শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভুলভাল লেখা ঠিক করে দিয়ে তারা এখন বিলিয়নিয়ার!

প্রকাশিত: ১২:১৪ এএম, নভেম্বর ২৬, ২০২১

ভুলভাল লেখা ঠিক করে দিয়ে তারা এখন বিলিয়নিয়ার!

আপনার শিক্ষকরা হয়তো আপনাকে বলেছেন ব্যাকরণ শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; তবে এটি যে আপনাকে বিলিয়নিয়ার বানিয়ে দিতে পারে, তা কি কখনও বলেছিলেন তারা?২০০৯ সালে প্রোগ্রামার ডিমিট্রো লিডারের সহায়তায় ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত দুই উদ্যোক্তা ম্যাক্স লিটভিন ও অ্যালেক্স শেভচেঙ্কো প্রতিষ্ঠা করেন ইংরেজি লেখার ব্যাকরণগত ভুল সংশোধনের অ্যাপ্লিকেশন 'গ্রামারলি'। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে গ্রামারলিতে আরও ২০০ মিলিয়ন বিনিয়োগের ঘোষণার পর,প্রতিষ্ঠানটির মোট মূলধনের পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ১৩ বিলিয়ন ডলারে। সেইসঙ্গে,প্রতিষ্ঠাতাদের দুইজনের প্রত্যেকেই এখন আলাদাভাবে অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলারের মালিক।পিচবুকের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ ও ২০২১ সালে, অর্থাৎ চলতি বছরে কোম্পানিটিতে দুই দফা বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। এসময়ের বিনিয়োগকারীরা গ্রামারলির ২২ শতাংশের মালিক। এছাড়া, তৃতীয় সহ-প্রতিষ্ঠাতা লিডার কোম্পানির কেবল ১ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী। অন্যদিকে,প্রধান দুই প্রতিষ্ঠাতা লিটভিন ও শেভচেঙ্কো প্রত্যেকে আনুমানিক ৩৫ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, এই ৩৫ শতাংশ শেয়ারের মূল্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। কোম্পানির সঙ্গে জড়িত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এইসব তথ্য সংগ্রহ করেছে ফোর্বস।তবে,ফোর্বসের এই হিসাবকে গ্রামারলি অস্বীকৃতি জানালেও,প্রতিষ্ঠাতাদের ভিন্ন মূল্যায়নের পক্ষে কোনো প্রমাণাদি প্রকাশ করেনি।কোম্পানির যোগাযোগ প্রধান সেনকা হাদজিমুরাটোভিচ এক ই-মেইলে জানিয়েছেন,গ্রামারলি একটি প্রাইভেট কোম্পানি; তাই এটি কোম্পানির মালিকানা বন্টন বা কোনো ধরনের পরিসংখ্যান জনসম্মুখে প্রকাশ করবে না।" সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান প্রায় এক দশক আগে 'সেন্টেন্সওয়ার্কস' নামে চালু হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে দ্রæতই এ নাম পরিবর্তন করে ফেলা হয়। সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক এই এপ্লিকেশন সফটওয়্যার তৈরির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল, শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণ ও বানান সংক্রান্ত ব্যাপারে সহায়তা করা। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়াও আরও কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম, যেমন- ই-মেইল, মেসেজিং, নথিপত্র সহ আরও অনেক কিছুর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে গ্রামারলি। কর্পোরেট ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবন করেছে 'গ্রামারলি ফর বিজনেস',যা জুম, সিসকো, ডেল ও এক্সপিডিয়ার মতো নামীদামী কোম্পানিগুলোও ব্যবহার করে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে ব্যবহারকারীদের জন্য ফ্রিমিয়াম মডেলের অধীনে গ্রামারলির মূল পণ্যটি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে, এখানে সফটওয়্যারটির আপগ্রেড ভার্শন বা উন্নত সংস্করণ কিনে নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিজের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী প্রতি মাসে আপনাকে গুণতে হতে পারে ১২ থেকে ৩০ ডলার। ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে গ্রামারলির সিইও ব্র্যাড হুভার বলেন,"এটি আমাদের জন্য একটি 'টার্নিং পয়েন্ট' ছিল।বর্তমানে কোম্পানিটি বিভিন্ন ই-মেইল অ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অসংখ্য ওয়েব ব্রাউজার ও মাইক্রোসফট ওয়ার্ডসহ অন্তত ৫ লাখ অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত। আর এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের কাছে তার পরিষেবাগুলো পৌঁছে দিচ্ছে গ্রামারলি। লিটভিন ও শেভচেঙ্কোর যৌথ উদ্যোগের একমাত্র কোম্পানি নয় গ্রামারলি। ইউক্রেনের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় প্রথমে 'মাইড্রপবক্স'-এর ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তারা। চলতি বছরের মার্চে এক বøগ পোস্টে লিটভিন লিখেছিলেন, "শিক্ষার্থীদের অন্যের লেখা চুরির হাত থেকে দূরে রাখতেই আমরা এটি (গ্রামারলি) তৈরি করেছি।""তবে এটি আমাদের একটি জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল। কেন মানুষ প্রথমে লেখা চুরির পথই বেছে নেয়? তারা নিজের ভাষায় যা বলতে চায়, তা ঠিকভাবে বোঝাতে তাদের কি অসুবিধা হচ্ছিল? এটিই কি মূল কারণ?" তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মহৎ মনে হতে পারে। তবে, তাদের ব্যবসায়িক যাত্রার শুরুর দিকে লিটভিন ও শেভচেঙ্কোর উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছিল। শিক্ষার্থীরা অন্যের লেখা চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দিচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষকদের সাহায্য করতে লিটভিন ও শেভচেঙ্কো একদম শুরুতে (মাইড্রপবক্সের ধারণারও আগে) দুটি অনলাইন পরিষেবা চালু করেছিলেন। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাদের ওই দুই অনলাইন পরিষেবা (ওয়েবসাইট) শিক্ষার্থীদের কাছে টার্ম পেপার বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে, এমন অভিযোগ কোম্পানির দুই মালিকই সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেন।২০০২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শেভচেঙ্কো বলেছিলেন, "আমাদের পরিষেবাতে আপলোড করা কোনো কাগজপত্র আমরা কখনই বিক্রি করিনি।"এরপর এমবিএ করতে লিটভিন চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে ও শেভচেঙ্কো কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ধীরে ধীরে মানুষ তাদের সেই টার্ম পেপার বিক্রির কেলেঙ্কারিও ভুলে যেতে থাকে। ধারণা করা হয়, তাদের একজন বা দুজনেই এখন ভ্যাঙ্কুভারে বসবাস করছেন; তবে, তারা দুজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কানাডায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। সান ফ্রান্সিসকো, ভ্যাঙ্কুভার ও ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে গ্রামারলির অফিস রয়েছে। সাম্প্রতিক বিনিয়োগের আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে, বিনিযয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছিল গ্রামারলি। গ্রামারলির সিইও একটি বøগ পোস্টে উল্লেখ করেছেন, নতুন এই বিনিয়োগ ব্যালি গিফোর্ড ও ব্ল্যাকরক সহ বেশ কয়েকজন নতুন বিনিযয়োগকারীকে কোম্পানির মালিকানার তালিকায় যুক্ত করেছে। সূত্র: ফোর্বস  
Link copied!