শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্মেলন ঘিরে ডিসিদের যত আবদার

প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩

সম্মেলন ঘিরে ডিসিদের যত আবদার

জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ঘিরে তাদের চাওয়ার কোনো শেষ নেই। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক আলাদাভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তারা। আর সেই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তিও দেখিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাইয়ের ২৪৫টি প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। তিন দিনের সম্মেলনে দিনব্যাপী ২০টি অধিবেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি অধিবেশনের জন্য ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড়ঘণ্টা। একাধিক জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, এত অল্প সময়ে এতগুলো বিষয় আলোচনা করা সম্ভব নয়। এর পরেও যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে তা অনেকাংশে বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব মোটাদাগের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রস্তাবগুলো সম্মেলনে আসার আগেই লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলেন ডিসিরা। পরে এগুলো সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত বইয়ের অন্তর্ভুক্ত করে উপস্থাপন করা হয় মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধন করার পর বেশ কয়েকজন ডিসি ও দুজন বিভাগীয় কমিশনারের কথা শোনেন। যারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য দিয়েছেন তারা মূলত মাঠ পর্যায়ে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত তা আলোকপাত করে জানা গেছে। উদ্বোধনের পর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও এর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা নিয়ে। এতে চারটি জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ওঠে। জেলাগুলো হচ্ছে- ভোলা, নরসিংদী, বরিশাল ও গাইবান্ধা। এ চার ডিসিদের যুক্তি হচ্ছে, বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রাজস্ব আয় ও কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া। প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হবে বলে জানায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র। দ্বিতীয় অধিবেশন ছিল অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত। এতে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব ছিল সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের শিক্ষা সহায়ক ভাতা যুগোপযোগী ও সরকারি চাকরিজীবীর চিকিৎসা ভাতা, টিফিন ভাতা বাড়ানো। নরসিংদী ও ঝালকাঠির ডিসি এ প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবের পক্ষে স্কুলের বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয় ও ওষুধের দাম বৃদ্ধি যুক্তি দেখান তারা। প্রকল্পের গুণগত মান বজায় রাখতে আইএমইডির বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস স্থাপনের প্রস্তাব দিনাজপুরের ডিসি। এ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসেননি। তবে প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তৃতীয় অধিবেশন ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত। এতে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ঠেকানো ও রাজনৈতিক সুবিধা নিরুৎসাহিত করতে এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের জন্য সরকারি কর্মচারী আচরণবিধির মতো সুনির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরির প্রস্তাব দেন ঝিনাইদহ ডিসি। চুয়াডাঙ্গার ডিসির প্রস্তাব ছিল পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করার। শিক্ষকতা পেশায় যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচনে সুযোগ দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পোষ্য কোটা বাতিলের প্রস্তাব দেন কুড়িগ্রামের ডিসি। চতুর্থ অধিবেশন যোগ দেয় চারটি মন্ত্রণালয়। সুনামগঞ্জের ডিসি দুর্যোগকবলিত মানুষকে দ্রুত উদ্ধারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে সব জেলা ও উপজেলায় রেসকিউ বোট দেওয়ার প্রস্তাব দেন এ অধিবেশনে। তিনি হাওরে বজ্রনিরোধক দণ্ড ব্যবস্থারও প্রস্তাব দেন। আর কাজ টেকসই করতে টিআর, কাবিখা কর্মসূচির শেষ কিস্তি মার্চের আগে মঞ্জুরি দেওয়ার প্রস্তাব দেন খুলনার ডিসি। একই অধিবেশনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব ছিল তিনটি। এর মধ্যে বরিশালের ডিসি মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ডিসি ও ইউএনওদের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। বুধবার সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিষয়ে। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জেলা পর্যায়ে পরিবেশ অধিদফতরের কার্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পাওয়া গেছে ঝালকাঠির ডিসির কাছ থেকে। ময়মনসিংহের ডিসির প্রস্তাব জেলায় সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করার এবং নরসিংদী ডিসির প্রস্তাব করাতকল বিধিমালা যুগোপযোগী করা ও অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানোর। একই অধিবেশনে অংশ নেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের মাদকসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজ থেকে দূরে রাখতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া ক্যালেন্ডার তৈরির নির্দেশনা দেওয়া প্রস্তাব দিয়েছেন বরিশাল ডিসি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসির প্রস্তাব যুব ঋণের সিলিং বাড়ানোর। