মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন পূরণে ১৮৫৩ কি.মি. পথ পাড়ি

প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, জুন ৪, ২০২২

স্বপ্ন পূরণে ১৮৫৩ কি.মি. পথ পাড়ি

‘তীরে দৃষ্টি হারানোর সাহস না থাকলে মানুষ নতুন মহাসাগর আবিষ্কার করতে পারে না’— কথাটি আন্ড্রে গিডের একটি বাণী হলেও; এর গভীরে রয়েছে বেশ মাহাত্ম্য। কর্মজীবনে একঘেয়েমিকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে চাঙা করতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। আর সেটি যদি হয় নিজের অলিখিত স্বপ্ন, তাহলে তো কথা-ই নেই। এমনই এক স্বপ্নবাজ যুবক সাজ্জাদ হোসেন চিশতী, পেশায় গণমাধ‌্যমকর্মী। যার কাছে ভ্রমণ মানেই সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ‘মহৌষধ’। সাজ্জাদ চিশতীর ভ্রমণের নেশা বেশ আগে থেকেই। ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন জেলের দর্শনীয় স্থান। শুধু তাই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ২৮টি দেশ। এসব ছাপিয়ে নতুন করে তার স্বপ্ন জাগে টেকনাফ টু তেতুলিয়া ভ্রমণের। ফলে দেরি না করে স্বপ্ন পূরণের লক্ষে বেরিয়ে পড়েন ৪০-এর এই যুবক। জানা কথা, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার দূরত্ব ৯২০ কিলোমিটার। তবে সেটি চিশতীর জন্য ছিল বাড়তি কষ্টের। কারণ রাজধানী ঢাকা থেকে তার সফর শুরু হওয়ায়, ঘুরতে হয়েছে ১৮৫৩ কিলোমিটার। যেখানে ২৩ ঘণ্টার পথ যেতে লেগেছে ৪৭ ঘণ্টা। কেন এই দেশভ্রমণ— এমন প্রশ্নে সাজ্জাদ হোসেনের উত্তর, জীবনের তাগিদে; সময়ের প্রয়োজনে, মানুষের ভালোবাসার খুঁজে আর লক্ষ্য অর্জন ও ভ্রমণের মাঝে জীবনের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায় বলেই এই দেশভ্রমণ। ভ্রমণ তার তীব্র নেশা— এমনটা জানিয়ে বলেন, মানুষের বড় হওয়ার নেশা থাকে। আবার টাকা কামানো বা আরও বিভিন্ন নেশা থাকে। তবে আমার বরাবরই ভ্রমণের নেশা। নেই কোনো উচ্চাশা, বদভ্যাস। আছে তীব্র ভ্রমণের নেশা। যখনই সুযোগ পেয়েছি, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। তিনি বলেন, এবার মনে হলো ‘চ্যালেঞ্জিং ও অসাধ্য’ একটানা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া ঘুরে দেখবো। সেই ইচ্ছে থেকে বেরিয়ে পড়া। ঢাকা থেকে রওনা হয়ে গাজীপুর, টাঙ্গাইল। এরপর সিরাজগঞ্জে সকালের নাস্তা শেষে বগুড়া, গাইবান্ধা হয়ে রংপুর গিয়ে দুপুরে খাওয়া-রাত্রীযাপন। তারপর সকালে নাস্তা শেষে আবারও রওনা। নীলফামারী, লালমনিরহাট হয়ে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া। আবার শুরু হয় যাত্রা তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ। পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁও এসে দুপুরের খাওয়া। তারপর দিনাজপুর, জয়পুরহাট হয়ে বগুড়ায় রাত্রীযাপন। সকালে নাস্তা শেষে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এসে দুপুরের খাবার। তারপর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লায় রাত্রীযাপন। সকালে নাস্তা শেষে ফেনী, নোয়াখালী। আর চট্টগ্রামে দুপুরের খাওয়া শেষে রওনা। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত টেকনাফ (কক্সবাজার)। এই যাত্রা তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ ৯২০ কিলোমিটার মানে ২৩ ঘণ্টার জার্নি। যেহেতু ঢাকা থেকে গিয়েছি, আমার লেগেছে ১৮৫৩ কিলোমিটার বা ৪৭ ঘণ্টা। এই যাত্রায় সাজ্জাদ চিশতীর একসাথে দেখা হলো দেশের ১৯ জেলা, ৯২০ কিলোমিটার, ২৩ ঘণ্টার পথ। বলেন, ‘আমার এক বিরল ও অসাধারণ অভিজ্ঞতা হলো। বাংলাদেশের ৬২ জেলা সফর শেষ হলো। এই সফরে সাথে ছিলেন আমার মা, স্ত্রী ও বোন।’ ঘুরে বেড়ানো বা ভ্রমণ মানেই নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চয়। এটা এক ধরণের প্রাপ্তিও বলা চলে। প্রতিটি জেলার মানুষের সাথে মিশতে পারা; তাদের জীবন-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে কাছ থেকে দেখা আর ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনই প্রাপ্তি— গল্পের শেষটা এভাবেই টানের ভ্রমণবিলাসী এই যুবক।
Link copied!