সিলেট জেলা বিএনপিতে প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছে। কমিটির আহ্বায়ককে বাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটির ৯ সদস্য এই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার সিলেট জেলা বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনকে ‘সরকারের ইন্ধনে বিপথগামী নেতাকর্মী বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির আয়োজন’ বলে দাবি করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার।
সিলেট নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আহমদ। সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল মান্নান, অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, মাহবুবুল হক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলা আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছেন। তাদের কথামতো জেলা সব ক’টি উপজেলা ও পৌর বিএনপির গঠন করা হয়। এসব কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করেন।
সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের লোকজন দিয়ে গঠিত একপেশে কমিটি বাতিলের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমান ঘোষিত কমিটিগুলোতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের পছন্দের ৬ জন করে নেয়ার নির্দেশ দেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলনের হাতে তারা প্রতিটি কমিটির জন্য ৬ জনের তালিকা দেন। কিন্তু এখানেও তাদের তালিকা বাদ দিয়ে মিলনকে ব্যবহার করে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছামতো ৬ জনের নাম যুক্ত করা হয়।
শুধু তাই নয়, সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম গং যেনতেনভাবে একটি কাউন্সিল করে আবার নেতৃত্বে আসার সর্বগ্রাসী তৎপরতায় জেলা আহ্বায়ককে সম্পূর্ণ পকেটস্থ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে দলকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় অবিলম্বে একপেশে কমিটি স্থগিত করে জেলা বিএনপিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সুদৃষ্টি কামনা করা হয়। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা বিএনপির একটি শক্তিশালী কাউন্সিল আয়োজনের ব্যাপারেও কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এদিকে সিলেট জেলা বিএনপির ব্যানারে আহূত (সোমবারের) সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। এ ব্যাপারে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এক বিবৃতিতে কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, আমি একাধিক সূত্রে জানতে পেরেছি, আজ সোমবার বিকালে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে কতিপয় বিপথগামী নেতাকর্মী জেলা বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে সরকারের ইন্ধনে জেলা বিএনপির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি কোনো কিছু অবগত নয়।
আহ্বায়ক ও আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো বিপথগামী নেতাকর্মীর জেলা বিএনপির দলীয় ব্যানার ব্যবহারের ভিত্তি নেই। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে জেলার আওতাধীন সব উপজেলা ও পৌর ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌর কমিটি তাদের আওতাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করেছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি একটি সুন্দর ও অর্থবহ কাউন্সিল আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, দলের এই দুঃসময়ে আওয়ামী সরকারের ইন্ধনে কতিপয় নেতাকর্মী জেলা বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা জেলা বিএনপির ব্যানারে নগরীতে আজ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যা দলের গঠনতন্ত্রপরিপন্থী এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।
এ সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে জেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সম্পর্ক নেই। তাই কথিত সংবাদ সম্মেলনে জাতির জাগ্রত বিবেক সাংবাদিক বন্ধুদের বিভ্রান্ত না হয়ে প্রকৃত সত্য অনুধাবনের অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিপথগামীদের ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেবেন।