মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হোটেলে চিকিৎসকের লাশ: ‘বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায়’ খুন

প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, আগস্ট ১২, ২০২২

হোটেলে চিকিৎসকের লাশ: ‘বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায়’ খুন

দীর্ঘদিন প্রেমের পর বিয়ের পিঁড়িতে না বসায় নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে ডা. জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীকাকে (২৭)। নিহতের প্রেমিক রেজাউল করিম রেজা একজন বখাটে। গাজীপুরে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় চাকরি চলে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন বেকার সময় কাটাচ্ছিল সে। আর এসব কারণেই মেয়েকে বখাটে ও বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি পরিবার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নৃশংসভাবে জান্নাতুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের বাবা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক শফিকুল আলম। বৃহস্পতিবার রাতে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মো. রেজাউল করিমকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চিকিৎসক জান্নাতুলকে গলা কেটে হত্যার পরপরই রেজা চট্টগ্রামে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাতে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছে রেজা। এদিকে প্রেমের সম্পর্কের জেরে জান্নাতুল ও রেজা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছে। থেকেছে বিভিন্ন হোটেলেও। তাদের প্রেমের সম্পর্ক জান্নাতুলের পরিবার মেনে না নিলেও রেজা বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু রেজার চরিত্রগত সমস্যা থাকায় ও বখাটে হওয়ায় মেয়েটির পরিবার বিয়েতে রাজি ছিল না। নিয়মিত মেলামেশার কারণে গতকাল রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ওঠে তারা। দীর্ঘদিন ধরে এ ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে হোটেল কক্ষেই প্রেমিকা জান্নাতুলকে ছুরিকাঘাত ও নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে রেজা। শফিকুল আলমের দাবি, বিয়েতে রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে জান্নাতুলকে গলা কেটে হত্যা করেছে রেজা। তিনি মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতেই হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তিনি। পুলিশের সন্দেহ, ঘাতক প্রেমিক রেজাউল করিম রেজা বেকার হওয়ায় বিয়ে দিতে রাজি ছিল না জান্নাতুলের পরিবার। এ নিয়ে প্রেমের সম্পর্কে কলহ চলছিল। কিন্তু তারা দুজনই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় চাইলেই তো পরিবারের অমতে বিয়ে করতে পারত। তা হলে কি এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে মোটা অঙ্কের টাকার দেনা-পাওনা, প্রেমিকের অন্য কোনও সম্পর্ক জেনে যাওয়া, অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া কিংবা সম্পর্কের বাইরের কাউকে দিয়ে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা নিহিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে জান্নাতুলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মো. শফিকুল আলম বলেছেন, জানের বদলে জান চাই। খুনি রেজার ফাঁসি চাই। এর আগে গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে কলাবাগান থানা পুলিশ। এরপর ময়নাতদন্তে জন্য মধ্যরাতে ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। কলাবাগান থানা পুলিশ বলছে, বুধবার সন্ধ্যার পর পান্থপথে ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামের আবাসিক হোটেলের ৩০৫ নম্বর রুমে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে রেজাউল করিম রেজা নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে উঠেছিলেন জান্নাতুল। এরপর রেজাউল জান্নাতুলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। শফিকুল আলম বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনবাড়ি গ্রামে। রাজারবাগ ২ নম্বর মোমেনবাগে দোলনচাঁপা ভবনে থাকেন। মগবাজার কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করেন জান্নাতুল। এরপর ঢামেক হাসপাতালে গাইনি বিষয়ে একটি কোর্সে অধ্যয়নরত ছিলেন। তিনি আরও বলেন, বুধবার সকাল ৮টার দিকে জান্নাতুল বাসা থেকে বের হন ক্লাসের কথা বলে। রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরবেন বলে জানান। তবে বাসায় না ফেরায় বিকাল ৫টায় দিকে তার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। অভিযুক্ত রেজাউল করিম রেজার পরিচয় সম্বন্ধে তিনি বলেন, মেয়ে একদিন তাকে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার। গাজীপুর জয়দেবপুর একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিল। জেনেছি ব্যাংকে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে চাকরি হারিয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না। মামলার কপিতেও রেজার পরিচয় ও ঠিকানা অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, জান্নাতুলের খুনের পেছনে প্রেমের কলহ কাজ করে থাকতে পারে। বিশেষ করে নিহত জান্নাতুলের পরিবার তার প্রেমিক রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিল না। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হতো। হয়তো এ কলহের জন্যই পরিকল্পিতভাবে আবাসিক হোটেলে নিয়ে জান্নাতুলকে হত্যা করা হয়েছে। ডিসি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, এর আগেও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা ওই আবাসিক হোটেলে বেশ কয়েকবার থেকেছে। এদিকে জান্নাতুলের সুরতহাল প্রতিবেদনে কলাবাগান থানার এসআই নার্গিস আক্তার উল্লেখ করেন, তার থুতনি, ঠোঁট ও গলায় সাড়ে আট ইঞ্চি, বাম কাঁধে দেড় ইঞ্চি, দুই বৃদ্ধাঙ্গুলিতে, বুকের মাঝখানে, পেটে ছয়টা কাটা জখম রয়েছে। এ ছাড়া তার পিঠে একটি, বাম পায়ের হাঁটুর ওপর ও হাঁটুর নিচে কাটা জখম রয়েছে। তিনি অন্তঃসত্ত্বা কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা তাও ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। কলাবাগান থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের অপরাধী তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে।
Link copied!