শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিটি নির্বাচন নিয়ে হার্ডলাইনে ইসি

প্রকাশিত: ১২:৫২ পিএম, মে ১, ২০২৩

সিটি নির্বাচন নিয়ে হার্ডলাইনে ইসি

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে হার্ডলাইনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন সবার কাছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নানা তৎপরতায় ব্যস্ত রয়েছেন কমিশনের সদস্যরা। নীতিনির্ধারণী নানা সভা, পরামর্শ সভা ও নির্দেশনা জারিতে সময় পার করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের শোকজ ও সতর্ক করাসহ পুরো নির্বাচন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কমিশন। জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে অনুষ্ঠিতব্য এসব নির্বাচনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আর নিজেদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেছে কমিশন। ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীদের থামাতে দলের পাশাপাশি হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকেও। ইসি সূত্র জানায়, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নানা চেষ্টার পরও সরকারবিরোধীদের আস্থায় আনতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। নানা সময় তাদের সংলাপের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা ইসির সেই ডাকে সাড়া দিচ্ছে না। উল্টো সরকারের পদত্যাগ চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজানোর দাবিতে আন্দোলনে ব্যস্ত রয়েছে সরকারবিরোধী দলগুলো। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে অনুষ্ঠিতব্য এই পাঁচ সিটি নির্বাচনকে নিজেদের অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখছেন কমিশনাররা। কারণ, নির্বাচনে অংশ না নিলেও এসব নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বা শৈথিল্যের অভিযোগ উঠলে তা লুফে নিতে পারে বিরোধীরা। এ মুহূর্তে তারা নতুন করে বিরোধীদের হাতে সেই অস্ত্র তুলে দিতে রাজি নন। সেজন্য এই পাঁচ সিটির ভোট সুষ্ঠু করতে বেশ তৎপর রয়েছে কমিশন। ভোট নিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের এরই মধ্যে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিশন থেকে। পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থায় নির্দেশনা এবং সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বিষয়টিকে সামনে রেখেই দলীয় কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এমন নির্দেশনা দিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে দলটির সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেয় ইসি। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারবেন না। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র) যাতে দলীয় কার্যক্রম নেওয়ায় অথবা অন্য কোনো কার্যক্রম নেওয়ায় আচরণবিধি মেনে চলেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয় চিঠিতে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও হস্তক্ষেপ থেকে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও এমপিদের থামাতে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকেও চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে পাঠানো ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা চিঠিতে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন (গাজীপুর, খুলনা ও বরিশাল এবং রাজশাহী ও সিলেট) নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মন্ত্রিপরষদ বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় কমিশন। এতে উল্লেখ করা হয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণসূচি জারি করেন। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার জেনে মন্ত্রীদ্বয়ের একান্ত সচিবদের আচরণবিধির বিষয়টি টেলিফোনে অবগত করেন। পরে তিনি পত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদ্বয়ের একান্ত সচিবদের অবহিত করেন। এরপরও এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার বিধান থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উল্লিখিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আচরণবিধি প্রতিপালন-সংক্রান্ত উল্লিখিত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জানাতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে তলব করেছে ইসি। এ ব্যাপারে তাকে নির্বাচন কমিশনে সশরীরে গিয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে সতর্ক করা হয়েছে। এর পরই ক্ষমতাসীন দলের এ প্রার্থীকে কারণ দর্শাতে বলা হলো। এর আগে গতকাল সকালে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা বসে কারণ দর্শানো নোটিশ, ইসির নির্দশনাসহ চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সবাইকে আচরণবিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, সরকারের লোকজনই বিধি ভঙ্গ করছেন। এসব এলাকায় আচরণবিধি না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে তথ্য এসেছে। ইসি থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও প্রার্থী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এজন্য আমরা কমিশন বসেছি। আলোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পত্র দেব। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য তাদের যেন অনুরোধ রাখেন আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘন না করে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছেও দলীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা জানাতে অনুরোধ করবে ইসি। এর আগে সর্বশেষ ভোটের আগে কমিশনের অনুমতি ছাড়া সংশ্লিষ্টদের কোনো ছুটি বা বদলি করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ঋণখেলাপিদের তথ্য দিতেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেয় কমিশন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার পৃথক এক চিঠিতে সিটি ভোট সুষ্ঠু করতে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন। ইসির তপশিল অনুযায়ী আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে ভোট হবে।
Link copied!