শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যত ক্ষতি করছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

যত ক্ষতি করছে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বনজ সম্পদ ছাড়াও পরিবেশ ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করেছে। এ ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে প্রায় ২ হাজার কোটির বেশি হবে বলে বন অধিদফতরের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে এ তথ্য উপস্থাপন করবেন। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকার কী ভূমিকা পালন করেছে সেটাও তুলে ধরেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাদের জন্য সরকারের ব্যয় ও কী পরিমাণ ক্ষতির শিকার হয়েছে বাংলাদেশ তা উল্লেখ করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। এদিকে বন অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বসতি স্থাপনের জন্য ৩ হাজার একর ভূমিতে ক্যাম্প স্থাপন করে। তবে এর চেয়ে বেশি বনভূমি ব্যবহার হচ্ছে। এর পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ১৬৪ একর। এখানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বনাঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। এই বসতি স্থাপনের ফলে সামাজিক বনায়নের ২ হাজার ২৭ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। এর পাশাপাশি ৪ হাজার ১৩৬ একর প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে গেছে।   খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার নিজ অর্থে ২ লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি অস্থায়ী সেন্টার, ৮ হাজার ৯২৫টি নলকূপ, ৫৭ হাজার ৩৬৩টি ল্যাট্রিন, ১৮ হাজার ৫২২টি গোসলখানা, ২০টি অস্থায়ী গুদাম, ২০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন, ৫৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে। এ ছাড়াও ৭৯ কিলোমিটার খাল সংস্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে ১৪৫ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেষ্টনী নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে বাকি কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ঘরবাড়ি তৈরি করার জন্য বনাঞ্চল থেকে ব্যাপক হারে কাঠ ও বাঁশ সংগ্রহ করেছে। পাহাড় কেটে মাটি সমান করে ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। কক্সবাজারের পাহাড়গুলোর মাটির দৃঢ়তা খুবই কম। যে কারণে একটানা বৃষ্টি হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এর আগে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে কক্সবাজারে জানমালের ক্ষতি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি স্থাপনের ফলে এশিয়ান হাতির আবাসস্থল ও বিচরণক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে হাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। হাতির আক্রমণে এ পর্যন্ত ১২ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা প্রতিদিন সরকারি বনাঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করছে। জ্বালানির জন্য বন বিভাগের বাগান থেকে গাছ কাটছে। শুধু তাই নয়, গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে শিকড় উঠিয়ে ফেলছে। বন বিভাগ আশঙ্কা করছে, এভাবে যদি আরও কিছুদিন চলে তাহলে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বনাঞ্চল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিভিন্ন সংস্থা ইতোমধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ৬০০ পরিবারকে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপিজি সরবরাহ করে। তবে কিছু কিছু স্থানে বায়োগ্যাস প্রকল্প স্থাপন করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের ৬ হাজার ১৬৪ একর সংরক্ষিত বনভূমিতে বসতি স্থাপন এবং ১ হাজার ৯৩৭ একর বনাঞ্চল থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের কারণে এ পর্যন্ত বনজ সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৪২০ কোটি ৬৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তবে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ কমিটি করেছে। কমিটি শিগগিরই তাদের রিপোর্ট দেবে বলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত সহিংসতার কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। এর কয়েক দিন পর জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনডিপি সরেজমিন বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের ভিত্তিতে তারা সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের সমস্যা ছাড়াও আগামী দিনের করণীয় সম্পর্কে বেশ কিছু সুপারিশ করে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী সরকার কার্যক্রম চালিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. সাহাবুদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যা ক্ষতি করেছে তা অপূরণীয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় তারা বেশ ভালোভাবে বসবাস করছে। তিনি কখনও চাননি তারা কষ্ট পাক। তার মানবিকতার গুণে রোহিঙ্গাদের জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে আলাদাভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কতদিন চলবে? এভাবে চলতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি তাদের জন্য স্থায়ী একটি সমাধান করতে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরবেন। এমনকি অধিবেশনের বাইরেও বিশে^র অন্যান্য নেতার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবেন।
Link copied!