শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩০ নভেম্বরই বরখাস্ত হন কোচ ডমিঙ্গো

প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ডিসেম্বর ৬, ২০২১

৩০ নভেম্বরই বরখাস্ত হন কোচ ডমিঙ্গো

‘অধৈর্য হওয়ার কিছু নেই। আমরা ঠিক করেছি, জানুয়ারিতে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের হাতে এই মাসটাও সময় আছে’—সভাপতি নাজমুল হাসানের বক্তব্যে মনে হতে পারে রাসেল ডমিঙ্গো ইস্যুতে ‘ধীরে চলো নীতি’ই নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যদিও দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনের ভেতরে জাতীয় দলের হেড কোচের ভাগ্য নির্ধারণে ধৈর্যের প্রতিফলন নেই। বরং দ্রুততার সঙ্গেই এই দক্ষিণ আফ্রিকানকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়ায় চলে গেছে তারা। সেটি গত পরশু সন্ধ্যায় নাজমুল সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার চার দিন আগেই। ডমিঙ্গোকে বরখাস্তের চিঠি জানাচ্ছে, তাঁকে বিদায় করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ৩০ নভেম্বরই নিয়েছে বিসিবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালকের বক্তব্য দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর সে খবর ছাপা হয়, ‘‘নিউজিল্যান্ড যাচ্ছেন ‘বরখাস্ত’ ডমিঙ্গো’’ শিরোনামে। আগামী ৯ ডিসেম্বর দুই টেস্টের সফরে নিউজিল্যান্ডের পথে রওনা হচ্ছে মমিনুল হকের দল। সেখানে কোয়ারেন্টিন শেষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে তবেই মূল সিরিজে ঢুকবে বাংলাদেশ। ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম টেস্ট, দ্বিতীয়টি শুরু ৯ জানুয়ারি। বরখাস্তের চিঠি বলছে, এরপর আর বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে দেখা যাবে না ডমিঙ্গোকে। ডমিঙ্গোকে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এড়াতে অপেক্ষার উপায় ছিল না বিসিবির। গত ১ ডিসেম্বর থেকেই এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচের সঙ্গে দুই বছরের নতুন চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এর প্রথম এক বছর আবার ‘গ্যারান্টিড পিরিয়ড’। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে এক মাস কাজ করিয়ে চাকরিচ্যুত করলে দিতে হবে বাকি ১১ মাসের বেতন। প্রতি মাসে ১৭ হাজার মার্কিন ডলার হিসেবে সব মিলিয়ে অঙ্কটা প্রায় দুই লাখ ডলার। তা নিয়ে নিজেদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে বিসিবি কম খরচের বিকল্প পথও খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছিলেন সংস্থার এক পরিচালক। আইনজীবীর পরামর্শে বিসিবিও ডমিঙ্গোকে বরখাস্ত করার জন্য বেছে নেয় তাঁর সঙ্গে আগের চুক্তির শেষ দিনটি, অর্থাৎ ৩০ নভেম্বর। নতুন চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগেই চাকরিচ্যুত করা হলে আইনগত ঝামেলায় পড়তে হবে না বলে বিসিবিকে আশ্বস্ত করেন পরামর্শক আইনজীবী। কালের কণ্ঠের হাতে আসা ডমিঙ্গোকে বরখাস্তের চিঠিতে তাই উল্লিখিত তারিখ ৩০ নভেম্বর। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠির বিষয়, ‘নোটিশ অব টার্মিনেশন অব এমপ্লয়মেন্ট’। যাতে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট থেকে কার্যকর আপনার চাকরির চুক্তি এবং পরবর্তী যোগাযোগের ভিত্তিতেই আমরা আপনাকে লিখছি। আপনার অবগতির জন্য জানিয়ে রাখতে চাই, চুক্তির ১৮.১ ধারা অনুসারে কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই বিসিবি আপনাকে চাকরিচ্যুত করার অধিকার রাখে। চুক্তির সেই ধারাবলে বিসিবির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপনাকে তাত্ক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটিও জেনে রাখুন, এ ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আপনি পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে তিন মাসের বেতনও। আপনার জন্য আমাদের শুভ কামনা থাকছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের সকল কর্মক্ষেত্রে আপনার সাফল্যও কামনা করছি আমরা।’ নিজাম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এবং ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খানকে। বিসিবির সঙ্গে ডমিঙ্গোর আগের দুই বছরের চুক্তি শেষ হয়েছিল গত আগস্টে। তবে সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায় সেটি ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কুড়ি-বিশের সিরিজ জিতে বিশ্ব আসরে যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে নতুন চুক্তি করার প্রেক্ষাপট গত পরশু বর্ণনা করেছেন নাজমুল। তাতে ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে ডমিঙ্গোর সঙ্গে চুক্তিতে বাধ্য হওয়ার স্বীকারোক্তিও যেন ছিল, ‘বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে রাসেল ডমিঙ্গো আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানায় যে তার একটা ভালো প্রস্তাব আছে। ও জানতে চাচ্ছিল যে আমরা ওকে নেব, নাকি নেব না? যদি আমরা তাকে রাখি, তাহলে সে থাকবে। আর যদি না রাখি, তাহলে সে ওই জায়গায় (নতুন চাকরি) কমিটমেন্ট দিয়ে দেবে। এ রকম একটা পরিস্থিতি ছিল। আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি (নতুন কোচ) করেছিলাম। দেখলাম যে ওই সময়ে আমরা কোনো কোচ পাব না। পেলেও বিশ্বকাপের পরপরই একজন নতুন কোচ আনব কি না, দ্বিধা ছিল তা নিয়েও। আমরা যাদের খুঁজছিলাম, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০২২) পর্যন্ত বুকড। এসব বিষয় চিন্তা করে বোর্ড সেসময় সিদ্ধান্ত নেয় তার মেয়াদ বৃদ্ধি করবে।’ বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর নতুন চুক্তির প্রথম এক বছরের বাধ্যবাধকতা হয়ে ওঠে গলার ফাঁস। আইনজীবীর পরামর্শে সেই ফাঁস খুললেও এখন পর্যন্ত ডমিঙ্গোকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে লুকোছাপা।
Link copied!