শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সেঁক চুলার ভর্তা’ থেকে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’

প্রকাশিত: ১২:৪৬ পিএম, এপ্রিল ৬, ২০২২

‘সেঁক চুলার ভর্তা’ থেকে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’

রমজান মাস এলেই রাজধানীবাসী বিশেষ করে পুরান ঢাকার ইফতারিতে যে নামটি বেশি শুনে অভ্যস্ত, সেটি হলো ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। এই খাবারের নাম আগে ছিল ‘সেঁক চুলার ভর্তা’। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬০০ টাকা। প্রায় ৪০০ বছর আগে মোগল শাসনামলে বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে উঠা চকবাজার বিভিন্ন সব ব্যবসার জন্য দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। তবে সেখানে গেলে যে খাবার আপনার নজর কাড়বে, তা হলো ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। বিক্রেতার মুখে ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ ডাক শুনে থমকে দাঁড়াতে আপনি বাধ্য। সেই খাবার কিনতে দোকানে উপচে পড়ে। ‘এই খাবারের বিশেষত্ব কী? কীভাবেই এলো এই খাবার’ জানতে চাইলে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’- এর কারিগর ও বিক্রেতা মো. হোসেন জানান, প্রায় ৯০ বছর ধরে এ খাবার বিক্রির সঙ্গে জড়িত তারা। প্রথমে তৈরি করেন মোহাম্মদ কামাল মাহমুদ, যিনি কামেল মিয়া নামে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এই বিখ্যাত খাবারটি তারই সৃষ্টি। বটপাতার ডালিতে কামেল মিয়া ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি করতেন চকবাজারের গলিতে। কামাল মাহমুদের মৃত্যুর পর তার ছেলে জানে আলম, তার মৃত্যুর পর ছেলে আব্দুর রশিদ এবং বর্তমানে বিক্রি করছেন মো. হোসেন। বড় বাপের পোলায় খায় পাঁচমিশালি খাবার। সাধারণ ইফতারির চেয়ে এর স্বাদ ও উপকরণ অন্যরকম। এটি তৈরিতে আলু, ঘি, ডিম, গরুর মগজ, শুকনো ও কাঁচা মরিচ, গরুর কলিজা, মুরগির মাংসের কুচি, মুরগির গিলা কলিজা, সুতি কাবাব, গরুর মাংসের কিমা, চিড়া, ডাবলি, মিষ্টি কুমড়া, বুটের ডালসহ ১৫ পদের খাবার আইটেমের সঙ্গে ১৬ ধরনের মসলা মিশিয়ে ৩১ পদের মিশ্রণ তৈরি হয়। এই ৩১ পদের মিশ্রণের নামই বড় বাপের পোলায় খায়। দোকানে একটি বড় গামলায় এই ৩১ পদের খাবার হাতে মাখিয়ে রাখা হয়, তারপর ঠোঙায় করে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা হয়। এই খাবারের নাম এমন কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. হোসেন বলেন, এই খাবারের নাম আগে ছিল ‘সেঁক চুলার ভর্তা’। পরবর্তীকালে এর নাম হয় বড় বাপের পোলায় খায়। ছেলেদের পুরান ঢাকার ভাষায় ‘পোলা’ সম্বোধন করা হয়। রমজানে ইফতার কিনতে সাধারণত বাবার বড় ছেলেরাই দোকানে যায়। তাই লোকমুখে এই বিশেষ খাবারের নাম ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, চকবাজারে রমজানে যেসব খাবার পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম জালি কাবাব, হালিম, মুরগির এবং কোয়েলের রোস্ট, রুমালি রুটি, কবুতরের রোস্ট, খাসির গ্লাসি, বটি কাবাব, সুতি কাবাব, খাসির লেগ রোস্ট, দই বড়া, শাহী জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, পনির সমুচা, মুরগি মসল্লম, টানা পরোটা, শাহী পরোটা, প্যাঁচ পরোটা, হালিম, শিক কাবাব, হাড়িয়ালি কাবাব, কোফতা কাবাব, কাচ্চি, তেহারি, দম বিরিয়ানি, কাবলি পোলাও, চাপ পোলাও, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, নবাবি বিরিয়ানিসহ আরো নানা পদ। মিষ্টি খাবারের মধ্যে রয়েছে জাফরানি শরবত, কুলফি মালাই, লাচ্ছি, ফালুদা, লেবুর শরবত, পেস্তা বাদামের শরবত, মাঠা, লাবাং, তোকমা দানার শরবত, বেলের শরবত, গুড়ের শরবত, ফিরনি, দই, জর্দা, শাহী টুকরা, লাড্ডু, মনসুর, খাজালা ইত্যাদি।  
Link copied!