শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি কলেজের ছাত্র শত কোটি টাকার মালিক!

প্রকাশিত: ১০:৫৫ এএম, অক্টোবর ২৯, ২০২২

সিটি কলেজের ছাত্র শত কোটি টাকার মালিক!

ডেইলি খবর ডেস্ক: রাজধানীর সিটি কলেজের ছাত্র রাহুল শত কোটি টাকার মালিক। পিতা পাবনায় মহুরীর কাজ করেন। ছেলেকে লেখা-পড়ার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন। ছেলে হয়েছে জুয়ারু । হয়েছে শত কোটি টাকার মালিক। এাবার ছেলে গোয়েন্দার হাতে আটক হওয়ার পর জানা গেলো বিশ্বের অন্যতম পাক্কা জুয়ারু। অনলাইনে বাজিতে কোটি টাকা লগ্নি হচ্ছে বাংলাদেশে। পর্দার আড়ালে সেই খেলোয়াড়দের বলা হয় বাজিকর। একেকটি ম্যাচকে ঘিরে শতকোটি টাকার বাণিজ্যে নামে মাফিয়ারা। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপ ফুটবল-ক্রিকেট, ইউরোপা, উয়েফা, স্পেনিশ লীগ, কোপা আমেরিকা, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, বিপিএল এসব খেলায় বিনোদন খোঁজেন দর্শকরা। তবে এ খেলা এখন আর শুধু বিনোদনেরই মাধ্যম নয়, এমন একেকটি আসরকে অবৈধ আয়ের উপলক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। সবেমাত্র কলেজ পড়ুয়া ছাত্র। চলতি বছরেই বসবেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। আর এরই মধ্যে বনে গেছে প্রায় শতকোটি টাকার মালিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। রাজধানীর সিটি কলেজের ছাত্র রাতুল অনলাইন জুয়ার সাইট চালিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। যেহেতু কোটি টাকার মালিক তাই তার চলাফেরাতেও আভিজাত্যের ছোঁয়া। রয়েছে সিভিক প্রাইভেট কার, প্রিমিওর মতো গাড়ি। আর মোটরবাইক রয়েছে ডজনের বেশি। সেগুলো আর ফিফটিন তো অবশ্যই। আইফোন-১৪-এর সর্বশেষ মডেলও তার হাতে। গ্রাামের বাড়িতে বাবাকে কিনে দিয়েছেন চারটি ভেকু। অবৈধ পথে শতকোটি টাকা কামানো রাতুলসহ তিন জনকে গত মঙ্গলবার গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অন্য দুই জন হলেন মুন্না ও ইয়াসিন। তাদের বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত তিন জনের বাইরে রয়েছে আরো দুই জন। এরা হলো নবাব ও মুকুল। এদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, পাবনা জেলার আমিনপুর থানার বাঁশতলা গ্রামের আজিবুর রহমানের ছেলে রাতুল। সে মেলবেট নামক একটি অনলাইন জুয়ার বাংলাদেশি মূল এজেন্ট। এছাড়াও আরো কয়েকটি জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বাবা সামান্য মুহুরির কাজ করে। কিন্তু সে ৫০ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কারে চলাফেরা করে। তার তিনটি আর-১৫ ভার্সন মোটরবাইক আছে। যার একেকটির মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। তার বড় ভাইকে তিনটি এক্সকাভেটর (মাটি কাটা মেশিন) কিনে দিয়েছে। সুবাস্তুতে কয়েক কোটি টাকার পার্টনারশিপে একটা বিদেশি পণ্যের শোরুমের কাজ করছে। থাকে ধানমন্ডির এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। তার ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোনের একেকটির মূল্য প্রায় ২ লাখ বা তারও বেশি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, রাতুল সম্প্রতি আজারবাইজানের একটা জুয়া কোম্পানির ২০০ কোটি টাকা মূল্যের এজেন্সি ক্রয়ের আলোচনা করছে এবং পরীক্ষা শেষ করে আজারবাইজান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এতকিছু তার জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। রাতুল তার বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত। তার বাবার কয়েকটি অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতুল তার সহযোগীদের দিয়ে এ দীর্ঘদিন ধরে এ চক্র গড়ে তোলে। অনলাইন গেইমের মাধ্যমে অন্তত কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডলার বিজনেসের মাধ্যমে এ টাকা বিদেশে পাচারও করে। রাতুলের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব কয়েক জন ভুক্তভোগী জানান, তার কথায় বিনিয়োগে দ্বিগুণ হওয়ার প্রলোভনে তিনি কয়েক বারে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময় তিনি আর কিছুই পাননি। যেহেতু তিনি কাজটি অন্যায় করেছেন সেহেতু তিনি এ বিষয়ে অভিযোগও করতে পারছেন না। এ নিয়ে তাদের পরিবারে অশান্তি চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন জুয়াড়ি বলেন, আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও এই অনলাইন বাজি ছিল এদেশের সমাজের মুষ্টিমেয় ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন সারা দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ অনলাইনে বাজিতে বুঁদ হয়ে থাকে। ফুটপাতের চা-দোকানি থেকে শুরু করে সেলুন দোকানদার, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয় কর্মী থেকে শুরু করে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজিচালক, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির মতো একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন দিনের একটা সময় অনলাইনে বাজি ধরতেই ব্যস্ত থাকে। ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই শ্রেণির মানুষ বাজি ধরে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তো রয়েছেই, স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে বাজি ধরতে বেশ পটু। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন,অনলাইনে বেটিং ধরতে গিয়ে প্রথমে ৩ হাজার পরে ৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ধরা হয়। এরপর আসক্তি বাড়লে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত চলে যায়। আর এভাবেই টাকা শেষ হতে থাকে। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ফিলিপাইন, ম্যাকাও, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, আজারবাইজান, বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। এসব সাইটে বাংলাদেশিদের ফাঁদে ফেলছে এদেশীয় এজেন্টরা। প্রশ্ন হচ্ছে-মহুরীর পুলা ঢাকায় পড়তে এসে কিভাবে শতকোটি টাকার হলেন তা পিতা-মাতা খোজ রাখেননি। দামি গাড়ি ব্যবহার কিভাবে করছে তাতে বুঝবেন না তা কি করে হয়?
Link copied!