বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানি লন্ডারিং প্রমাণ না হলে সাজা ৭ বছর

প্রকাশিত: ১১:৩৫ এএম, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১

মানি লন্ডারিং প্রমাণ না হলে সাজা ৭ বছর

আইনি প্রক্রিয়ায় ৪২০ ধারা ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। মানি লন্ডারিং প্রমাণিত না হলে রাসেল ও তার স্ত্রীর সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সাত বছরের জেল। আইন বিশেষজ্ঞরা এমন মতামত দিয়েছেন। অন্যদিকে কয়েক হাজার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক অপেক্ষায় আছেন তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে ছোটাছুটি করছেন। গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন ইভ্যালি তাদের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে তেমন টাকা নেই। তবে ই-কমার্স সংগঠনের নেতারা গ্রাহকদের নিরাস না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ইভ্যালির প্রতারিত গ্রাহকদের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এ সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নতুন করে কোনো গ্রাহক অভিযোগ দিলে সেটিও আমলে নিয়ে কাজ করবে। তবে বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় স্বপ্রণোদিত হয়ে এ সংস্থা কোনো কাজ করতে পারছে না। জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ৪২০ ধারায় মামলা হয়েছে ইভ্যালির সিইওর বিরুদ্ধে। তবে এখনো অনেক গ্রাহক পাওনাদার। তারা টাকা না পেলে নিঃস্ব হয়ে যাবে। এজন্য আদালতের বিবেচনায় আনতে টাকা ফেরত চেয়ে গ্রাহকরা আবেদন করতে পারেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে রাসেল ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বেশ কিছুদিন ধরেই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশও করেছেন গ্রাহকরা। তাদের গ্রেফতারের পর সবার সামনে বড় প্রশ্ন-ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনার কী হবে। আইনগতভাবে তারা অর্থ পাবে কিনা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এর আগে ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপে-টুসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন লাখ লাখ গ্রাহক। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সাজাও খাটছেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ভাগ্যে পাওনা টাকা জোটেনি। একই পথে যাত্রা শুরু করেছে ইভ্যালি। এখন প্রশ্ন তাহলে কি একই পরিণতি হবে ইভ্যালির গ্রাহকদেরও। দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, তাদের বিরুদ্ধে যে ৪২০ ধারা মামলা করা হয়েছে সেটি প্রমাণ করা অনেক কঠিন হবে। তাহলে এখন কী হবে। যদি ৪২০ ধারা প্রমাণ করতে হয় তবে দেখাতে হবে সে গ্রাহকদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু ইভ্যালির পক্ষ থেকে গ্রাহকদের অফার দিয়েছে। অফারটি কমপ্লাই হয়নি। এরপর আসবে আইনের প্রশ্ন। কিন্তু এ ধরনের আইন তো নেই। আছে একটি নীতিমালা। নীতিমালা হচ্ছে একটি গাইডিং ফোর্স। তিনি আরও বলেন, সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে অনেক নজির আছে নীতিমালা দিয়ে এসব অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না। এদিকে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে অনেক গ্রাহক এখন মনে করছেন রাসেল জেলে ঢুকে গেলে তাকে ধরার সুযোগ পাবে না। মোহাম্মদপুরের গ্রাহক জুয়েল মনে করছেন এই গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ইভ্যালির সিইও রাসেল এক প্রকার বেঁচেই গেল। মানুষের যে দায় সেটি এড়িয়ে যেতে পারবে। তিনি বলার সুযোগ পাবেন যে, তাকে গ্রেফতার করায় মানুষের পণ্যগুলো দিতে পারেনি। অপর এক গ্রাহক বলেন, রাসেল ও তার স্ত্রী আমাদের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এখন ইভ্যালির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হোক। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনার পাশাপাশি প্রতারণা ও টাকা পাচারের অপরাধে তাদের কঠোর সাজা দিতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বের করা সম্ভব যে ইভ্যালি বিদেশে টাকা পাচার করেছে। সেক্ষেত্রে রাসেল এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং প্রতারণা উভয় আইনে কঠোর সাজা দেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত এসে গ্রাহকের দায় পরিশোধ করাও সহজ হবে। কিন্তু কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে মানি লন্ডারিং প্রমাণ করা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে প্রতারণার দায়ে তাদের সাজা হবে। ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, যেহেতু বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় চলে গেছে, তাই এখন ধৈর্য ধরা ছাড়া বিকল্প কোনো পন্থা দেখি না। আর সব সময় সব কেইস একই ধরনের না-ও হতে পারে। আমি আশা করছি, এখানে একটা সুষ্ঠু সমাধান হবে। জানা গেছে, করোনাকালীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের একটি বড় জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এর সম্প্রসারণ হচ্ছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। গড়ে উঠছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সম্প্রতি ইভ্যালির এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি হবে। এদিকে আইনজীবী এসএম ফেরদৌস আলম জানান, দেশে প্রতিযোগিতা আইন রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি যখন ৪০ শতাংশ ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে ওই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। ব্যবসা-বাণিজ্য জগতে ই-কমার্স শুরু হয়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে এ আইনটি প্রয়োগ করা উচিত। জানা গেছে, ইভ্যালির লোগো ব্যবহার করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি অনেক কর্মসূচি পরিচালনা হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের আইনি ক্ষমতাগুলো খতিয়ে দেখা হয়নি। ক্রিকেট ম্যাচ, খেলাধুলা, রাস্তাসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ডে এই প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড দেখা গেছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে এক ধরনের ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আইনগত এসব প্রতিষ্ঠান তা করতে পারে কিনা সেটি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো খতিয়ে দেখেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিযোগী কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ইভ্যালি ২০২০ সালে ধামাক্কা অফার দিয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। কিন্তু প্রতিযোগী আইনে এটি দিতে পারে না। এ ব্যাপারে প্রতিযোগী কমিশন আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ওই বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছে। এরপরও ক্রেতারা আমাদের কর্মকাণ্ড দেখেও সেখানে গিয়ে পণ্য কেনাকাটা করেছেন।
Link copied!