বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ভুয়া এনজিওর মলিক

প্রকাশিত: ০৮:১০ এএম, অক্টোবর ১৪, ২০২১

১০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ভুয়া এনজিওর মলিক

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চান্দহর বাজারে বেস্টওয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (বিএমসি এন্টারপ্রাইজ) নামে এক এনজিওর মালিক লাপাত্তা। প্রায় দু হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে অন্তত ১০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে উধাও হন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন (৪১) ওই এলাকার মাধবপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইয়াকুব মেম্বারের ছেলে। অভিযোগে জানা গেছে, গ্রাহকদের আমানতের টাকা দিয়ে বিভিন্ন স্থানে তার নামে গড়ে তুলেছেন ১০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, গ্রাহকরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইলে তিনি ‘দিই’, ‘দিচ্ছি’ বলে ঘোরাতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের চাপের মুখে ৯ অক্টোবর আফজাল হোসেন এলাকা থেকে উধাও হন। এরপর থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে তালাবদ্ধ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চান্দহর বাজারে মজিবর রহমানের ভবন ভাড়া করে মাইক্রো ক্রেডিট অথোরিটির নিবন্ধন ছাড়াই কোনো নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে আফজাল হোসেন ২০১২ সাল থেকে বিএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। তারা জানান, এরপর এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে লাখ প্রতি মাসিক এক থেকে দেড় হাজার টাকা মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। আর তা দিয়েই তিনি নিজের মালিকানায় গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে ঢাকায় বালাদ মেটাল, সাভারে শেফা হোমিও হল, বালাদ বেকারি, মানিকনগরে বালাদ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা, মাধবপুরে ইকরা আধুনিক উচ্চ বিদ্যালয়, চান্দহরে শেফা ফার্মেসি, বালাদ মুদি স্টোর ও গার্মেন্টস ব্যবসা। সরেজমিন, বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে চান্দহর বাজারে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। ওই এলাকার গ্রাহক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি দেড় বছর আগে লাখ প্রতি মাসিক ১ হাজার টাকা লাভে বিএমসিতে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলেন। দু-তিন কিস্তিতে লাভের টাকা পেয়েছেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে তিনি লাভ তো দূরের কথা মূল টাকাও পাচ্ছেন না। তিনি আরো বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবেও কয়েকজন মিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে রেখেছিলাম। ওই টাকাও নিয়েও চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অনেকেই লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত জমা রেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অপর গ্রাহক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারের কষ্টার্জিত প্রায় দেড় লাখ টাকা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা রেখেছি। মালিকের গা-ঢাকা দেওয়ার খবর শুনে আমাদের হতাশায় দিন কাটছে। বর্তমানে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এলাকায় ফিরে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এলাকায় ফিরছেন না তিনি। অফিস সংলগ্ন বাড়ির জনৈক হবি মিয়ার কন্যাও ওই প্রতিষ্ঠানে তাদের টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করেন। গ্রাহকরা তাদের কষ্টার্জিত আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করা বিষয়ে এলাকাবাসী জানান, তিনি মোবাইল খোলা রেখেছেন এবং যোগাযোগ রাখছেন। তাই আমরা আশা করি তিনি ফিরে এসে আমাদের টাকা বুঝিয়ে দেবেন। তা ছাড়া তিনি এলাকার সম্ভ্রান্ত ও ধার্মিক পরিবারের সন্তান। অনুমোদন নেই এমন সংস্থার কাছে কেন টাকা জমা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এলাকাবাসী বলেন, আফজাল হোসেন এলাকার স্থানীয়। তার পারিবারিক ঐতিহ্য ভালো। এসব বিবেচনায় আমরা টাকা জমা দিয়েছি। অভিযুক্ত বিএমসি এন্টারপ্রাইজের মালিক মাওলানা মো. আফজাল হোসেন ১০ কোটি নয় গ্রাহকদের আমানতের ৭ কোটি টাকা জমা রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, করোনায় ব্যবসায়িক ধসের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায় বিনিয়োগসহ সব মিলিয়ে এখনো চার কোটি টাকার ওপরে সম্পদ আছে। আমি আস্তে আস্তে গ্রাহকদের আমানতের পুরো টাকা পরিশোধ করে দেব। তার এনজিওর অনুমোদন আছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা সমবায় অফিসার আখিনুর ইয়াসমিন বলেন, আমার জানামতে বিএমসিএস নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেই এবং আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেয়নি।
Link copied!