মারা গেছেন পলাতক বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী। তবে কোথায় তার মৃত্যু হয়েছে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে ভিন্ন জায়গার নাম।
সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল কাহের শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অন্তত তিন মাস আগে ঢাকায় হারিছ চৌধুরী মারা যান। পারিবারিকভাবে এটা জানানো হয়নি।
হারিস চৌধুরীকে ঢাকাতেই দাফন করা হয় বলে জানান কাহের। তবে কোথায় দাফন করা হয় তা তিনি বলতে পারেননি।
অন্যদিকে, সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। আগস্ট মাসে হারিছ চৌধুরী লন্ডনে করোনা আক্রান্ত হন। এরপর তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায়ও ফেরেন। কয়েকদিন পর তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। করোনার ধকল কাটিয়ে উঠলেও তার ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এতে তার ফুসফুসের সংক্রমণ বেড়ে যায়। পরবর্তীতে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তবে কোথায় দাফন হয়েছে সেটা তিনি বলেননি।
আরও পড়ুন: তিন মাস আগে মারা গেছেন বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী
সে সময় হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদটি তার মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ফোনে দেশে জানালেও তাদের বারণ করার কারণে খবরটি কাউকে জানাননি, বলেন আশিক চৌধুরী।
আশিক চৌধুরী জানান, হারিছ চৌধুরী দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার কারণে তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে পুরো ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে পড়ে। ফলে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও তিনি ফুসফুস জটিলতায় ভোগেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীর সাত বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়।
এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরী ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে আসেন। রাত ১২টার পর তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মোবাইল ফোনে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তার আগেই তিনি সরে পড়েছিলেন। কিছুদিন সিলেটে এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকার পর ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে ভারতে চলে যান। ভারতের আসামে করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তাঁর নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন। সূত্র জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যও দেখভাল করতেন ওখানে থেকেই।
হারিছ চৌধুরী স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকতেন। তাঁর ছেলে জনি চৌধুরী পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। মেয়ে মুন্নু চৌধুরী ব্যারিস্টার।