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ে ডিসিদের প্রস্তাব রয়েছে ৯টি। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের ডিসি হাওর এলাকায় বর্ষাকালে পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার ও ওয়াচটাওয়ার নির্মাণ, বাগেরহাটের ডিসি সেখানকার মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি সুরক্ষা, পঞ্চগড়ের ডিসি বাংলাবান্ধায় পর্যটন মোটেল ও তেঁতুলিয়ায় রিসোর্ট স্থাপন, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক পাবর্ত্য এলাকায় পর্যটক আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং কক্সবাজারের ডিসি সেখানে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ে ডিসিদের সাতটি প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কৃষি পুনর্বাসনে সয়াবিনের চাষ অন্তর্ভুক্ত করা। বরিশালের ডিসি এ প্রস্তাব দেন। রাজশাহীর ডিসির প্রস্তাব পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের। আর সাতক্ষীরার ডিসির প্রস্তাব আম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশনে পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- খাদ্য নিরাপত্তা আইন সংশোধন। এ প্রস্তাব বগুড়ার ডিসির। এ ছাড়াও সিলেট ও বরিশালের ডিসি খাদ্য গুদামে স্থায়ী জেটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাব এসেছে ছয়টি। এর মধ্যে বরিশালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর রক্ষা, ভোলায় সব উপজেলায় পাবলিক লাইব্রেরি নির্মাণ, নরসিংদীতে প্রাচীন জমিদার বাড়ি যথাযথ সংরক্ষণ উল্লেখযোগ্য। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাত্র একটি প্রস্তাব। আর তা হলো খুলনার পাট শিল্পের পুনরুদ্ধার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়েও প্রস্তাব একটি। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের এ প্রস্তাবটি হচ্ছে প্রস্তাবটি হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন স্বাভাবিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিছিন্ন হলে বিকল্প ব্যবস্থার সংস্থান রাখা। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রস্তাবও একটি। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের প্রস্তাবটি হলো, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন। শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাব হচ্ছে আটটি। এর মধ্যে চামড়া সংক্রান্ত অধিদফতর গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার। একই সঙ্গে দেশের আটটি বিভাগে আটটি সমন্বিত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক প্রস্তাব দিয়েছেন সেখানে লবণ উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়বিষয়ক প্রস্তাব সাতটি। এর মধ্যে বরিশালের ডিসির প্রস্তাব বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে বৃদ্ধাশ্রম তৈরির। টাঙ্গাইলের ডিসির প্রস্তাব বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের ভাতা কর্মসূচির আওতায় শতভাগ বরাদ্দ প্রদানের। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন কক্সবাজারের ডিসি। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য সাতটি প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার ডিসিরা। মহাসড়কের প্রথম লেনে কম গতিসম্পন্ন ট্রাক চলাচল বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছেন মাগুরার ডিসি। রেলপথ মন্ত্রণালয় নিয়ে প্রস্তাব দুটি। এর একটি হচ্ছে পাবনা জেলা সদর রেলস্টেশন থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃনগর রেল সার্ভিস চালু। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক প্রস্তাব এসেছে ১০টি। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা বিল্ডিং নির্মাণের কমিটিকে আইনগত ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন নরসিংদীর ডিসি। আর প্রতিটি দফতরের রক্ষণাবেক্ষণ বাজেট নিজ নিজ দফতরে বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন গোপালগঞ্জ ডিসি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সম্মেলন শুরু হবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ে। এ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাব রয়েছে দুটি। এর একটি ফেনী ও অন্য বরগুনা ডিসির পক্ষে থেকে। ফেনীর জন্য প্রস্তাব হলো অবৈধকর্মী কিংবা লাশ পাঠানোর ক্ষেত্রে ঠিকানা ও পরিচয় যাচাই দ্রুত সম্পন্ন করা। আর বরগুনার ডিসির প্রস্তাব বৈধভাবে বিদেশ যাওয়া উৎসাহিত করতে জেলায় জেলায় জব ফেয়ার আয়োজন করা। পানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রস্তাব এসেছে ১৩টি। