মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সময়ের সাহসী সংগঠন এনামুল হক শামীম

প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, জানুয়ারি ৪, ২০২২

সময়ের সাহসী সংগঠন এনামুল হক শামীম

আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আমার যৌবনের প্রথম প্রেম; প্রেরণার উৎস ছাত্রলীগ আমার অহংকার। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 'শিক্ষা শান্তি প্রগতি' ¯েøাগান দিয়ে ছাত্রলীগ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের ইতিহাসকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন; লড়াই করেছেন প্রতিটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। ঠিক এ কারণেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন, 'ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালি জাতির ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস।' বাংলা ও বাঙালির প্রায় সাত দশকের সংগ্রাম, গৌরব ও সাহসের সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্র সংগঠন। জাতির ইতিহাসের প্রায় প্রতিটি অধ্যায়েই রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। ছাত্রলীগ মানেই গভীর দেশপ্রেম, আদর্শবোধ ও ত্যাগের মহিমায় পড়াশোনার পাশাপাশি জাতি গঠনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রেখে যাওয়া একটি সাহসী ছাত্র সংগঠন, যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। ছাত্রলীগের যে ত্যাগ, যে অর্জন, তা অন্য কারও নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মায়ের মমতায় ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেন। আরও গতিশীলতা দিয়ে করেছেন শক্তিশালী। তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাত্রদের হাতেই তুলে দিয়েছেন। অবিবাহিত, নিয়মিত ছাত্ররাই এবং বয়সসীমা ২৯ বছরের নিচে যাদের তারাই নেতৃত্বে আসবে। ১৯৯৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিশাল ছাত্র সমাবেশে আমার হাতে (সে সময় আমি ছাত্রলীগের সভাপতি) বই-খাতা তুলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বই-খাতা-কলম হচ্ছে ছাত্রদের প্রকৃত হাতিয়ার। তিনি আরও বলেছিলেন,'শুধু ভালো কর্মী হলেই চলবে না; ভালো ছাত্রও হতে হবে।' নির্দেশ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। মেধাবীরাই ছাত্রলীগ করবে। ছাত্রলীগ করতে হলে নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে থাকতে হবে। শুধু বয়সই নয়; নিয়মিত শিক্ষার্থী ও অবিবাহিত হতে হবে। অছাত্র ও বিবাহিতরা ছাত্রলীগে স্থান পায় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ইতিহাসের সেরা সাহসী সন্তানেরাই ছাত্রলীগ করে। তিনি বলেছিলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। আর ছাত্রলীগ হচ্ছে সোনার মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান। ছাত্রলীগ না করলে আমি আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম না। আমাকে কেউ চিনত না, জানত না। 'আমরা সবাই মুজিব হবো/ মুজিব হত্যার বদলা নেব,এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে'- ¯েøাগান দিয়ে স্কুল ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছিলাম। এর পর কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক ও সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, পরবর্তী সময়ে জাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলাম। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, '৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ পরিশ্রমে যুক্তফ্রন্টের বিজয় নিশ্চিত, '৫৮-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, '৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, '৬৬-এর ৬ দফা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, ৬ দফাকে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসককে পদত্যাগে বাধ্য এবং বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, '৭০-এর নির্বাচনে ছাত্রলীগের অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ,স্বাধীনতা-পরবর্তী সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের অসামান্য অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অগ্রসেনার ভূমিকা পালন করছে ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা এবং জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেমের সংমিশ্রণ আর কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে দীর্ঘ ৭৪ বছর। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গৌরব,ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘপথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী জীবনকে অকাতরে উৎসর্গ করেছেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, 'দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দেব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করব না।'বঙ্গবন্ধুর কথাতেই তার একান্ত অনুগত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১৭ হাজার নেতাকর্মী মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা। এঁকেছেন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। সেইসব বীর যোদ্ধাই আমাদের অনুপ্রেরণা,আমাদের শক্তি, আমাদের সাহস। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি সংগঠন হিসেবে দুর্জয়ী কাফেলায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য হারাতে হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী।ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী হিসেবে বর্তমান নেতাদের আহ্বান জানাই, ছাত্রলীগের কাজের দ্বারা যেন প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে ছাত্রলীগ। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকবিরোধী কার্যক্রমে বেশি সক্রিয় হবে ছাত্রলীগ।সুত্র-সমকাল এ কে এম এনামুল হক শামীম : পানিসম্পদ উপমন্ত্রী, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ    
Link copied!