বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৭৯৮০ টাকায় সারা বছর মূল্যছাড় ‘আলেশা কার্ডে’

প্রকাশিত: ০৮:১৯ এএম, আগস্ট ৫, ২০২১

৭৯৮০ টাকায় সারা বছর মূল্যছাড় ‘আলেশা কার্ডে’

সারা বছর ডিসকাউন্টে বা মূল্যছাড়ে পণ্য ও সেবা বিক্রির নতুন ধারণা নিয়ে ‘আলেশা কার্ড’ চালু করেছে আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেড। এই প্রিভিলেজড কার্ডটি দেখতে ব্যাংকের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মতোই। ডিজিটাল কমার্সের পণ্যের মতো এই কার্ডটি কিনতেও প্রতিষ্ঠানটির একটি ওয়েব লিংকে যেতে হয়। সেখানে ৭ হাজার ৯৮০ টাকা পরিশোধ করে কার্ডটি পাবেন গ্রাহকরা; যা দিয়ে আলেশা হোল্ডিংসের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট বা আলেশা রাইডে ৫-১০ শতাংশ হারে মূল্যছাড় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯০টি ক্যাটাগরিতে ৩ হাজারেরও বেশি সরবরাহকারীর কাছ থেকে এই কার্ডধারীরা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ছাড়ের এই অর্থ আলেশা নাকি সংশ্লিষ্ট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বহন করবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি ‘আলেশা কার্ড’। তাছাড়া কোন কোন প্রতিষ্ঠানের পণ্য কেনায় এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে তাও প্রকাশ করা হয়নি। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির কলসেন্টারে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের প্রতিনিধি জানান, ‘সার্ভার ডাউন’ থাকার কারণে এখন বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয়। এদিকে গত রবিবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘আলেশা কার্ডের’ বিজ্ঞাপন প্রচারের পর থেকে এ নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটা কোনো প্রলোভন দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কিনা বা এ ধরনের কোনো ঝুঁকি আছে কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গত ৪ জুলাই জারি করা ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার ৩.১.৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সব ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তৈরি (ইস্যু), ব্যবহার বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। ডিজিটাল কমার্সের এ নির্দেশনা পরিপালন করে আলেশা কার্ড চালু করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের জনসংযোগ প্রধান কাজী তানজীলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আলেশা কার্ড আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। দেশে প্রিভিলেজড কার্ড চালুর জন্য যে ধরনের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে তা নিয়েই আলেশা কার্ড চালু করা হয়েছে।’ তবে এ কার্ডটি অন্যান্য প্রিভিলেজড কার্ডের মতো নয় বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ করে কার্ড নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি এই কার্ডের কোনো ব্যবহার করার সুযোগ না পান তাহলে বছর শেষে এ ৮ হাজার টাকার কোনো বেনিফিট কিন্তু মিলবে না। তাছাড়া কার্ড দিয়ে আলেশা ছাড়া অন্যান্য পণ্য সরবরাহকারী বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ছাড় পাওয়া গেলে এই ছাড়ের টাকা ভর্তুকি দিয়ে আলেশা কার্ড কীভাবে লাভবান হবে তা জানার প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আলেশা কার্ডের বিজ্ঞাপনটি আমাদেরও নজরে এসেছে। কার্ডটি ব্যাংকের কার্ডের মতোই দেখতে। এই কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আলেশা কার্ড কোনো অনুমোদন নেয়নি। এক্ষেত্রে এই কার্ডের ব্যবহার প্রচলিত কোনো নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখব।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের পণ্য ডিসকাউন্টে বিক্রি করতে প্রিভিলেজড কার্ড চালু করেছে। আলেশার ক্ষেত্রেও কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। কিন্তু এই কার্ডের গ্রাহকরা তো অন্য প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায়ও ছাড় পাবেন। এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাড়কৃত অর্থ আলেশা কোথা থেকে জোগান দেবে সেটা আলেশার বিষয়।’ অন্য প্রতিষ্ঠানের ছাড়ের টাকা জোগান দিতে না পারলে আলেশা কার্ডের দেনা বাড়তে থাকবে, এক্ষেত্রে কীভাবে তারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে এবং এই কার্ড থেকে এককালীন আয় ছাড়া কোনো নিয়মিত আয় না থাকলে প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে পরিচালিত হবে তা খতিয়ে দেখার দরকার রয়েছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এভাবে লোকসান দিতে চায় সেটা তাদের বিষয়। আমরা দেখব এখানে গ্রাহকদের ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা।’ আলেশা কার্ড কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই কার্ডধারীরা আলেশা মার্টের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য কিনতে পারবেন ১০ শতাংশ ছাড়ে। শিগগিরই চালু হতে যাওয়া আলেশা হোল্ডিংসের নতুন সেবা ‘আলেশা রাইডের’ প্রতি রাইডে ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে। এছাড়া আলেশা হোল্ডিংসের আসন্ন আরেকটি উদ্যোগ ‘আলেশা ফার্মেসি’ থেকেও ৫ শতাংশ ছাড়ে কেনাকাটা করা যাবে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আলেশা যদি ১ লাখ গ্রাহকের কাছে এই কার্ড বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় তখন এর দায় কে নেবে। এখানে তো একটি আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হচ্ছে। এটাকে রেগুলেট না করা হলে গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বড় বড় বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আড়ং তাদের ক্রেতাদের প্রিভিলেজড কার্ড দিয়ে থাকে। এ কার্ড একদম ফ্রি। একসঙ্গে ১০ হাজার টাকার কেনাকাটা করলেই ক্রেতাদের এই কার্ড অফার করে প্রতিষ্ঠানটি। কার্ডধারীরা পরবর্তী প্রতিটি কেনাকাটার সময় এ কার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে রিওয়ার্ড পয়েন্ট পেয়ে থাকেন। এই রিওয়ার্ড পয়েন্ট জমা হতে হতে ৫০০ পয়েন্টের বেশি হলে তা দিয়ে অন্য কোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে টাকার মতোই একটি ক্যাশ ভ্যালু পাওয়া যায়। এছাড়া সারা বছর কোনো ক্যাম্পেইন করা হলে প্রিভিলেজড কার্ডধারী ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের ছাড় বা উপহার অফার করে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রোসারি পণ্য বিক্রেতাদের মধ্যে এসিআই লজিস্টিকের সুপারশপ স্বপ্ন এতদিন ক্রেতাদের ‘মেম্বারশিপ কার্ড’ দিলেও এখন আর দিচ্ছে না। তবে গ্রাহকের মোবাইল ফোন নম্বর সংরক্ষণের শর্তে আগের সেই মেম্বারশিপ কার্ডের মতো রিওয়ার্ড পয়েন্ট চালু রেখেছে তারা। যেকোনো গ্রাহক স্বপ্নের আউটলেটে গিয়ে যেকোনো অঙ্কের কেনাকাটার পর নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়ায় মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস দিয়ে স্বপ্নের মেম্বার হতে পারছেন। এরপর থেকে প্রতি ১০০ টাকার কেনাকাটায় ওই গ্রাহকের নামে ১ পয়েন্ট যোগ হতে থাকে। মোট এক হাজার পয়েন্ট হলে পরবর্তী কেনাকাটায় ৭০ টাকা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। এছাড়া জুতা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লোটো তাদের গ্রাহকদের জন্য ‘প্রিভিলেজড ক্লাব কার্ড’ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে। এ কার্ডটি তাদের ওয়েবসাইট থেকে মাত্র ২৫ টাকায় কেনা যায়। এ কার্ডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল ও উড়োজাহাজের টিকিট কেনায় বিভিন্ন হারে ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু আলেশা কার্ড কিনতে প্রথমেই এককালীন ৭ হাজার ৮৯০ টাকা দিতে হবে। কার্ডের মেয়াদ এক বছর। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য কেনাকাটায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় মিলবে। তবে এই এক বছরে কোনো কেনাকাটা বা বিল পরিশোধে কার্ডটি ব্যবহার না করলে এই কার্ডের ৭ হাজার ৮৯০ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। এটাকে বার্ষিক চার্জ বলে উল্লেখ করছে ‘আলেশা কার্ড’। ঠিক যেমনটা ব্যাংকের এটিএম কার্ডের জন্য নেওয়া হয়। আলেশা কার্ড প্রতি বছর ৯৮০ টাকা দিয়ে নবায়ন করতে হবে। এ ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি’র মাধ্যমে আলেশা কার্ডের গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ছাড় পেলেও এই ছাড়ের পরিমাণে কোনো সীমা থাকছে না বলে জানিয়েছেন আলেশার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আলেশার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি ৫০ শতাংশ ছাড় মেলে তাহলে ১ লাখ টাকার পণ্য পাওয়া যাবে ৫০ হাজার টাকায়। এভাবে যত কেনাকাটাই হোক বা বিল পরিশোধ হোক না কেন, আলেশার গ্রাহকরা তাতে শতকরা হারে যত টাকা ছাড় হয় তা পাবেন।
Link copied!