শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেলমন্ত্রী চুপ!সহজের গ্যাঁড়াকলে রেলওয়ের টিকিট

প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, এপ্রিল ২৬, ২০২২

রেলমন্ত্রী চুপ!সহজের গ্যাঁড়াকলে রেলওয়ের টিকিট

ডেইলি খবর ডেস্ক: সহজের গ্যাঁড়াকলে রেলওয়ের টিকিট।রেলপথ মন্ত্রীর কোনো দায় নেই। তিনি চুপ। আসলে অদক্ষ সহজ বেটাকে কাজ দিলো কে? মন্তীর অনুমতি ছাড়া তো আর সহজ কাজ পায়নি। যাত্রীদের এসব প্রশ্নের জবাব কে দিবে?সহজ লিমিটেড পুরো দেশকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে: তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ।ট্রেনের একটি টিকিটের জন্য নেত্রকোনার যাত্রী আবুল হাসনাত সকাল আটটা থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে অনলাইনে বসে ছিলেন। টিকিট তো দূরের কথা, সার্ভারেই তিনি ঢুকতে পারেননি। তাঁর মতো আরেক যাত্রী সাইদুর রহমান, যাবেন খুলনায়। সকাল থেকে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি চলে যান কমলাপুরে। স্টেশনে এসে দেখেন জনসমুদ্র। তাঁর মতো শত শত মানুষ একটি টিকিটের জন্য ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট কাটা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগ শুধু যাত্রীদের নয়, রেলের অনেক কর্মকর্তাও তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, স্বজনপ্রিতি করে সহজ ডটকম লিমিটেডের মতো অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ায় পুরো টিকিটিং ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, টিকিট কাটার চাপ বাড়লেই সার্ভার ডাউন হয়ে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।টিকিট না পাওয়া নিয়ে যাত্রীদের এসব ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘অনলাইনে টিকিট পাচ্ছে না, এটা ঠিক। তবে যার পাওয়ার, তারা কিন্তু পাচ্ছে। সকাল ৮টায় লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে টিকিট কাটার জন্য অনলাইনে প্রবেশ করে। সবাই তো টিকিট পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, টিকিট আছে ১২-১৩ হাজার।’বাংলাদেশ রেলওয়ের নিজস্ব আইটির সক্ষমতা না থাকায় টিকিটের ‘সার্ভিস প্রোপ্রাইটর’ হিসেবে কাজ করছে সহজ লিমিটেড। কিন্তু সহজের দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের বেশি হলেও টিকিটিং ব্যবস্থায় ভোগান্তি কমেনি যাত্রীদের। কার্যত কোনো সেবাই দিতে পারেনি সহজ। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই দিন ধরে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট কাটতে পারেননি। গতকাল স্টেশনে টিকিট কাটতে আসা বেশির ভাগ যাত্রীই অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ শুধু অনলাইনে নয়, স্টেশনের কাউন্টারেও মাঝে মাঝে অজানা কারণে সার্ভার ডাউন হয়ে যাচ্ছে। আর সার্ভার ডাউন হলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টিকিট কেনাবেচা।যদিও অনলাইনে টিকিটের জটিলতা নিয়ে সহজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি মিনিটে ১০ লাখ মানুষ অনলাইনে টিকিটের জন্য ঢুকছে। কিন্তু তাদের সাইটে প্রতি মিনিটে দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ একসঙ্গে ওয়েবসাইটে ঢুকে টিকিট কাটতে পারবেন। সে কারণেই জটিলতা হচ্ছে। অনলাইনের টিকিট নিয়ে যাত্রীরা যা বলছেন:শিমুল বিশ্বাস নামের এক যাত্রী বলেন,‘সকাল ৮টা থেকে ২০ মিনিট চেষ্টা করেও সহজের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারিনি। ফলে টিকিট কাটতে পারিনি ওয়েবসাইটে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে টিকিট কীভাবে কাটব। আগের চেয়েও খারাপ সার্ভিস দিচ্ছে সহজ। এক ঘণ্টা পরে ঢুকতে পারলে দেখাবে, সব টিকিট শেষ।’