শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিনোভ্যাকের টিকাও অনুমোদন পেল

প্রকাশিত: ০৫:৪০ এএম, জুন ৭, ২০২১

সিনোভ্যাকের টিকাও অনুমোদন পেল

বাংলাদেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য এবার অনুমোদন পেল চীনের ‘সিনোভ্যাক লাইফ সায়েন্সেস কোম্পানি’ উদ্ভাবিত করোনা ভাইরাসের টিকা। সিনোভ্যাকের দেশীয় এজেন্ট ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লি. ‘করোনা ভ্যাক’ নামে এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে আবেদনের পর রোববার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদন দেয়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মজুত থেকে বাংলাদেশকে করোনার টিকা দিতে রাজি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রোববার এই তথ্য জানান। তবে কবে নাগাদ, কী পরিমাণ টিকা আসবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিনোভ্যাকের টিকা নিয়ে এ পর্যন্ত পাঁচটি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ সরকার। এর আগে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড, রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি, চীনের সিনোফার্মের তৈরি টিকার বিবিআইবিপি-সিওরভি (BBIBP-CorV) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মান বায়োএনটেকের উৎপাদিত করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া যাবে। এ টিকা ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়। এটি ইনঅ্যাক্টিভেটেড প্রযুক্তির টিকা। যা চীনের ‘ন্যাশনাল মেডিসিনাল প্রডাক্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’র (এনএমপিএ) অনুমোদন পায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। বিশ্বের ২২টি দেশে এই টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়া আগের টিকাগুলোর মতোই ‘করোনা ভ্যাক’ নিতে হবে দুই ডোজ করে। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। গত ১ জুন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি ব্যবহার্য টিকার তালিকায় যুক্ত হয় সিনোভ্যাকের এই টিকা। তবে সিনোভ্যাকের টিকা বাংলাদেশে কবে কীভাবে আসবে, এর দাম কত হবে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। এমনকি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা কোভিশিল্ড দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করে সরকার। তবে ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করলে টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় সরকার গত এপ্রিলের শেষ দিক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত করোনা প্রতিরোধী চারটি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। সম্প্রতি চীন সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের কিছু টিকা পাওয়ার পর বাংলাদেশে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে স্পুটনিক-ভি কেনার জন্য সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এছাড়া ফাইজার-বায়োএনটেকের এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা বাংলাদেশ পেয়েছে কোভ্যাক্স থেকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আসছে : বাংলাদেশকে নিজেদের মজুত থেকে করোনার টিকা দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রোববার এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ, কী পরিমাণ টিকা আসবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভালো সংবাদ হচ্ছে আমেরিকা টিকা দেবে আমাদের। সঠিক পরিমাণ এখনো জানি না। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ গণটিকাদান শুরু করলেও দুই চালানের পর আর দিতে পারেনি তারা। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬ কোটি অতিরিক্ত ডোজ থেকে কিছু টিকা পাঠাতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানায়। চলমান কূটনৈতিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের তৎপরতায় এই কাজে সফল হওয়ার খবর জানান মোমেন। তিনি বলেন, আমরা কোভিডের মধ্যে সাকসেস হওয়ার পর আরেক ঝামেলা। লোক বেশ কম মরছে বলে তারা আমাদের পাত্তা দেয় না। আমরা বেশ কষ্ট করে পাত্তায় আসছি। সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ না জানালেও ‘খুব শিগগির’ ওই টিকা পাওয়ার আশা প্রকাশ করে মোমেন বলেন, আশা করছি খুব শিগগিরই, আমাদের তারা টিকা দেবে। কোভ্যাক্স থেকেও পাব। তিনি বলেন, আমাদের তো দরকার অনেক। অন্য দেশের মতো না যে, ২০ হাজার, এক লাখ হলে হয়ে যাবে। আমার ১৬৫ মিলিয়ন লোক, আমার অনেক লাগে। ১৩০ মিলিয়নকে দিলেও ২৬০ মিলিয়ন লাগবে। এটা বিশাল বাজার। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে করোনার চিকিৎসা সরঞ্জামের একটি চালান আজ দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে দ্রুত ৫ মিলিয়ন করোনার টিকা স্পুটনিক-ভি আমদানি করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানি রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করতে পারবে। তিনি রাশিয়া থেকে দ্রুত করোনা টিকা আমদানির ক্ষেত্রে বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি হবে। চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি। আমরা বলেছি টিকা কিনতে চাই এবং তোমরা কোনো বাধা ছাড়াই জোগান দাও। চীন আমাদের বলেছে তারা কোনো বাধা ছাড়াই টিকা সরবরাহ করবে। চীনের সঙ্গে উৎপাদনের বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না’ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাদের দেশ থেকে সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য দল আসবে। তারা এসে সরেজমিন দেখে বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। এদিকে বাংলাদেশ টিকা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। রোববার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল বুলেটিনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা নিজেরাও টিকা তৈরি করতে চাই। এ নিয়ে বেশকিছু কাজ সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। বাংলাদেশে টিকা তৈরি করা হবে এ পরিকল্পনা নিয়ে আমরা যে কোনো সময় আলোচনায় আসতে পারব।
Link copied!