বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার যে ১০ সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে দেশকে

প্রকাশিত: ০২:১৯ এএম, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

শেখ হাসিনার যে ১০ সিদ্ধান্ত বদলে দিয়েছে দেশকে

দাতাদের চাপে কৃষিতে ভর্তুকির কথা যখন অর্থনীতিবিদরা উচ্চারণ করেননি, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেন। বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার সিদ্ধান্ত নেন, যা আজ দৃশ্যমান। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ, কমিউনিটি ক্লিনিক, পার্বত্য শান্তিচুক্তি বা আশ্রয়ণের মতো প্রকল্পের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশকে। কৃষিতে ভর্তুকি : ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৪০ লাখ টন। তাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা। সে লক্ষ্যেই তিনি বেশ কিছু কৃষিবান্ধব, যুগান্তকারী কার্যক্রম হাতে নেন। কৃষি খাতে বাজেট বাড়ান এবং ভর্তুকি দেন। সে সময় উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন সংস্থা এবং দেশের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরাও এর সমালোচনা করেন। কিন্তু পরে যখন প্রথমবারের মতো দেশ খাদ্যে নির্ভরশীলতা অর্জন করে তখন সবাই প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘সেরেস’ পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি প্রদান, ১০ টাকায় কৃষকের জন্য ব্যাংক হিসাব চালুকরণ, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, কৃষিতে প্রণোদনা প্রদান, সার বিতরণ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ নানামুখী পদক্ষেপের কারণে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। আজকে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। কমিউনিটি ক্লিনিক : কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ স্বাস্থ্যের যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। মাতৃত্বকালীন যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সব ধরনের সেবা এখানে পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে সারা দেশে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করে প্রতি ছয় মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে। আন্তর্জাতিকভাবেও প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ : ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেন। তার এ সিদ্ধান্তের সুফল ভোগ করছে দেশবাসী। ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ ভাগ। সেখানে বর্তমানে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৯৭ ভাগ। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭টি, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২৩ হাজার ৫৪৮ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে এসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধন করেন। তার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে দেশের সর্বত্রই এখন বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ, উইন্ডমিল ও বায়োগ্যাস থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদন। ডিজিটাল বাংলাদেশ : ২০০৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পেছনে ছিল তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ। তখন অনেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে হাস্যরস করলেও আজকে তা দৃশ্যমান। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে আজ ৬ হাজার ৬৮৬টি ডিজিটাল সেন্টারে ২৭২ ধরনের সেবা নিচ্ছে দেশের মানুষ। এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় অল্প সময়ে, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে অনলাইনে রাষ্ট্রীয় সেবা পৌঁছানো যায়। মোবাইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে পৌঁছে যাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রা হয়েছে অনেক সহজ। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তৃতির কারণে মহামারি করোনার সময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। পদ্মা সেতু : প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। বিশ^ব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে গেলে সবাই যখন ভড়কে যায়, প্রধানমন্ত্রী তখন সাহসী সিদ্ধান্ত নেন নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু করার। আজকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর শেষ পর্যায়ের নির্মাণকাজ। আগামী বছর চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্বপ্নের এ সেতু। পদ্মা সেতু হবে আগামী বাংলাদেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার। দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে সংযুক্ত করতে এ সেতু নির্মাণ দেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তি : ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তির মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয়। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির জন্য ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার পান শেখ হাসিনা। ১৯৯৮ সালে তিনি নিখিল ভারত পরিষদের কাছ থেকে মাদার তেরেসা পদকও পান। ১৯৯৯ সালের ১৫ মে তিনি হেগ শান্তি পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। ১৯৯৯ সালে সেরেস শান্তি পদক পান শেখ হাসিনা যা বিশ^ খাদ্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারপ্রধানদের দেওয়া সর্বোচ্চ পুরস্কার।   আশ্রয়ণ : ভূমিহীন ও গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সাধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একসঙ্গে জমির মালিকানাসহ ঘর করে দেওয়ার ঘটনা ঐতিহাসিক। প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ ও প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩টি পর্যায়ে (১৯৯৭-২০২০) ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভূমিহীন প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৭৭টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের কাজ চলছে। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন। নোয়াখালীর ভাসানচরে ১ লাখ ৩ হাজার জনের পুনর্বাসনের অবকাঠামো নির্মাণাধীন, যা ২০২১ সালের নভেম্বরে সমাপ্ত হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয় : যারা অসহায়, যাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে; কিন্তু কোনো কাজ করতে পারে না তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ হচ্ছেÑ সামাজিক নিরাপত্তা। প্রতিবছর বাজেটে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় শুধু এ খাতে। বিধবা থেকে শুরু করে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তাসহ আরও বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য এই সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি যেন ঠিকমতো চলে তার দেখভালের জন্য একটি জাতীয় কমিটি কাজ করছে। তাদের জীবন যেন সুষ্ঠুভাবে চলে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী এ উদ্যোগ নেন। এ কর্মসূচির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার শতকরা ৩১ দশমিক ৫ ভাগ থেকে হ্রাস পেয়ে শতকরা ২৪ দশমিক ৩ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হার শতকরা ১৭ দশমিক ৬ ভাগ থেকে কমে হয়েছে ১২ দশমিক ৯ ভাগ। সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০’ অনুযায়ী দারিদ্র্য হ্রাসের এই ধারা অব্যাহত থাকায় ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ না করলে দারিদ্র্যের হার অন্তত শতকরা ১ দশমিক ৫ ভাগ বেশি হতো। করোনায় প্রণোদনা প্যাকেজ : দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে কৃষি ও শিল্পসহ অর্থনৈতিক খাতগুলোতে সময়োপযোগী ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং তা বিশ^ অর্থনীতিতে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়। এর কারণে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী অবস্থানে ছিল বলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। কর্মহীন সবার হাতে হাতে নগদ অর্থও পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প : এই প্রকল্পেরও স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই উদ্ভাবনী উদ্যোগটি খুব জনপ্রিয়তা পায়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকে ইতোমধ্যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন। এটি বিদেশেও বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এ ধরনের মডেলের কার্যক্রম বাংলাদেশে এর আগে কখনও হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।
Link copied!