মাসুদ হাসান নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘ভেবেছিলাম, সহজ মানুষের চলাফেরা সহজ করবে। কিন্তু হলো উল্টোটা। সহজ কঠিন করে দিয়েছে টিকিট কাটা। তাদের ওয়েবসাইটেই প্রবেশ করা যাচ্ছে না।’যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, রেলওয়ে তাদের সিন্ডিকেটের বাইরে আসতে পারছে না। ফলে সহজ রেলের টিকিটিং ব্যবস্থা সহজ করতে পারেনি। তাদের আসলে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করার মতো সক্ষমতা নেই।কাউন্টারে টিকিট কাটতে ভোগান্তির শেষ নেই কমলাপুরে গিয়ে দেখা যায়, সব কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। পুরুষদের লাইনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাঁদের ভোগান্তি কিছুটা কম হচ্ছে। একজন আরেকজনের গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা তাঁদের। কেউ কেউ হাতপাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে।ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট কাটতে পুরুষদের পাশাপাশি রেলস্টেশনে নারী যাত্রীদেরও ভিড় ছিল। কমলাপুরে ২৩টি কাউন্টারের মধ্যে নারীদের জন্য মাত্র দুটি কাউন্টারে টিকিট দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী যাত্রীরা। অন্যদিকে সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে বেশির ভাগ ট্রেনের এসি সিট শেষ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ট্রেনের এসি টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ যাত্রী শোভন চেয়ারের টিকিট কেটেছেন। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর দুই ঘণ্টার মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়।গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ সোমবার ২৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে।টিকিটের লেখা পড়া যায় নারাজশাহী রেলস্টেশনে দেখা গেল, ট্রেনের টিকিটের লেখা পড়া যাচ্ছে না। প্রতিটি টিকিটেই এখন একটা লেখার ওপর দুই ধরনের লেখা থাকছে। এতে টিকিট যাচাই করতে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। ট্রেনে টিকিট দেখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন ট্রেনের টিকিট পরীক্ষকেরাও (টিটিই)। সহজ লিমিটেড যেদিন থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে, সেদিন থেকেই টিকিটের লেখার এমন হাল হয়েছে বলে সেখানকার কর্মচারীরা জানিয়েছেন।জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ থেকে সহজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কাউন্টার থেকে টিকিট ম্যানেজমেন্ট কিংবা অনলাইনে দেওয়া সবই সহজ করছে। প্রথম দিকে অনলাইনে টিকিট বিক্রিতে নানা রকম সমস্যা হয়েছে। সহজ আগে এগুলোই ঠিক করার চেষ্টা করছে।ঢাকায় যখন টিকিটের জন্য হাহাকার, চট্টগ্রাম ছিল তার উল্টো। ঈদের অগ্রিম টিকিটের দ্বিতীয় দিনেও অবিক্রীত ছিল সব কটি ট্রেনের টিকিট। প্রতিদিনের মতো গতকাল রোববারও সকাল ৮টা থেকে অনলাইন ও কাউন্টারে একযোগে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। তবে আগের দিনের তুলনায় ভিড় একটু বেশি ছিল। তবে কাউন্টারে বেশির ভাগ যাত্রী এসেছেন, যাঁরা অনলাইনে টিকিট কাটতে পারেননি। টিকিটের জন্য আসা শওকত হোসেন নামে একজন আজকের বলেন, ‘সকাল ৮টায় সার্ভারে ঢোকার পরও টিকিট কাটতে পারিনি।’ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সহজের ওয়েবসাইটে মানুষ ঢুকতে পারছে না, সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এটি গোপন রাখার কিছু নেই। তারা টেকনিক্যালি বিষয়টি সমাধান করতে পারেনি। সহজ পুরো দেশকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। তাদের সিস্টেম যে কাজ করছে না, সেটা অকপটে স্বীকার করা উচিত। তাদের ওয়েবসাইট ট্রেনের টিকিট বিক্রির জন্য যথেষ্ট নয়, এটা নতুন করে ডিজাইন করা উচিত।সুত্র-আজকেরপত্রিকা
Link copied!