এমন ফলের আশা কি বাংলাদেশের পাঁড় সমর্থকও করতে পেরেছিলেন?
প্রায় নিশ্চিত হার থেকে ৫০ পেরোনো শেষ উইকেট জুটিতে ভারতকে ১ উইকেটে হারিয়ে দেয়া - মিরপুরে আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়টাকে অবিশ্বাস্যই বলতে হয়! যে জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ (৩৯ বলে ৩৮) ও মোস্তাফিজুর রহমান (১১ বলে ১০)।
নিজেদের শক্তির জায়গা বল হাতে নয়, ব্যাটে। ভারতের দেয়া ১৮৭ রানের ছোট লক্ষ্যে বাংলাদেশের নামকরা ব্যাটসম্যানরা যখন ধুঁকছিলেন, তখন কী সাবলীল ব্যাটিংয়ে জয় এনে দিলেন মিরাজ-মোস্তাফিজ! অথচ ৪ উইকেটে ১২৮ থেকে ৯ উইকেটে ১৩৬-এ পরিণত হওয়া বাংলাদেশের হারই যেন একটা পর্যায়ে ছিল এ ম্যাচের একমাত্র সম্ভাবনা। সেখান থেকে মিরাজ-মোস্তাফিজের অবিশ্বাস্য দশম উইকেট জুটি।
৫১ রান এসেছে জুটিতে, ঠিক রেকর্ড না হলেও এমন জুটি কতটা বিরল তার প্রমাণ দিতে পারে ছোট্ট একটা তথ্য – ১ উইকেটে জয়ের পথে কোনো দলের দশম উইকেটে অর্ধশতকের চতুর্থ উদাহরণ এটি, বাংলাদেশের প্রথম। সমীকরণে হাতে থাকা বলের চেয়ে প্রয়োজনীয় রান অনেক কম থাকায় স্ট্রাইকরেট নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু ছিল না, তবু জুটিতে রান যে এসেছে একশ-র বেশি স্ট্রাইকরেটে (৪১ বলে), সেটিও কম চমকের কী!
ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে দলীয় ০ রানেই বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৬ রানে পতন দ্বিতীয় উইকেটের, আউট এনামুল হক বিজয়। এরপর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুজনে মিলে গড়েন ৪৮ রানের জুটি। তবে ৭৪ রানে লিটন (৪১) ও ৯৫ রানে সাকিব (২৯) ফিরলে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশ দলের।
এরপর ‘স্লো ব্যাটিং’য়ে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি। বরং ‘সহমরণে’ দলকে বিপদেই ফেলে গেছেন দুজন! শার্দুলের করা ৩৫তম ওভারের শেষ বলে মাহমুদউল্লাহ (৩৫ বলে ১৪) ফিরলেন এলবিডব্লু হয়ে, তার পরের ওভারের প্রথম বলেই সিরাজের বল স্টাম্পে টেনে এনে ফিরলেন মুশফিক (৪৫ বলে ১৮)।
ধসের তখনো শেষ হয়নি। স্কোরকার্ডে বাংলাদেশের নামের পাশে আর ৮ রান যোগ হতেই ফেরেন আফিফ হোসেন (৬), তার পথ ধরে ড্রেসিংরুমে এবাদত হোসেন ও হাসান মাহমুদও। ৯ উইকেট যখন শেষ, লক্ষ্য থেকে তখনো ৫০ রান দূরে বাংলাদেশ! শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর রহমান যখন নামছেন, নন-স্ট্রাইক প্রান্তে মিরাজ ৯ বলে ১ রান নিয়ে অপরাজিত। এ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা আছে – এমন ধারণা কার-ইবা থাকতে পারে তখন!
বেশিরভাগ বাংলাদেশিরই ছিল না। কিন্তু তখন কে জানত, মোস্তাফিজও এমন ‘ব্যাটসম্যান’ বনে যাবেন আর তাকে নিয়ে মিরাজ এমন দারুণ ব্যাটিং করবেন!
ওই জুটির আগে ১১৪ বলে কোনো বাউন্ডারি পাননি বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান, শেষ উইকেটে এসেছে ৬টি চার ও ২ ছক্কা। মিরাজের দুটি ছক্কার বাইরে বাংলাদেশের ইনিংসে ছক্কাই নেই।
২৩তম ওভারে শাহবাজের বলে সাকিবের দুই বাউন্ডারি থেকে শুরু করে ৪২তম ওভারের পঞ্চম বলে মোস্তাফিজের বাউণ্ডারির মধ্যে বাংলাদেশ ইনিংসে চার বলতে শুধু ছিল ৩৪তম ওভারের পঞ্চম বলে ‘বাই’ একটা চার! উইকেটে এসে দ্বিতীয় বলে মোস্তাফিজের চারে সে ‘খরা’ ঘুচেছে। মোস্তাফিজ চার মেরেছেন আরও একটি, মিরাজের ব্যাটে ৪টি চারের সাথে ২টি ছক্কা।
এর আগে ভারতের ইনিংসে বাংলাদেশের গল্পটা লিখেছেন সাকিব আল হাসান। ৩৬ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। পাশাপাশি ৪৭ রানে ৪ উইকেট এবাদত হোসেনের। এ দুজনের দাপটে প্রথমে ব্যাট করে ৪১.২ ওভারে ১৮৬ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত।
৪৯ রানের মধ্যেই হারিয়ে বসে ভারত হারিয়ে বসে ৩ উইকেট। দলের ২৩ রানে শিখর ধাওয়ান ফিরে যাওয়ার পর ৪৮ ও ৪৯ রানে বিদায় নেন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের দুই মহীরুহ রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ৪৩ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন চার ও পাঁচে নামা শ্রেয়াস আয়ার ও লোকেশ রাহুল। ৯২ রানে বিদায় নেন আয়ার।
তবে একপ্রান্তে রানের চাকা সচল রেখে ভারতকে এগিয়ে নিতে থাকেন লোকেশ রাহুল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ওয়াশিংটন সুন্দর (১৯)। তবে ১৫২ থেকে ১৮৬; এই ৩৪ রান তুলতেই শেষ ৬ উইকেট হারায় ভারত। ২০১১ বিশ্বকাপের পরে এত কম রানে ৬ উইকেট ভারত আর একবারই হারিয়েছে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৩ রান আসে রাহুলের ব্যাট থেকে।