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- নদী-নালা খাল-বিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসককে থোক বরাদ্দ দেওয়া, সিলেট বিভাগীয় শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, নদী থেকে খনন করা মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরি, সীমান্তবর্তী নদ-নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধ মেরামত কাজ নির্বিঘ্নে করার জন্য ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া। প্রস্তাবগুলো দিয়েছেন যথাক্রমে গোপালগঞ্জ ডিসি, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জয়পুরহাট ডিসি ও সাতক্ষীরা ডিসি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সম্পর্কিত সম্মেলনে দুটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে খুলনা ডিসির কাছ থেকে। এর একটি হচ্ছে জেলা পর্যায়ের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কার্যক্রম পরিবীক্ষণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব প্রদানের জন্য নীতিমালা তৈরি করা। আইন ও বিচার বিভাগ সম্পর্কিত প্রস্তাবও দুটি। প্রস্তাবক বরিশাল ও ঝিনাইদহ ডিসি। তারা যথাক্রমে পিপি ও জিপি নিয়োগে জেলা প্রশাসকদের সুপারিশ নেওয়ার বিধান এবং মৌজা রেট নির্ধারণে সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ বিধিমালা কমিটি সংশোধন চেয়েছেন। পররাষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কে একটি প্রস্তাব করেছেন ডিসি মেহেরপুর ডিসি- মুজিব নগরে স্বাধীনতা সড়ক চালুর উদ্যোগ নেওয়া। ডিসি সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব এসেছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের। চুয়াডাঙ্গা ডিসির প্রস্তাব- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু করা। জেলায় একটি ট্রমা সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন নারায়ণগঞ্জের ডিসি। গোপালগঞ্জ ডিসির প্রস্তাব- জেলা-উপজেলায় স্বাস্থ্য কমিটি গঠন করা। মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন জয়পুরহাট ডিসি। গাইবান্ধার ডিসির প্রস্তাব- দুর্গম চরের মানুষের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা সম্পন্ন নৌ অ্যাম্বুলেন্স প্রদান। বরিশাল ডিসি চেয়েছেন বরিশাল শহরে একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। ডিসি সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জননিরাপত্তা বিভাগ সম্পর্কিত প্রস্তাব। এ বিভাগের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে ১৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সীমান্তের আট কিলোমিটার বাইরে বিজিবি সদস্য কর্তৃক ফায়ারের ঘটনা ঘটলে এক্সকিউটিভ ইনকোয়ারির মাধ্যমে যৌক্তিকতা যাচাই করা, বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইনের কতিপয় ধারা যুগোপযোগী করা ও স্পষ্ট করা, টাউট আইন যুগোপযোগী করা, দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারা মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এর তফসিলভুক্ত করা এবং দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় অর্থদণ্ডের পরিমাণ বাড়ানো। প্রস্তাবগুলো করেছেন খাগড়াছড়ি, নরসিংদী সাতক্ষীরা ও জয়পুরহাটের ডিসি। সুরক্ষা বিভাগের জন্য প্রস্তাব এসেছে ১১টি। প্রস্তাবগুলো করেছেন ভোলা, মৌলভীবাজার জয়পুরহাট ও বান্দরবানের ডিসি। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- আধুনিক নিরাপত্তা সুবিধা সংবলিত কারাগার স্থাপন, বন্দিদের সাক্ষাতের সুবিধার জন্য ভিডিওকলের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা, মাদকসেবী কয়েদিদের জন্য জেলখানার অভ্যন্তরে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে সুবিধা চালু এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার ওয়াকিটকি প্রদান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ৯টি প্রস্তাব হচ্ছে- মৎস্য অভিযান পরিচালনার সময় স্পিডবোট ও পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ, দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে হাওর অঞ্চলে প্রজন মৌসুমে জেলেদের ভিজিএফ প্রণোদনা দেওয়া, নিরাপদ মাছ উৎপাদনের জন্য মাছের খাদ্য ও রোগবালাই পরীক্ষার ব্যবস্থা, মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের সমুদ্রে যাওয়া ও মৎস্য শিকার থেকে বিরত রাখার সুবিধার জন্য খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি নগদ প্রণোদনা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ, মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর তফসিলভুক্ত মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ যুগোপযোগী ও স্পষ্ট করা। এসব প্রস্তাবের প্রস্তাবক হলেন যথাক্রমে ভোলা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ, ফরিদপুর, কক্সবাজার এবং নরসিংদীর ডিসি। ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ১৫টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- সরকারি রাজস্ব প্রশাসনের উন্নয়ন বরাদ্দে জেলা প্রশাসকদের আয়-ব্যয়ের ক্ষমতা প্রদান, এলএ কন্টিজেন্সি খাত থেকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো, সারা দেশের সব খাসজমির তথ্য সংবলিত কেন্দ্রীয় একটি অনলাইন ডাটাবেজ প্রস্তুত, ল্যান্ড জোনিংয়ের মাধ্যমে কৃষিজমির সুরক্ষার নিশ্চিত, সরকারি স্বার্থের মামলা পরিচালনার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিভিন্ন রিট মামলা তদারকির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সমন্বয় সেল গঠন। প্রস্তাবকরা হলেন যথাক্রমে পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিসিরা। আগামীকালের শেষ অধিবেশন হবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত। এ মন্ত্রণালয়ের জন্য রয়েছে সাতটি প্রস্তাব। পিরোজপুর ও ঝালকাঠির ডিসির প্রস্তাব- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ অর্থে উন্নয়ন প্রকল্পের আয়-ব্যয় ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের দেওয়া। আর উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের আবাসিক কার্যালয়ের জন্য জনবল সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছেন জামালপুরের ডিসি। আগামীকাল সম্মেলন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বলে জানা গেছে।
Link copied!