মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লুটের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্য,নিজের ও স্ত্রীর নামে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন

প্রকাশিত: ০৯:৩৫ এএম, সেপ্টেম্বর ২, ২০২১

লুটের টাকায় যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্য,নিজের ও স্ত্রীর নামে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন

ডেইলি খবর ডেস্ক: দেশের গ্রাহকের টাকা মেরে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম। নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রাসাদসম বাড়ি ও তিনটি ব্যবসা খুলেছেন। কিন্তু বিমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার গ্রাহক নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।এসব জালিয়াতির কারণে বুধবার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক। নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড.মো: রহমত উল্লাহ। এই পর্ষদ একটি নিরীক্ষা কমিটি করে প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির সব তথ্য-উপাত্ত উদ্ঘাটন করবে। পাশাপাশি কোম্পানির সম্পদ উদ্ধার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। বুধবার বিএসইসি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়,পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মতি নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ফারইস্টের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বুধবার সন্ধ্যায় একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু রিং হলেও প্রতিবারেই অপর প্রান্ত থেকে সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। পরে জানা যায়, তিনি দেশে নেই। তিনি এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। বিএসইসির বুধবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোম্পানির নতুন পরিচালনা পর্ষদ আগামী ৬ মাসের মধ্যে শীর্ষ ব্যবস্থাপনাও পুনর্গঠন করবে। নগদ অর্থ-সম্পদ ফিরিয়ে আনবে। পাশাপাশি গত ১০ বছরে যারা আর্থিক অপরাধ এবং মানি লন্ডারিং করেছে,তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। নতুন পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট ড.মো: রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো: মোফাজ্জল হোসেন, কর্নেল (অব.) গাজী মো: খালিদ হোসেন,চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটেন্ট স্নেহাশীষ বড়ূয়া,একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সুজাদুর রহমান, সলাম চৌধুরী। বিএসইসি এবং সরকারের আরও একটি প্রতিষ্ঠানের তদন্ত এবং অনুসন্ধানে জানা যায়, কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রে হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন মো: নজরুল ইসলাম। এই টাকায় ফ্লোরিয়ায় নিজেদের নামে প্রাসাদসম বাড়ি এবং নিজের ও স্ত্রীর নামে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩৪৪৯ ফ্লোরিডার ১১৫২২ ম্যানাটি বে লনে ওয়েলিংটনে ডুপ্লেক্স বাড়ি কিনেছেন। যার নম্বর এক্সেসর পার্সেল বা ট্যাক্স নির্ধারণকারী নম্বর ৭৩-৪১-৪৪-২৬-০৫-০০০-০৮৪০। ছয় বেড রুম, সম্পূর্ণ ইক্যুইপ জিম, সুইমিংপুল এবং তিনটি গাড়ি রাখার গ্যারেজসহ পুরো বাড়ির আয়তন ১০ হাজার ৫২০ স্কয়ার ফুট। বাড়িটির মূল্য ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩২৭ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে ১১ ফেব্রæয়ারি নজরুলের নিজের নামে কোনো ধরনের মর্টগেজ ছাড়া নগদ অর্থে বাড়িটি কেনা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০ ডলার। নিজের ও স্ত্রীর নামে ফ্লোরিডায় তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। এর মধ্যে একটি রাইয়ান বিডি ইন করপোরেশন। ঠিকানা : ৩৩৪৪৯ ফ্লোরিডার ১১৫২২ ম্যানাটি বে লন,ওয়েলিংটন। ডিইউএনএস (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাইকারী কোড) নম্বর ১২২৫৬৪০৮২। ফাইলিং নম্বর পি১৮০০০০৭৯৬৬১। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এটি ফাইল করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক (প্রেসিডেন্ট) নজরুল ইসলাম নিজেই। ভাইস প্রেসিডেন্ট তার স্ত্রী তাসলিমা ইসলাম। প্রাইম ফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট এলএলসি এবং রুমাইসা এন্টারপ্রাইজ এলএলসি নামে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। কোম্পানির ঠিকানা:২৩১৪ এসডবিøউ ১৩ এসটি, বয়নটনবিচ, ৩৩৪২৬ ফ্লোরিডা। ইমেইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ধাবংঃধ.ঁংধ@মসধরষ.পড়স। ডিইউএনএস নম্বর ৩৬১৬৬৪৩৭৮, নিবন্ধন অনুসারে কোম্পানির ধরন ডমেস্টিক লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি। ফাইলিং নম্বর এল১৩০০০১৩২৩৪৩। ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানি দুটি ফাইল করা হয়।এর মালিকানায় রয়েছেন ফারইস্টের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, স্ত্রী তাসলিমা ইসলাম, মোহাম্মদ এম মিয়া এবং ফারহানা মিয়া। এসব কোনো তথ্যই নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বাংলাদেশের আয়কর ফাইলে উল্লেখ করা হয়নি। জানা যায়,গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ না করাসহ নানা আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের জুন মাসে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কোম্পানিটির একজন উদ্যোক্তা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজনের অভিযোগের পর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ২১ ধারা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি বেশকিছু অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা চিহ্নিত করেছে। এর আগে প্রাথমিকভাবেই ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ও এক পরিচালককে আর্থিক সুবিধা দিতে গিয়ে কোম্পানিটির স্থায়ী আমানত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে কোম্পানির তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। ওই নিরীক্ষা অনুসারে ২০১৬ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানির স্থায়ী আমানত ছিল ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে তা ৪১৩ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৭ সালে কোম্পানির বিনিয়োগ ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা কমে ২৫১ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়কালে, কোম্পানির মোট জীবনবিমা পলিসির ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা থেকে ৬৩ কোটি টাকা কমেছে। আর আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের দাবি যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না কোম্পানিটি। এতে কোম্পানিটির গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি জীবনবিমা পলিসিও কমেছে। একই সঙ্গে ফারইস্ট লাইফের বিনিয়োগের পরিমাণও কমেছে। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন মো: নজরুল ইসলাম এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.ইফফাত জাহান। পরিচালক ছিলেন মো: হেলাল মিয়া, ড.মো: মোকাদ্দেস হোসেন, আয়েশা হুসনে জাহান,নাজনীন হোসেন, ড.মো: মনোয়ার হোসেন, রাবেয়া বেগম,মুসলিমা শিরিন,মোহাম্মদ সোহেল আরিফ ও আবদুল আউয়াল। এছাড়াও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে রয়েছেন এবিএম হোসাইন আহমেদ, মো: নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং মো: আকতার হোসেন সান্নামাত।সুত্র-যুগান্তর
Link copied!