শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লকডাউন বাড়বে আরও ১ সপ্তাহ!

প্রকাশিত: ০৬:৫৭ এএম, মে ১৩, ২০২১

লকডাউন বাড়বে আরও ১ সপ্তাহ!

আগামী জুনের শুরুতে দেশে আবারো করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে। এর মধ্যে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে নেপালের মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ভারতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখার পরামর্শও তাঁদের। তাঁরা বলছেন, বিশ্বজুড়েই এখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ভারতীয় ধরন। পাশের দেশ হওয়ায় সতর্ক পদক্ষেপ না নিলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। যেমনটি হয়েছে নেপালে। কিছুদিন আগেও নেপালে ভালো পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু হঠাৎই পরিস্থিতির অবনতি হয়। এদিকে ঈদের পর লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়তে পারে। বেশ কিছুদিন ধরে সরকার ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে সতর্ক করে আসছিল। বলা হচ্ছিল এই ভেরিয়েন্ট দেশে ঢুকলে বিপদ অনেক বেশি হবে। বলতে বলতেই ভারতীয় ভেরিয়েন্ট এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছে দেশে। তাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গত কয়েক দিনে যেভাবে ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে মানুষ ভিড় করছে, গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে পথে পথে ঢল নেমেছে লাখো মানুষের, তাতে এই ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে গোটা দেশকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, 'করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্টটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একজন থেকে ৪০০ জন পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। দেশে এই ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে'। সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে এ বছর ঈদে যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করুন। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়াও ঠিক হবে না। সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়া, প্রয়োজনে দুটি মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে'। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে সীমিতসংখ্যক যারা বাংলাদেশে আসছেন তাদের যথাযথভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ঈদের পর আরো কয়েক দিন যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে অর্ধেক কর্মী নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় জনসমাগম বন্ধ রাখতে হবে। কঠোরভাবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা দিলেও বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। তাহলেই করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহীদুল্লা বলেন, ‘ভারতীয় ভেরিয়েন্ট যদি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে জুনে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। দ্বিতীয় যে ঢেউটা কমিয়ে আনা হয়েছে তা আবার ইউটার্ন নিতে পারে। এজন্য আমাদের সীমান্ত আরও কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) করোনা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ইতালি, ইংল্যান্ড থেকে এসে যদি দেশে করোনা সৃষ্টি হতে পারে তাহলে আমাদের পাশের দেশ থেকে এটা আসতে পারে বা আসবে তা ধরেই নিতে হবে। আমাদের ঈদ সামনে আছে, বিভিন্ন উৎসব আছে, সেগুলো নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেগুলো নিশ্চয়ই জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। ঈদের সাত থেকে ১০ দিন পর সংক্রমণের সংখ্যা অবশ্যই বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেটি যদি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পাশের দেশের ভেরিয়েন্টের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায় তাহলে কিন্তু বিশাল বিপত্তি বাধবে। এটি আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’ দেশে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হলেও ঈদের পর গ্রাম ও মফস্বল শহরগুলোয় ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। ঈদ জামাত উন্মুক্ত স্থানে করার পরামর্শ : এদিকে ঈদের জামাত উন্মুক্ত স্থানে করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা জীবনে আরো অনেক ঈদ উপভোগ করতে চাই। কিন্তু আমরা এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নেই। সুতরাং এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে ঈদ সামনে এসেছে, সেটিকে যদি আমরা ঘরের মধ্যে সীমিত আকারে পালন করি তাহলে আমাদের জীবনে আরো অনেক ঈদ উপভোগ করার সুযোগ আসবে। তা না হলে যেভাবে সংক্রমণ ছড়ায়, উন্নত দেশ পর্যন্ত রোগীর চাপ নিতে পারছে না। দেশের প্রস্তুতিরও কিন্তু সব সময় একটা সীমাবদ্ধতা থাকবে। সেদিক থেকে রোগীর সংখ্যা যাতে কোনোভাবে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের ঈদের এ যাত্রা বন্ধ করে ঘরে থেকে ঈদ উদযাপন নিজেদের মধ্যে যাতে সীমাবদ্ধ রাখি সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানাব।’ তিনি বলেন, ‘ঈদ জামাত কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে উন্মুক্ত জায়গায় আয়োজন করা যায় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখার জন্য জনসাধারণকে এবং মসজিদের সংশ্লিষ্ট আলেম-ওলামা যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিকল্প পদ্ধতিতে ঈদ জামাত আয়োজন করার জন্য বলছি। ঈদ জামাত-পরবর্তী আমাদের একটা রীতি হচ্ছে কোলাকুলি করা কিংবা হাত মেলানো। সেটিও কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। সুতরাং এ ক্ষেত্রে ঈদের সময় আমরা কোলাকুলি না করি, হাত না মেলাই সে বিষয়ে যেন আমরা লক্ষ্য রাখি।’ এদিকে ২৬ এপ্রিল ধর্ম মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করে, এবার ঈদের নামাজ পড়তে হবে মসজিদে। গত বছরের মতো এবারও ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরোধ জানায় তারা। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অতি জরুরি। এ ছাড়া মসজিদে নামাজ আদায়েও কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। ইসলামি শরিয়তে ঈদগাহ বা খোলা জায়গায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। ঈদের পর এক সপ্তাহ বাড়তে পারে লকডাউন : দেশে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট রোধে ঈদুল ফিতরের পর চলমান লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ১৬ মে জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনার বিস্তার রোধে আমাদের পরিকল্পনা আছে আর এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর। দেশে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।’ জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরলেই নিরাপদ, আর না পরলে বিপদ- এ কথাটি মাথায় রাখতে হবে।’ উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন চলছে। করোনার কারণে ঈদে লঞ্চ, ট্রেন এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
Link copied!