সাবেক বিএনপি নেতা সিলভার সেলিমের মালিকানাধীন সিলভার কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলের অডিটরকে তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। একই হিসাব বছরে (২০১৮-১৯) একাধিক অডিট রিপোর্ট প্রত্যয়নের মাধ্যমে কর ফাঁকিতে সহায়তার অভিযোগে তাকে ডাকা হয়েছে। ১৬ মার্চ শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
১০ ফেব্রুয়ারি ‘ঋণ নিতে অডিট জালিয়াতি’ শিরোনামে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির কর ফাঁকি অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইসি। ৪ মার্চ সিলভার কম্পোজিটের অডিট ফার্ম সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোংয়ের পার্টনার রমেন্দ্রনাথ বসাককে চিঠি দিয়ে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, করদাতা প্রতিষ্ঠানের একই হিসাব বছরের জন্য একই তারিখে আয় ও সম্পদের পরিমাণের ভিন্নতা প্রদর্শন করে ২ ধরনের অডিট প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ধরনের আয় ও সম্পদের পরিমাণের ভিন্নতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আয়কর ফাঁকি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ওই চিঠিতে একাধিক অডিট রিপোর্ট প্রত্যয়নের ব্যাখ্যা দিতে অডিটরকে ১৬ মার্চ শুনানির জন্য তলব করা হয়েছে। যদি অডিটর নির্দিষ্ট সময়ে শুনানিতে উপস্থিত না হন, তবে আয়কর আইনের ১৬৪(ইই) ধারা অনুযায়ী দণ্ডযোগ্য হিসাবে গণ্য করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৬৪(ইই) ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি সিআইসির চাহিদামাফিক তথ্য-দলিলাদি উপস্থাপনের মাধ্যমে সহায়তা না করেন, তাহলে এক বছর পর্যন্ত জেল অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সূত্র জানায়, জাল অডিট রিপোর্ট জমার মাধ্যমে কর ফাঁকি বন্ধে এনবিআর কাজ করছে। ইতোমধ্যে রিটার্নের সঙ্গে কোম্পানি করদাতাদের জমা দেওয়া অডিট রিপোর্ট আইসিএবির (ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ) ডিভিএস (ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম) ডেটাবেজের সঙ্গে ক্রসচেক করে জমা নিতে মাঠপর্যায়ের কর অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি করা হলে জাল অডিট রিপোর্ট জমা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
এছাড়া ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাংকগুলো ডিভিএস ডেটাবেজে অডিট রিপোর্ট ক্রসচেক করলে জাল রিপোর্টের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার প্রবণতাও শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। এতে পুরো আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, শুধু সিলভার কম্পোজিট নয়, আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানের জাল অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে কর ফাঁকি ও ব্যাংক ঋণ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও অডিটর ফার্মকে পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে। একাধিক রিপোর্ট প্রত্যয়নের মাধ্যমে অডিটররা পুরো আর্থিক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। সিলভার কম্পোজিটের অডিটরের কাছে জাল রিপোর্ট প্রত্যয়নের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
কারণ আয়কর আইনে জাল অডিট জমার দণ্ড আরোপের বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে আয়কর অফিসে ও ব্যাংকে ঋণের জন্য জমা দেওয়া রিপোর্ট ক্রসম্যাচিং করা হবে।
আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৫(এএ) ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি আয়কর রিটার্নের সঙ্গে অথবা পরে অডিট রিপোর্টে অসত্য তথ্য দেন কিংবা অডিট রিপোর্টে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের স্বাক্ষর থাকা সত্ত্বেও স্বাক্ষর যুক্ত না করেন তবে তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন। এ অপরাধের জন্য সর্বনিম্ন ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
১৭ জানুয়ারি সিলভার কম্পোজিটের অডিট জালিয়াতির তথ্য জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে এফআরসি। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকে জমা দেওয়া ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের অডিট রিপোর্ট পুনঃনিরীক্ষণে দেখা গেছে, ওই বছরে কোম্পানির মোট বিক্রয়ের পরিমাণ ৭৩৪ কোটি টাকা ও সংরক্ষিত আয়ের পরিমাণ ৩৯০ কোটি টাকা। কিন্তু কোম্পানি থেকে পাওয়া রিপোর্টে ফিন্যান্সিয়াল ফিগারগুলো অনেক কম পাওয়া গেছে।
অডিট রিপোর্ট দুটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঋণের জন্য ব্যাংকে জমা দেওয়া অডিট রিপোর্টে টার্নওভার দেখানো হয়েছে ৭৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু কোম্পানির রিপোর্টে টার্নওভার দেখানো হয়েছে ৪৯৯ কোটি টাকা। একইভাবে প্রতিটি খাতেই বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এক রিপোর্টে গ্রস প্রফিট দেখানো হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা এবং আরেকটিতে ৭৪ কোটি টাকা। পরিচালন মুনাফা, কর-পূর্ববর্তী মুনাফা, সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিং), চলতি সম্পদ, মোট সম্পদ ও ইকুইটিতে বিশাল পার্থক্য রয়েছে।