শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সক্ষমতা থাকলেও ট্রেনে কম বগি মেলে না টিকিট

প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২২

সক্ষমতা থাকলেও ট্রেনে কম বগি মেলে না টিকিট

ব্যবসা, চাকরিসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করেন। প্রতিদিন এ পথে চলাচল করে ১০টি আন্তঃনগর ও তিনটি মেইল ট্রেন। তবে যাত্রীর চাপ সামলাতে পারছে না ট্রেনগুলো। চাহিদা থাকলেও রেলওয়ে নতুন ট্রেন যেমন যুক্ত করতে পারছে না, আবার সক্ষমতা থাকলেও চলাচলরত ট্রেনে পর্যাপ্ত বগি (কোচ) সংযোজন করা হচ্ছে না। এতে একদিকে বাড়তি আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে, অন্যদিকে টিকিট না পেয়ে প্রতিদিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে। অনেকে আবার 'স্ট্যান্ডিং' টিকিট নিয়ে দীর্ঘপথ ভ্রমণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। রেলসংশ্নিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী প্রথম শ্রেণির ('ক' শ্রেণি) আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা ও তূর্ণা-নিশিতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো ২২টি বগির 'র‌্যাক' দিয়ে চলাচল করতে পারে। তবে এসব ট্রেন চলছে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৬ বগি নিয়ে। অথচ একটি ট্রেন ১২ থেকে ১৬টি বগি নিয়ে চললে যে খরচ হয়, ২২টি বগি সংযোজনেও খরচ একই হয়। তবে বগি বেশি হলে রেলের আয় বাড়ে। যাত্রীরাও চাহিদা অনুযায়ী টিকিট পান। তবে বগি সংকটে তা করা যাচ্ছে না। রেলওয়ে থেকে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে ১৪ বগির সমন্বয়ে গড়া র‌্যাকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ১৬ কোচ নিয়ে তূর্ণা-নিশিতা, ১৮ কোচ নিয়ে সুবর্ণ এক্সপ্রেস চলাচল করছে। ১২ থেকে ১৪ বগি নিয়ে চলছে মহানগর গোধূলি ও মহানগর এক্সপ্রেস। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মেইল ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে সংযোজন করা যাচ্ছে না পর্যাপ্ত বগি। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম নয়, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটেও মাত্র ১৪ বগি নিয়ে চলাচল করছে পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে বিজয় এক্সপ্রেসে সংযুক্ত রয়েছে ১৪টি বগি। চট্টগ্রাম থেকে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রুটে চলাচল করা ট্রেনেও রয়েছে বগি সংকট। আরও জানা যায়, এ রুটে চলাচলকারী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা ও তূর্ণা-নিশিতা এক্সপ্রেসে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়টি অতিরিক্ত কোচের চাহিদা থাকে। এ কারণে আন্তঃনগরের ট্রেনগুলোতে নির্ধারিত আসনের বাইরে 'স্ট্যান্ডিং' টিকিট বিক্রি করা হয়। এতে অনেক সময় ট্রেনগুলোতে যাত্রীর ঠাসাঠাসিতে দম ফেলার উপায় থাকে না। ট্রেনগুলোতে পর্যাপ্ত বগি থাকলে এ সমস্যা হতো না। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রেলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তবে সেই বিনিয়োগ তুলে আনতে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় রেলওয়ে লোকসান গুনছে। কর্তৃপক্ষ চাইলেই ২২ থেকে ২৪টি পর্যন্ত বগি সংযুক্ত করতে পারে। এতে রেলে যাত্রী পরিবহন যেমন বাড়বে, বাড়বে আয়ও। তবে সক্ষমতা থাকার পরও সেটা করা হচ্ছে না। রেলওয়ে পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে বাড়তি বগির চাহিদা থাকলেও রেলের যান্ত্রিক বিভাগ থেকে তা সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ কারণে কম বগি নিয়েই ট্রেনগুলো চলছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৫০টি নতুন মিটারগেজ বগি আমদানি করা হচ্ছে। এসব বগি পাওয়া গেলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, আন্তঃনগর রুটগুলোতে চলাচলকারী প্রথম শ্রেণির ট্রেনগুলোতে সর্বোচ্চ ২২টি কোচ সংযোজন করা যায়। তবে নানা কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে এটি করা যাচ্ছে না। কোন আন্তঃনগর রুটে কোন ট্রেন কত কোচ নিয়ে চলাচল করবে সেটা রেলওয়ের টাইম টেবিল বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আমরা সেটা অনুসরণ করে ট্রেনগুলোর র‌্যাক তৈরি করি। অনেক সময় যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়। রেলের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, রেলে সার্বিকভাবে কোচের সংকট রয়েছে। তবে আন্তঃনগর ট্রেনে সেভাবে কোচ সংকট নেই। কারখানায় লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময় চাহিদা অনুযায়ী কোচ মেরামত করে তা ট্রেনে সংযুক্ত করা যায় না। চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ লোকবল নিয়ে রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানা চলছে।
Link copied!