বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভয়ংকর এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৭:০৫ এএম, মে ১, ২০২১

ভয়ংকর এপ্রিল

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির সব সূচকেই এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে এপ্রিল মাসে। অর্থাৎ এই এপ্রিল মাসে যেমন সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে, তেমনই হয়েছে সর্বোচ্চ শনাক্ত। গত এক মাসে দেশে করোনায় মারা গেছে দুই হাজার ৩৪৫ জন, যা মোট মৃত্যুর ২০ শতাংশ। এ সময়ে শনাক্ত হয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার ১৯৪ জন নতুন রোগী, যা মোট আক্রান্তের ২৮ শতাংশ। শুধু মাসের হিসাবেই নয়, সপ্তাহের হিসাবেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে এপ্রিলের একাধিক সপ্তাহ। গত ৫-১১ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার ৩৯২ জন শনাক্ত হয়েছে, যা সপ্তাহের হিসাবে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বাধিক সংখ্যা। অন্যদিকে মৃত্যুর সূচকে সর্বোচ্চ ৬৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে ১৯-২৫ এপ্রিল। দৈনিক হিসাবেও এই এপ্রিলেই সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত ৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ১৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১১২ জন মারা গেছে। এই তথ্য বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি পরবর্তী সময়ে এর চেয়েও তীব্র সংক্রমণ দেশে না ঘটে তবে এই এপ্রিল মাসই হবে বাংলাদেশে করোনার ভয়ংকর মাস। গত বছর যেমন আক্রান্তের ক্ষেত্রে জুন-জুলাই এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল, সেটা চাপা পড়ে গেছে গতকাল শুক্রবার শেষ হওয়া এপ্রিল মাসজুড়ে। অন্যদিকে দেশে এ পর্যন্ত নিশ্চিত করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশই ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই ৬১.৩ শতাংশ। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রামে ১২.৪ শতাংশ। মৃত্যুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৮.৪ শতাংশ হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সর্বোচ্চ ৩৪.৭ শতাংশ। এর পরই চট্টগ্রামে ১৮.১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ১৭৭ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১০.৩৪ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়ার ৫৭ জনের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ২৫ জন নারী। বয়স বিবেচনায় ২১-৩০ বছরের মধ্যে একজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে একজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ৩৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩ জন, রাজশাহী বিভাগের দুজন, খুলনা বিভাগের পাঁচজন, বরিশাল বিভাগের দুজন, সিলেট বিভাগের পাঁচজন ও রংপুর বিভাগের দুজন। সরকারি হাসপাতালে ৩৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১৮ জন মারা গেছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর দেয় সরকার। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। ওই মাসের শেষের দিকে সরকার জরুরি সেবা ছাড়া সব বন্ধ রেখে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর পরও মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এর পর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে। গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মাঝে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নিম্নমুখী ছিল। চলতি বছরের মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
Link copied!