বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১ টাকায় পাকিস্তানি ২ রুপি

প্রকাশিত: ০৯:২১ এএম, অক্টোবর ১৭, ২০২১

১ টাকায় পাকিস্তানি ২ রুপি

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অর্থনৈতিক নানান সূচকে পাকিস্তানের তুলনায় বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি রুপির চেয়ে এখন দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশি টাকার মান। বাংলাদেশের ১ টাকায় এখন মিলছে পাকিস্তানের ১ দশমিক ৯৯ রুপি। যা স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের ১ রুপিতে মিলত বাংলাদেশের ১ দশমিক ৬৫ টাকা। গেল কয়েক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান খানিকটা কমলেও বাংলাদেশি মুদ্রার মান পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দ্বিগুণ হয়েছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারের জন্য ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা গুণতে হয়েছে। আর প্রতি ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে প্রায় ১৭০ পাকিস্তানি রুপি। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ১০০ টাকার জন্য এখন ১৯৯ দশমিক ২৯ পাকিস্তানি রুপি খরচ হচ্ছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নয়নে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর নতুন কোনো তথ্য নয়। দু’দেশের মধ্যে নানা সূচকে বাড়ছে ব্যবধান। আর এর প্রভাব পড়েছে দুই দেশের মুদ্রার মানেও। ‘এক সময়ের শূন্য হাতে শুরু হওয়া বাংলাদেশ এখন এগিয়ে চলছে আপন গতিতে। বেকারত্ব দূর, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মমুখী শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ থেকেই এখন এগিয়ে বাংলাদেশ।’ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে। এ দেশের তুলনা চলে ভারতের মতো দেশের সঙ্গে। পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করার দিন শেষ। ‘আমাদের এখন সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া-ভিয়েতনামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে হবে। তবে আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই আরও সংস্কার করতে হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে; কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হবে।’ বর্তমানে রুপির দর স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি প্রথম মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সময় যুক্তরাজ্যের ১ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে পাওয়া যেত বাংলাদেশি ১৮ দশমিক ৯৬ টাকা। তখন পাউন্ডের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রার মান ছিল ১১ দশমিক ৪৩ রুপি। সেই হিসাবে তখন ১ পাকিস্তানি রুপির বিপরীতে বাংলাদেশকে খরচ করতে হতো ১ দশমিক ৬৫ টাকা। এখন ঠিক এর উল্টো চিত্র। ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ১ টাকায় পাওয়া যেত ১ দশমিক ০৭ পাকিস্তানি রুপি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তা দাঁড়ায় ১ দশমিক ২৫ রুপিতে। ২০২০ সালের আগস্টে ১ টাকার বিপরীতে ১ দশমিক ৯৭ রুপি পাওয়া যেত। মাঝে রুপি কিছুটা শক্তিশালী হওয়ায় চলতি বছরের মে মাসে ১ দশমিক ৭৯ রুপিতে বিনিময় হতো ১ টাকা। তবে তারপর থেকে আবারও দর হারানোয় ১ টাকায় বর্তমানে বিনিময়মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৯৯ রুপি। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের রুপির দরপতন অব্যাহত আছে। কমতে কমতে এখন ডলারের বিপরীতে দাম ১৭০ রুপি ছুঁইছুঁই হয়ে গেছে। এর আগে কখনও দেশটির মুদ্রা এতটা মান হারায়নি। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি ডলারের জন্য ৮৫ দশমিক ৬০ টাকা গুণতে হয়েছে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ১০০ টাকার জন্য এখন ১৯৯ দশমিক ২৯ পাকিস্তানি রুপি খরচ হচ্ছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম ১৬৭ রুপি ঠিক করে দিলেও স্থানীয় মুদ্রাবাজারে দাম আরও বেশি। মে মাসে রুপির বিপরীতে ডলার সর্বনিম্ন স্পর্শ করেছিল যখন এটি ১৫১ দশমিক ১ রুপি। আগস্টে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রাবাজারে বিনিময় হার দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৬৮ দশমিক ২ রুপি। গত চার মাসে রুপির দর কমেছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আশরাফ আলী মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে কাজ করতেন। ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ’ শিরোনামে একটি বইও লিখেছেন তিনি। সেই বইতে তিনি লিখেন, ‘ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ হয় আশির দশকের শুরুর দিকে। তবে ১৯৭২ সালেও আমরা ডলারের সঙ্গে টাকার একটি বিনিময় হার বের করেছিলাম। তখন এক ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৮৬ টাকা এবং পাকিস্তানের ৪ দশমিক ৭৬ রুপি ছিল।’ তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির দীর্ঘকাল পরও পাকিস্তানের মুদ্রা বেশ শক্তিশালী ছিল। তবে সেই অবস্থানে এখন আর নেই দেশটি। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ঘাটতি, বৈদেশিক ঋণ ও মূল্যস্ফীতির চাপে রুপির অবস্থান এখন বেশ নাজুক। টাকা এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রায় পরিণত হয়েছে। সৈয়দ আশরাফ আলী বলেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হলেও বাংলাদেশে নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন শুরু ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। এর আগে পাকিস্তানের রুপি দিয়েই হতো লেনদেন। তবে বৈদেশিক লেনদেনের জন্য বিনিময় হার নির্ধারণ করতে হয়েছিল টাকা প্রচলনের আগেই। পাকিস্তানি রুপির পতন ২০০৮ সালকে ধরা হয় পাকিস্তানের রুপির বিনিময় হারের পতনের বছর। ওই বছর মূল্যস্ফীতি ও চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৬১ থেকে এক ধাক্কায় ৭৯ রুপিতে পৌঁছায়। ওই বছরের আগস্টে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে রুপির পতনের সাময়িক অবসান ঘটে। গত এক দশকে মুদ্রার মান অর্ধেকে নেমেছে পাকিস্তানে। ২০১১ সালের নভেম্বরেও পাকিস্তানি ৮৬-৮৭ রুপিতে মিলতো ১ মার্কিন ডলার। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এক ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানকে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৪ থেকে ১০৫ রুপি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এক ডলারের দর ছিল ১০৯ রুপি। আর বর্তমানে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রাবাজারে বিনিময় হার দাঁড়ায় সর্বোচ্চ প্রায় ১৭০ রুপি। গত তিন অর্থবছরেই পাকিস্তান প্রায় ৭ লাখ কোটি রুপির বাজেট হয়েছে। প্রতিবারই ৩ লাখ কোটি রুপির বিশাল ঘাটতি ধরা হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার মতো। পাকিস্তানের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশের রিজার্ভের অর্ধেকের কম। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
Link copied!