বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় সমস্যা সমাধান করুন: শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ডিসেম্বর ৭, ২০২২

যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় সমস্যা সমাধান করুন: শেখ হাসিনা

যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আজ বুধবার পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ ফ্লিট রিভিউতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সংঘাত নয়, সমঝোতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেকোনো যুদ্ধ যে মানবজাতির জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতা, বীভৎসতা আপনারা দেখছেন। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।’ বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নিকট অতীতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমরা আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত মতপার্থক্য সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সমাধান করেছি। আলোচনার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সমস্যা সমাধান করার একটা বিরল দৃষ্টান্ত আমরা স্থাপন করেছি।’ বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থানকে অগ্রাধিকার দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিকনির্দেশনায় আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে, “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। সেই নীতি মেনেই আমরা সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিকট প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক সব দেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রেখেছি।’ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য শক্তিশালী করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি এবং সৌহার্দ্য স্থাপন করা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।’ সমুদ্রের বিশাল জলরাশি সবাইকে এক করেছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে আমাদের সকল দেশ বিভক্ত হলেও বন্ধুত্বের সেতু বন্ধনে সমুদ্র উপকূলীয় সকল দেশের সঙ্গে আমরা একই সূত্রে গাঁথা। অর্থাৎ বিশাল জলরাশি আমাদের একত্রিত করেছে।’ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউয়ের প্রতিপাদ্য ‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’ এর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত ‘আইএফআর-২০২২’ ইভেন্টটি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। যা সকল সামুদ্রিক দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধিতে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ সমুদ্রের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সমসাময়িক সময়ে ভারত মহাসাগরের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয়ে থাকে সমুদ্র পথে। অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক। সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও অনুসন্ধানের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।’ সমুদ্র সম্পদ আহরণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সমুদ্র সম্পদের এই অপার সম্ভাবনা উপলব্ধি করে বাংলাদেশের সামুদ্রিক খাতের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব। সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুণগত উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন করে যাচ্ছি।’ কক্সবাজারের সৌন্দর্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোনালি বালুকাময় সৈকত। বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনার দেশ। আমি আশা করি, আইএফআর ২০২২ তে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের সমুদ্র, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা, পর্যটন ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন।’ বিশ্বের মোট ২৮টি দেশের নৌবাহিনীর প্রধান/উচ্চপদস্থ নৌ প্রতিনিধিগণ এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীসহ বিশ্বের সাতটি দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট এবং হেলিকপ্টার এই আইএফআর-এ অংশগ্রহণ করেছে। আইএফআর ২০২২ এ অংশগ্রহণকারী ২৮টি রাষ্ট্র হলো-বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, মিশর, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, প্যালেস্টাইন, সুদান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ইনানি সমুদ্র সৈকতের অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নৌবাহিনীর প্রথা অনুযায়ী ‘শিপস বেল’ বাজিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আগত বিভিন্ন দেশের নৌসদস্যগণের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াড্স কর্তৃক সমুদ্রে একটি বিশেষ মহড়া প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্মানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে দৃষ্টিনন্দন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্মৃতি অবলম্বনে নির্মিত চিত্র প্রদর্শনী ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ অবলোকন করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আইএফআর ২০২২ উপলক্ষে নির্মিত অত্যাধুনিক কজওয়ে ও জেটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একাধিক সংসদ সদস্য, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সামরিক কর্মকর্তারা।
Link copied!