বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

মুখ খুলছেন ছাত্রলীগের সাঈদী

প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, মে ২২, ২০২২

মুখ খুলছেন ছাত্রলীগের সাঈদী

যেকোনো ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। আর দলবল নিয়ে তাকে ছিনিয়ে আনতে গিয়ে গ্রেফতার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদ। বর্তমানে জোবায়ের জামিনে থাকলেও রিমান্ডে রয়েছেন সাঈদী। শনিবার ছিল রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিন। এ ঘটনায় র‌্যাবের দায়ের করা মামলাটি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সবুজবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করলেও গোয়েন্দা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য বিভাগগুলোও ছায়াতদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেফতার সাঈদীর কাছে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে। তাকে শেল্টার দেওয়া এবং তার অপকর্মের সহযোগীদের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতনদের জানাবেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তার ঊর্ধ্বতনরা। সাঈদী কোন স্পট থেকে কত টাকা চাঁদা পেত। তার কাছ থেকে কে কত টাকা কমিশন নিত। সে অস্ত্র পেল কোথায়। মাদক বাণিজ্যের সঙ্গে সাঈদী ও তার সিন্ডিকেটের যোগসাজশসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য : খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে ছাত্রলীগ নেতার চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমার নামে চাঁদাবাজি করবে কেন? আমার নামে যে বা যারা চাঁদাবাজি করবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না, অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আইনের চোখে সবাই সমান। যে অপরাধ করবে তাকেই শাস্তি পেতে হবে। যে আমার নামে চাঁদাবাজি করতে গিয়েছিল তাকে ধরা হয়েছে, তার কাছে একটি অস্ত্র পাওয়া গেছে। কেবল সে নয়, যেকোনো চাঁদাবাজকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ মামলার অন্য আসামিদের খোঁজ নেই : ছাত্রলীগ নেতা জোবায়ের আহাম্মেদ ও দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছাড়াও গত ১৯ মে দায়ের করা মামলার এজাহারে মো. কাউছার, সাইফুল ইসলাম রিফাত, মো. সাগর, মো. মাহমুদসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১২৫-১৫০ জন আসামি রয়েছে। এর মধ্যে সাঈদী রিমান্ডে, জোবায়ের রয়েছেন জামিনে। অন্য আসামিদের কোনো খোঁজ নেই। যা বললেন ডিসি ও ওসি : মামলা তদন্তের অগ্রগতি ও পলাতক আসামিদের বিষয়ে শনিবার বিকালে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল আহাদ এবং সবুজবাগ থানার ওসি মোরাদুল ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা। ডিসি আবদুল আহাদ সময়ের আলোকে বলেন, ‘এই ইস্যুতে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না। অন্য কোনো ইস্যু থাকলে কথা বলব।’ ওসি মোরাদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো ফলোআপ নেই। সবই জানেন, আপনিও জানেন, আমিও জানি। তাই ফলোআপ দেওয়ার কিছুই নেই। একটাই বলব, সে (সাঈদী) রিমান্ডে আছে, আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ গত ১৯ মে সন্ধ্যায় র‌্যাব-৩-এর ব্যাটালিয়ান অফিস থেকে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কিছু লোক চাঁদাবাজি করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩-এর গোয়েন্দা দল অনুসন্ধানে নেমে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পায়। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে মাদারটেক সবুজবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে তার কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি এবং ৫৭৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সাঈদী। এ ছাড়া সে তার সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। গ্রেফতার সাঈদীকে নিয়ে র‌্যাবের আভিযানিক দল রাস্তায় বের হলে মো. জোবায়ের আহাম্মেদের (২৯) নেতৃত্বে শতাধিক লোক সাঈদীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা র‌্যাবের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ করে। তখন র‌্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে ও সরকারি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে আক্রমণকারীদের নেতৃত্বে থাকা মো. জোবায়ের আহাম্মেদকে সবুজবাগের উত্তর মাদারটেক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আক্রমণকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় জনতার আক্রমণে র‌্যাবের ২ জন সদস্য আহত হন। আহত র‌্যাব সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
Link copied!