শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাবির ১৭৫ জনের নিয়োগ বাতিল

প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, মে ২৪, ২০২১

রাবির ১৭৫ জনের নিয়োগ বাতিল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম আবদুস সোবহানের নিয়োগ দেওয়া বিতর্কিত ১৭৫ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ড. সোবহানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসহ ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে। রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, ৬ মে শেষ কার্যদিবসের আগের রাতে বিদায়ি ভিসি ড. সোবহান ৯ জন শিক্ষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিভিন্ন পদে ১৪১ জনকে নিয়োগ দেন। এর আগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে নিজের মেয়ে জামাতাসহ ৩৪ জন শিক্ষককে তিনি অবৈধ উপায়ে নিয়োগ দেন। এসব নিয়োগকে অবৈধ অ্যাখ্যা দিয়ে ১৭৫ জনের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। সূত্র জানায়, বিতর্কিত ৩৪ জনের নিয়োগ বাতিলের জন্য ড. সোবহানকে ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। সর্বশেষ ১৪১ জনের নিয়োগকে কেন্দ্র করে ৬ মে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একাধিক বিবদমান গ্রুপসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন বিকালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ১৪১ জনের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ইউজিসির সিনিয়র সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অবৈধ নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এ ব্যাপারে কমিটিকে সুপারিশ দিতে বলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ড. সোবহান, একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার, দুইজন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং ভিসির মেয়ে জামাতাকে বিতর্কিত নিয়োগে সরাসরি দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ ঠেকাতে তৎপর না হওয়ায় দুই প্রোভিসিকেও (উপ-উপাচার্য) দায়ী করা হয়েছে। ড. সোবহানের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশসহ নিয়োগে সরাসরি জড়িতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাড়াও আরেকটি দেশের নাগরিক ড. সোবহান। দ্বৈত নাগরিক হিসাবে তিনি যে কোনো সময় বিদেশে চলে যেতে পারেন। এ কারণে তার বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ এসেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য। জানা যায়, সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের শেষদিনে রোববার দুপুরে কমিটির সদস্যরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির প্রধান ড. আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ৮ মে তারা রাবি ক্যাম্পাস পরিদর্শন এবং বিতর্কিত নিয়োগের সব নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন। রাবির বিভিন্ন বিভাগের সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং প্রগতিশীল ও দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের সঙ্গে তারা কথাও বলেছেন। রেজিস্ট্রার প্রফেসর আব্দুস সালাম, বিদায়ি ভিসি ড. সোবহান এবং উপ-উপাচার্য ড. আনন্দ কুমার সাহা ও ড. সিএম জাকারিয়ার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। কমিটির কাছে জড়িত কর্মকর্তারা বিতর্কিত নিয়োগে জড়িত নন বলে দাবি করেন। তবে ড. সোবহান সব দায় নিজের বলে স্বীকার করেছেন। নাম প্রকাশ না করে কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে দেওয়া ৯টি সুপারিশ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে। তারা শুধু বিতর্কিত নিয়োগে জড়িতদের চিহ্নিত এবং দায়দায়িত্ব নিরুপণ করেছেন। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ি ভিসি সোবহানের মেয়ে সানজানা সোবহান ও তার জামাই শাহেদ পারভেজসহ ৩৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বিতর্কিত নিয়োগের ঘটনায় বিদায়ি ভিসি ড. সোবহানকে মূল অভিযুক্ত হিসাবে প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এসব নিয়োগে আইবিএর প্রভাষক এটিএম শাহেদ পারভেজের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়োগে স্বাক্ষরকারী সংস্থাপন শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, রেজিস্ট্রার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও পরিষদ শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদকে সহযোগী হিসাবে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিয়োগের দুইদিন আগে ৩ মে গভীর রাতে শাহেদ পারভেজের নেতৃত্বে সিনেট ভবন থেকে ১৪১ জনসহ বিভিন্ন নিয়োগ এবং সোবহানের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলা হয়। এ সময় তাকে সহায়তা করেন উপ-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম ও মামুন অর রশীদ। নিজের ভাই ও সন্তানের নিয়োগ নিশ্চিত করতে তিন কর্মকর্তা ওই নিয়োগে ড. সোবহানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। নিয়োগ তালিকা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদে ৮৫ জনের তালিকার ৮২ নম্বরে আছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর ছেলে নাহিদ পারভেজের নাম। সিনিয়র সহকারী পদের বিপরীতে নিম্নমান সহকারী হিসাবে সংস্থাপন শাখায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারিকুল আলমের ভাই রফিকুল আলম সেকশান অফিসার এবং আরেক ভাই শরিফুল আলমকে নিম্নমান সহকারী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর তালিকার ৬৮ নম্বরে থাকা সহকারী রেজিস্ট্রার মামুন অর রশীদের ভাই শেখ ফারহানুল ইসলাম পরিষদ শাখার কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পান। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষকের নামও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, শিক্ষকদের স্ত্রী, সন্তান, জামাতাসহ বিভিন্ন নিকটাত্মীয় অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সিএম জাকারিয়া নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখলেও এ নিয়োগ প্রতিরোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল বলে কমিটি মনে করে। এজন্য এসব অবৈধ নিয়োগে দায় তারাও এড়াতে পারেন না। রাবির প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের কো-কনভেনার ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা বলেন, ভিসিকে যেমন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, তেমনই উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুতরাং তারা কখনোই ভিসির আজ্ঞাবহ হিসাবে কাজ করতে পারেন না। তারা চাইলে ভিসির অনেক অনিয়মে বাধা দিতে পারতেন। সেটা না করে সহযোগিতা করেছেন অথবা নীরব থেকেছেন।  
Link copied!