বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘মারছি তাতে কী হইছে’, শিক্ষককে পেটানোর পর জিতু

প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, জুন ২৯, ২০২২

‘মারছি তাতে কী হইছে’, শিক্ষককে পেটানোর পর জিতু

ডেইলি খবর ডেস্ক: শিক্ষককে বেদম প্রহার করার পর মাস্তান জিতুর বক্তব্য হচ্ছে-‘মারছি তাতে কী হইছে’।উগ্র মেজাজি মাস্তান জিতু (১৯) ৮ বছর থেকেই এলাকায় বেয়াদব ও বখাটে হিসেবেই পরিচিত। স্থানীয় মাস্তান বাবার সন্তান হওয়ায় কাউকেই পাত্তা না দিয়ে বেপরোয়া চলাচল ছিল তাঁর। এলাকায় আবার ‘জিতু দাদা’ হিসেবেও পরিচিত। এই নামে রয়েছে তাঁর ফেসবুক আইডিও। এলাকাবাসীর প্রশ্ন র‌্যাবের জালে শিক্ষক হত্যাকারী এই জিতু মাস্তান এখনো আটকাচ্ছে না কেনো? এলাকায় অভিযোগ রয়েছে,হামলার দিন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজী এসেই উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সকলকে শাসিয়ে যান। জিতু একা এই হামলায় অংশ নিয়েছেন তা তিনি বিশ্বাস করতে চাননি। তাঁর ছেলের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বলে বিদ্যালয়ের গরম দেখিয়ে যান জিতুর বাবা। গত মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জিতুর বাবার শাসানোর কথা জানায় এক শিক্ষার্থী। এদিন আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। প্রতিষ্ঠানের দ্বাররক্ষী আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই হাজির হন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজী। এসেই তিনি ঘটনার বিষয় জানতে চান উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে। ঘটনা শোনার পর অনেকটা ধমকের সুরেই তিনি বলেন,‘আমার ছেলে এভাবে এত লোকের সামনে মারল,এটা কী বিশ্বাস করা যায়! তাঁর কণ্ঠে কোনো নমনীয়তা ছিল না।সাভারে শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স ১৯ বছর, মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক সাভারে শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স ১৯ বছর, মামলায় অপ্রাপ্তবয়স্ক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলে,‘ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শফিক স্যার জিতুকে পেছন থেকে জাপটে ধরে ফেলেন। জিতু তখন ছোটার জন্য হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছিল। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ওই শিক্ষকের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করে জিতু। পরে শফিক স্যার জিতুকে ছেড়ে দিয়ে আহত উৎপল স্যারকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আরও ৫-৭ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল জিতু। পরে কয়েকজন ছাত্রী জিতুর এ কান্ডের প্রতিবাদ করলে, জিতু তাদের বলে,“মারছি তাতে কী হইছে”! পরে পেছনের গেট দিয়ে জিতু বের হয়ে যায়। এর মধ্যে জিতুর বাবা স্কুলে এসে কোনো সমবেদনা না জানিয়ে উল্টো শাসিয়ে চলে যায়।ওই শিক্ষার্থী আরও বলে, ‘আমরা শুনেছি, ঘটনার দিন সন্ধ্যাবেলা জিতু এইদিক দিয়েই কিছু ছেলেপেলে সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছে, আড্ডা দিয়েছে। ওই দিন রাতেও সে এলাকায় ছিল। যদি পালিয়েই থাকে তাও হয়তো পরের দিন। এর আগেও ইভটিজিং, চুল বড় রাখা, বেয়াদবিসহ বেশ কিছু ঘটনার বিচার জিতুর বিরুদ্ধে এসেছে। সে সময় উৎপল স্যার এ সমস্ত ঘটনায় তাকে শাসন করেছেন।’ছাত্রের মারধরে আইসিইউতে থাকা সেই শিক্ষকের মৃত্যুছাত্রের মারধরে আইসিইউতে থাকা সেই শিক্ষকের মৃত্যু জিতুর মা টাকা দিয়ে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন,‘আমি হাসপাতালে ছিলাম। আইসিইউতে উৎপল কুমারকে দেখে বের হওয়ার সময় বোরকা পরা এক নারী এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেন,‘স্যারের অবস্থা কী?’’ আমি বললাম, ভালো না। তিনি আবার আমার পিছ পিছ এসে আমাকে বলেন,‘চিকিৎসা যা করার করেন,আমরা দেখব।’তখন আমি বলি, আপনি কে? তিনি বলেন, তিনি জিতুর মা। সঙ্গে আরেকজন বয়স্ক নারী ছিলেন, তিনি জিতুর দাদি। পরে শুনেছি,ওই সময় জিতুর বাবাও হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা হয়নি। তাঁদের কোনো কথা না শুনে আমি চলে এসেছি।’উল্লেখ্য,গত শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন একই প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার ভোরে শিক্ষক উৎপল কুমার মারা যান। ঘটনার পর থেকে জিতু পলাতক।
Link copied!