বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধের নায়করা যেভাবে খলনায়ক হলেন

প্রকাশিত: ১০:১৫ এএম, মে ১৪, ২০২২

শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধের নায়করা যেভাবে খলনায়ক হলেন

তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় এখন সবচেয় বেশি অশান্তি বিরাজ করছে। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ জয়ের পর যে রাজাপাকসে পরিবার দেশটির নাগরিকদের কাছে নায়কে পরিণত হয়েছিল, ভাসছিল প্রশংসায়। আজ বিপর্যস্ত অর্থনীতির কারণে তাদেরই খলনায়ক হিসেবে দেখছে এই দ্বীপরাষ্ট্রের দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ। বিক্ষুব্ধরা দীর্ঘদিনের এই ক্ষমতাধর নেতাদের পরিবার ও সম্পত্তির ওপর এমনভাবে হামলে পড়ছে যেন তারা এখন চক্ষুশূল। এ কারণে দু'বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আশ্রয় নিতে হয়েছে নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে। নড়বড়ে অবস্থা তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসেরও। কিন্তু তাদের কেন এই পরিণতির মুখে পড়তে হলো, আর সামনে তাদের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে- এ নিয়ে বিশ্নেষণমূলক প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলায় গত এপ্রিলের শুরু থেকে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করে আসছেন সরকারবিরোধীরা। ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরা সেই আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ায় এবং তাদের ওপর আক্রমণ করায় পরিস্থিতি চলতি সপ্তাহে অগ্নিগর্ভ হয়। শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ। এটিই এই পরিবারের সাম্রাজ্যের পতনের পথ রচনা করে। প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্নেষক কুসাল পেরেরা বলেন, শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার পরে মাহিন্দা ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় সিংহল বৌদ্ধ নেতা। অনেকে তাকে সম্রাট মাহিন্দা বলেও প্রশংসা করত। সংসদের বিরোধী দলের নেতা থেকে ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এক বছর পর হন প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতায়ন শুরু করেন পরিবারের সদস্যদের। প্রথমে ছোট ভাই গোটাবায়াকে প্রতিরক্ষা সচিব নিয়োগ দেন। এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট করা হয় তাকে। এভাবে পরিবারের আরও অনেককে ক্ষমতার অংশ করা হলে তারা ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বাড়তে থাকে সমালোচনা, সরকারবিরোধী মনোভাব। তাদের বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন, সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণের অভিযোগও আছে। বিপুল ভোটে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়া গোটাবায়া এখন অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অদূরভবিষ্যতে এই পরিবারের সাম্রাজ্য মাটিতে মিশে যেতে পারে বলে বিশ্নেষকরা মনে করছেন।
Link copied!