছে এক যুগ আগে। লাল-সবুজ দলের অধঃপতনের বোঝাতে এতটুকু পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। তবে দেশের ফুটবলের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে চান ব্রুজন। এবার (ফিফার) নিষেধাজ্ঞার কারণে সাফে নেই পাকিস্তান এবং করোনার কারণে সরে দাঁড়িয়েছে ভুটান। টুর্নামেন্টের ত্রয়োদশ সংস্করণে বাংলাদেশ ও স্বাগতিক মালদ্বীপ ছাড়া খেলবে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। পাঁচ দল লড়বে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে এবং টেবিলের সেরা দুই দল ১৬ অক্টোবর মুখোমুখি হবে শিরোপা লড়াইয়ে। এটাকেই সুযোগ হিসেবে দেখছেন জামালদের নতুন গুরু। সেসঙ্গে বাস্তবতাও মানছেন ব্রুজন, ‘এটা বাস্তবতা যে টুর্নামেন্টে আমার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন র‌্যাঙ্কিংধারী দল হিসেবে খেলব। শ্রীলঙ্কা সবার পেছনে, এরপর আমরা। আমাদের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কাকে হারানো সম্ভব। নেপাল ও মালদ্বীপ বাংলাদেশের ফুটবলের সমকক্ষ, যদিও র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা এগিয়ে। এই দুই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিততেও পারে, ড্রও করতে পারে আবার হারতেও পারে।’ সাফে সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে কোনো কথা বলেননি ব্রুজন। তবে কথা বলেছেন কিংসলেকে পাওয়া না পাওয়া প্রসঙ্গে, ‘কিংসলে খেললে একজন নম্বর নাইন পাওয়া যায়। তবে সে না খেলতে পারলেও আমার বিকল্প ভাবনা রয়েছে।’ এক খেলোয়াড়কে নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর পক্ষেও নন তিনি। আপাতত ফেডারেশনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চান বাংলাদেশ কোচ, ‘বাফুফে ও কিংস উভয়ের সঙ্গে আমার দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। বাফুফে ফলাফলে পরিবর্তন চায়। আমি পরিবর্তন এবং নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাকে এই সুযোগ দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা কিংস ও বাফুফে- উভয়কে ধন্যবাদ জানাই।’ নতুন কোচকে নিয়ে আশাবাদী বাফুফের সহসভাপতি এবং জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদও। ব্রুজনকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মঞ্চে তিনি বলেছেন, ‘তিনি একদম নতুন কোচ নন। বাংলাদেশেই রয়েছেন তিন বছরের বেশি সময় ধরে। (সাফে প্রাথমিক) দলের অধিকাংশ বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়। বাকি যারা রয়েছে তাদেরকেও তিনি ভালোভাবেই চেনেন। তার কাছে আমার প্রত্যাশা ফিফটি-ফিফটি। আশা করছি, তার অভিজ্ঞতা, মনোবাসনা দিয়ে ম্যাচগুলোতে ফলাফল আমাদের পক্ষে আনবে।’ সাফের উদ্বোধনী দিনেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে ২৮ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়ার কথা রয়েছে জামালদের। তার আগে আজ থেকে নতুন কোচের অধীনে হোম কন্ডিশনে অনুশীলন শুরু করবেন তারা। এই প্রস্তুতি শেষে এবং যাত্রার আগে চূড়ান্ত দল সাজাবেন ব্রুজন। শোনা যাচ্ছে, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কিংসলেকে পেতে শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তিনি। প্রাথমিক দল- গোলরক্ষক : আনিসুর রহমান জিকো, শহিদুল আলম সোহেল, আশরাফুল ইসলাম রানা। ডিফেন্ডার : তপু বর্মণ, টুটুল হোসেন বাদশা, রিয়াদুল হাসান রাফি, ইয়াসিন আরাফাত, রেজাউল করিম, কাজী তারিক রায়হান, রহমত মিয়া, বিশ্বনাথ ঘোষ, আতিকুজ্জামান, মেহেদী হাসান, মো. হৃদয়। মিডফিল্ডার : জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, মাসুক মিয়া জনি, সাদ উদ্দিন, আতিকুর রহমান ফাহাদ, জুয়েল রানা, রাকিব হোসেন, মানিক মোল্লা। ফরোয়ার্ড : মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মাহবুবুর রহমান সুফিল, এলিটা কিংসলে, মতিন মিয়া, বিপলু আহমেদ ও সুমন রেজা।
Link copied!