বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩৬ বছর ধরে রাজাকারের নামে কলেজ

প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ডিসেম্বর ৬, ২০২২

৩৬ বছর ধরে রাজাকারের নামে কলেজ

৩৬ বছর ধরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার একটি কলেজের নাম স্থানীয় এক রাজাকারের নামে রয়েছে। বছরের পর বছর নামটি পরিবর্তনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেও নামটি পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। এতে ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করেছেন ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা। তাদের দাবি দ্রুত নামটি পরিবর্তন করা হোক। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে নামটি পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। কলেজটির নাম ‘ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজ’। মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার ছিলেন চিহ্নিত রাজাকার ও শান্তি কমিটির পরিচালক। জব্বারের মদদে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট চালায় পাক বাহিনী। সেই আব্দুল জব্বারের নামে ১৯৮৬ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ধর্মপুর ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন নামকরণ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। পরে ২০১৬ সাল থেকে কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও স্থানীয় সচেতন মহল নামটি পরিবর্তনে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসলেও এখন পর্যন্ত নামটি পরিবর্তনে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। কলেজের পক্ষ থেকে নাম পরিবর্তনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও ফলাফল পাওয়া যায়নি। বার বার শুধু আশ্বাস মিলেছে। ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিহাব মিয়া জানান, আমরা বহু মিটিং মিছিল আন্দোলন সংগ্রাম করেছি কিন্তু রাজাকারে নামটি পরিবর্তন করতে পারিনি। কেন এবং কী কারণে নামটি পরিবর্তন হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই। আমরা চাই এই কলেজটির নাম পরিবর্তন করা হোক। আমরা কলেজের নামের সাথে রাজাকারের নামটি উচ্চারণ করতে চাই না। রুকু ইয়াছমীন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছে তাদের নামে যে আজও এই কলেজটি আছে এটা ভাবতে আমাদের কষ্ট হয়। এই কলেজের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই দ্রুত যেন রাজাকারে নামটি অপসারণ করা হয়। স্থানীয় তাজুল ইসলাম নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল জব্বার স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী ছিলেন। শান্তি কমিটির পরিচালকও ছিলেন। জব্বারের দ্বারা এই অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করছি মৃত্যুর আগেই যেন এই কলেজ থেকে আব্দুল জব্বারের পরিবর্তে অন্য কোনো নামকরণ করা হয়। রাজু মিয়া নামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দেশের জন্য মাটির জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের কারো নামে যদি এই কলেজটি নাম হতো তাহলে শান্তি পেতাম। এই রাজাকার আব্দুল জব্বারের নামে ধরে কলেজটি নাম নিতে ঘৃণা হয়। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো শক্তির নামে অথবা স্থানীয় প্রসিদ্ধ কোনো স্থানের নামে একটি কলেজটির নামকরণ করা হোক। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম জানান, দীর্ঘ দিন ধরে কলেজটির নাম পরির্তনে চেষ্টা করে আসছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয়ে অনেক ঘুরেও আজ অবধি আশার আলো দেখতে পারিনি। আমি মনে করি প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা ঘাপটি মেরে বসে থাকা অপশক্তির কারণে আমাদের এই কলেজ থেকে রাজাকারে নামটি সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আশা করব সরকার যেন এই কলেজটির নাম পরিবর্তন করে আমাদের অভিশাপ ও দায় মুক্ত করেন। এটা আমাদের এলাকার দাবি, এটা গাইবান্ধাবাসীর দাবি। জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান জানান, একজন চিহ্নিত রাজাকারে নামে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে একটি কলেজ আছে এই খবরটি আমার জানা ছিল না। আমি অতি দ্রুত কলেজের গভর্নিং বডির সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে নামটি পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
Link copied!