বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিনিয়র ক্রিকেটারদের সরাতে চান ডমিঙ্গো

প্রকাশিত: ১১:২৫ এএম, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

সিনিয়র ক্রিকেটারদের সরাতে চান ডমিঙ্গো

জিম্বাবুয়ে সফরে টেস্ট সেঞ্চুরি করার পরও অবসরের ঘোষণা দিলেন মাহমুদউল্লাহ। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান যদিও মাহমুদউল্লাহ টেস্ট থেকে অবসর নেননি বলে জানান। নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে কিপিং নিয়ে মুশফিকুর রহিম ও নুরুল হাসান সোহানের মধ্যে অহেতুক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ তোলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। ফলশ্রুতিতে অভিমানে টি ২০-তে আর কিপিং করবেন না বলে জানিয়ে দেন মুশফিক। তামিম ইকবাল টি ২০ বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তাকে ফেরানোর কোনো চেষ্টাই করেনি বিসিবি। বিসিবির একটি সূত্রের খবর, তামিমকে প্রথম পছন্দেই রাখেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ক্রিকেটার জানান, সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ অনেকদিনের। তারা অপমানিত বোধ করছেন। কোচের চিন্তাভাবনায়ও বিভাজন তৈরি হচ্ছে দলে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের ক্রিকেট পেছনের দিকে হাঁটবে। বিসিবির পরিচালক, টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে দূরত্ব বাংলাদেশ দলকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে। তামিম কেন বিশ্বকাপে খেলতে না গিয়ে নেপালে খেলতে চান, এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তামিমের যুক্তি, তিনি দীর্ঘদিন এই ফরম্যাটে খেলেননি। তাই সরে যাচ্ছেন। বাস্তব ঘটনা একেবারে উল্টো। টিম ম্যানেজমেন্টের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, তামিমকে বিশ্বকাপ দলে চাননি কোচ ও অধিনায়ক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিম ম্যানেজমেন্টের সূত্র জানায়, ‘কোচ তামিমকে টি ২০ বিশ্বকাপে চাননি। মাহমুদউল্লাহ ওপেনার হিসাবে লিটন দাস, মোহাম্মদ নাঈম ও সৌম্য সরকারের নাম বললেও তামিমের নাম বলেননি। তামিমকে দলে চান না, একথা না বললেও, তাকে চান একথাও বলেননি। তামিমের আত্মমর্যাদাবোধ প্রখর। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে সরে দাঁড়িয়েছেন।’ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি তাতে মাহমুদউল্লাহ ও তামিমের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই।’ এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে পছন্দ ও অপছন্দের তালিকায় ফেলে দিয়েছেন ডমিঙ্গো। কোচ কৌশলে সরাতে চান সিনিয়রদের। কোচ হওয়ার পর ডমিঙ্গো মাশরাফি মুর্তজার সঙ্গে কথা বলারই প্রয়োজন বোধ করেননি। মাহমুদউল্লাহকে টেস্ট থেকে সরে যেতে বলেন। মুশফিকের হাত থেকে কৌশলে কিপিং গ্লাভস কেড়ে নেওয়া হয়েছে। টি ২০ বিশ্বকাপ দলে তামিমের প্রয়োজনীয়তা দেখেননি কোচ। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বিদেশি কোচের সঙ্গে কাজ করা মাশরাফি মুর্তজা বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রায় ৯/১০ জন কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রত্যেক কোচ নিজের দুএকজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেন। আবার দুএকজনকে এতটাই অপছন্দ করেন যে, তাদের আর দেখতেই পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘কোচদের কারও প্রতি কঠোর কারও প্রতি নমনীয় হওয়া গোছানো দলকে অগোছালো করে তোলে। একপর্যায়ে প্রোফাইল ভারি করে চলে যান তারা। আমরা পড়ি বিপদে। আবার নতুন কোচ, নতুন পরীক্ষা, নতুন দাবি। নতুন কোচ এসে সিনিয়রদের দাপট মেনে নিতে চান না। তারা কৌশলে সিনিয়রদের আলাদা করার চেষ্টা করেন।’ কোচ ও সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে সেটা দলের জন্য খুবই হতাশার বলে মনে করেন সাবেক জাতীয় দলের কোচ সরওয়ার ইমরান। তিনি বলেন, ‘নৌকা নদীতে নামাতে হলে সেখানে ছেঁড়া-ফুটো থাকলে মাঝপথেই ডুবে যাবে। কোচ ও ক্রিকেটারদের মাঝে দূরত্ব থাকলে দলের জন্য সেটা কোনো সুখবর নয়। দুই পক্ষকেই কিছুটা ছাড় দিয়ে নমনীয় হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য কোচ ও ক্রিকেটারদের মধ্যে গ্যাপ দায়ী। তরুণরা অনেক সময় কোচদের কথা মেনে নিলেও সিনিয়ররা সেটা পারে না। গ্যাপ থাকলে দলের জন্য তা হুমকিস্বরূপ।’ বিসিবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কোচকেও কিছু বলা যাচ্ছে না, সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও না। এভাবে চলতে থাকলে দলের কাছে ভালো ফল আশা করা কঠিন।’
Link copied!